×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৫-০৮
  • ৬৯ বার পঠিত
নতুন উৎস থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য আরো তহবিল সংগ্রহে আইওএমের প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যেহেতু (বাংলাদেশে) মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য তহবিল কমে গেছে, আইওএমের উচিত এই উদ্দেশ্যে আরো তহবিল সংগ্রহে নতুন অংশীদার খুঁজে বের করা।’

গতকাল মঙ্গলবার সকালে গণভবনে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক অ্যামি পোপ সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর বত্তৃদ্ধতা লেখক মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করতে আইওএমকে সহায়তা করার জন্যও বলেছেন।

কারণ এখানে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পরিষেবা, কর্মসংস্থানসহ সব সুযোগ-সুবিধা সংবলিত আবাসনব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরে এ পর্যন্ত ৩০ থেকে ৩৫ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে আইওএম মহাপরিচালক প্রধানমন্ত্রীর কাছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের নিরাপদ অবস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্তসংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করেছে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা বিভিন্ন দল ও উপগোষ্ঠীতে বিভক্ত এবং তারা অভ্যন্তরীণ কোন্দলে লিপ্ত রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গারা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় স্থানীয় লোকজন এখন তাদের এলাকায় সংখ্যালঘু হয়ে গেছে। অ্যামি পোপ স্বাগতিক দেশের চাহিদা অনুযায়ী তাদের দক্ষতা বাড়াতে ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর অভিবাসীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে জোর দেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার অন্য দেশের কাউকে বোঝার জন্য পেশা ও ভাষার ওপর যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, দক্ষ জনসংখ্যা তৈরিতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তাঁরা সারা দেশে ১১২টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অভিবাসন একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। কিন্তু দারিদ্র্য কমলে অভিবাসনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। সরকারপ্রধান বলেন, তাঁর সরকার অভিবাসীদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে, যার মধ্যে কোনো জামানত ছাড়াই ঋণ দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, আয়োজক ও উৎস দেশ উভয়েরই অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে, যেহেতু তারা উভয় দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির জন্য কাজ করছে।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অভ্যন্তরীণভাবেও মানুষ স্থানান্তরিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি এবং নদীভাঙন, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে স্থানান্তরিত হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার কক্সবাজারের খুরুশকুলে চার হাজারের বেশি জলবায়ু উদ্বাস্তুকে বাড়ি দিয়েছে। তিনি বলেন, তাঁর সরকার জলবায়ুসহিষ্ণু বাড়ি ও বন্যাপ্রবণ এলাকার জন্য ভাসমান বাড়ি নির্মাণ করছে এবং গৃহহীনদের মধ্যে বিনা মূল্যে বাড়ি দিয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিন উপস্থিত ছিলেন।

উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার আগে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিবেচনা করুন

উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলে দেশের অর্থনীতি কতটা চাঙ্গা হবে এবং স্থানীয়রা কতটা উপকৃত হবে তা বিবেচনায় নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথমে ভাবতে হবে ফলাফল কী হবে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে একটি প্রকল্প নেওয়ার পর জনগণ কতটা উপকৃত হবে। আমাদের দেশের উন্নয়ন এমনভাবে করতে হবে যাতে আমাদের সক্ষমতা বাড়বে এবং অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে।’

গতকাল গণভবনে স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১ বিনির্মাণে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কার্যক্রমের রূপরেখাসংক্রান্ত উপস্থাপনা অবলোকনকালে তিনি এ কথা বলেন। রূপরেখা প্রত্যক্ষ করার পর প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এড়াতে ও প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অগ্রাধিকার দিতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেসসচিব কে এম সাখাওয়াত মুন এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে দেশের কতটা উন্নয়ন হবে এবং মানুষ কতটা উপকৃত হবে তা আপনাদের বিবেচনা করতে হবে।’ তিনি বলেন, দ্রুত কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে বলে দেশবাসী এর সুফল পাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁরা একটি লক্ষ্য নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। তিনি আরো বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর তাঁর সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার ছিল জনগণের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, ‘গবেষণার মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে আমরা সফলভাবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি।’

তিনি বলেন, তাঁর সরকার রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করেছিল এবং উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি লাভের মধ্য দিয়ে সফলভাবে তা বাস্তবায়ন করেছে। তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশে রূপান্তর করা। আমরা সেই রূপকল্প বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি।’ এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

মহামারি মোকাবেলায় প্রস্তুতি ও সাড়াদানে উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্ব অপরিহার্য

বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা স্থাপন, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা পদক্ষেপে আস্থা তৈরি এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে জীবন বাঁচাতে মহামারি মোকাবেলায় প্রস্তুতি ও সাড়া প্রদানের জন্য উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘মহামারি প্রস্তুতি এবং প্রতিক্রিয়া সম্পর্কিত সংস্কার পরিচালনার ক্ষেত্রে উচ্চস্তরের রাজনৈতিক নেতৃত্ব অপরিহার্য। এটি বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার জন্য আওয়াজ তোলে, জনস্বাস্থ্যের হস্তক্ষেপে আস্থা জাগিয়ে তোলে এবং শেষ পর্যন্ত জীবন বাঁচায়।’

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং মহামারি প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়ার জন্য স্বাধীন প্যানেলের কো-চেয়ার হেলেন ক্লার্কের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে এ বক্তব্য উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যৎ মহামারিজনিত জটিলতা মোকাবেলা করার সময় আরো স্থিতিস্থাপক ও প্রস্তুত বিশ্ব গঠনে আমাদের একটি শক্তিশালী ও সিদ্ধান্তমূলক নেতৃত্ব অপরিহার্য হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘অত্যন্ত খণ্ডিত বিশ্ব স্বাস্থ্য শাসনব্যবস্থাকে মহামারি প্রতিরোধ ও সাড়াদানের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জ্ঞান, প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সক্ষমতা জোরদারে আমাদের অবশ্যই সম্মিলিত রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat