×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৫-০৬
  • ৬৭ বার পঠিত
চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকার কৃষক মো. আলী আসগর এবার লবণ চাষ করেছেন পাঁচ একর জমিতে। তিনি গত এক সপ্তাহে লবণ উৎপাদন করেছেন প্রায় এক টন। কিন্তু এসব লবণ মাঠে গর্ত করে সংরক্ষণ করার পরও বাকি লবণ নিয়ে চিন্তিত তিনি। কারণ এসব অপরিশোধিত লবণ বিক্রি করে প্রতি কেজি পাচ্ছেন সর্বোচ্চ আট টাকা।

তাই তিনি বাড়ির আঙ্গিনায় মজুদ করে তার ওপর পলিথিন বিছিয়ে সংরক্ষণ করছেন। তাঁর মতো অনেক চাষি একই পদ্ধতিতে লবণ সংরক্ষণ করে রাখছেন।
মো. আলী আসগর কালের কণ্ঠকে বলেন, বাঁশখালীতে বেশির ভাগই বর্গাচাষী। আজকের উৎপাদিত লবণ সপ্তাহের মধ্যে বিক্রি করতে না পারলে না খেয়ে থাকবেন অনেকেই।

তাঁদের মজুদ করার সুযোগ নেই। এখন অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে লবণের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। চাষিরা ভালো দাম পাওয়া নিয়ে চিন্তিত। চলতি মৌসুমে দেশে লবণ চাষ শুরু হয় গত বছরের ১৫ নভেম্বর থেকে।

এ মৌসুম শেষ হবে আগামী ১৫ মে। এর মধ্যে বৃষ্টি হলে মৌসুমের আগেই শেষ হবে লবণ উৎপাদন। দেশে সবচেয়ে বেশি লবণ উৎপাদন হয় বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী এলাকা কক্সাজারের টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, কক্সবাজারের ঈদগাঁও, পেকুয়া, মহেশখালী, চকরিয়া, কুতুবদিয়া ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকায়। এসব এলাকায় ৬৮ হাজার ৩৫৭ একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। এবার লবণ চাষির সংখ্যা ৪০ হাজার ৬৯৫ জন, যা গত বছর ছিল ৩৯ হাজার ৪৬৭ জন।

চাষির সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লবণের উৎপাদনও বাড়ছে। গত ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের ৬৩ বছরের ইতিহাসে রেকর্ড ২২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৫৮ টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২৫ লাখ ৪৫ হাজার টন। মৌসুম শেষ হতে আরো ১৫ দিন বাকি। এ কয় দিনে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমপক্ষে আরো পাঁচ-ছয় লাখ টন লবণ উৎপাদন হতে পারে।

কক্সবাজার ও বাঁশখালী এলাকার লবণ চাষি ও লবণ মিল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের আগেও অপরিশোধিত লবণের মণ (৪০ কেজি) ছিল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। কেজি হিসেবে ১১.২৫ থেকে ১২.৫০ টাকা। যত দাবদাহ বাড়ছে লবণের উৎপাদনও বাড়ছে। কিন্তু বিপরীতে কমছে লবণের দাম। বর্তমানে লবণের মণ ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। ওই হিসাবে লবণের কেজি পড়ছে সাড়ে সাত টাকা থেকে আট টাকা। মাস ব্যবধানে কমেছে ৩.৭৫ টাকা থেকে সাড়ে চার টাকা পর্যন্ত।

কক্সবাজারের মহেশখালী উত্তর নরবিলা এলাকার লবণ চাষি আতিক উল্লাহ বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণের বেশি লবণ উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু দাম পাচ্ছি না। যাঁদের লবণ বিক্রি করে সংসার চালাতে হয়, তাঁরা পড়ছেন বিপদে। আগে যেখানে এক মণ লবণ বিক্রি করলে ৫০০ টাকা পেতাম, এখন সবচেয়ে ভালোটা বিক্রি করছি ৩০০ টাকা। দাম না বাড়লে চাষিরা শ্রমিক ও জমির খরচও ওঠাতে পারবেন না।’

কক্সবাজারে লবণ চাষি সমিতির সভাপতি মকসুদ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টানা তাপপ্রবাহে লবণের বাম্পার উৎপাদন হচ্ছে। আগে যেখানে পরিপক্ব লবণ উৎপাদন করতে সময় লাগত সাত থেকে ১০ দিন। এখন তীব্র দাবদাহের কারণে এক দিন সময় লাগছে। অনেক সময় ১২ ঘণ্টায়ও পুষ্ট লবণ মাঠ থেকে ওঠানো সম্ভব হচ্ছে। ফলে অন্যান্য সময়ের তুলনায় এখন দ্বিগুণের বেশি লবণ উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু অতিরিক্ত লবণ উৎপাদন হলেও দাম পাওয়া নিয়ে আমাদের চিন্তা দিন দিন বাড়ছে। এখন প্রতি মণ লবণ ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মৌসুমের শুরুতেই সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।’

কনফিডেন্স লবণের বিপণন বিভাগের প্রধান নওশাদ ইমতিয়াজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশে অপরিশোধিত লবণের দাম প্রতি কেজি আট টাকা থাকলে চাষিদের লোকসান হবে না। তবে দাম এর নিচে গেলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমরা আশা করছি, লবণের দাম এর নিচে যাবে না।’ তিনি আরো বলেন, এখন আয়োডিন লবণ উৎপাদনে খরচ, গ্যাসের দ্বিগুণ দাম ও শ্রমিকদের খরচ বেড়েছে। ফলে লবণের বাম্পার ফলন হলেও ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যটির দাম কমবে না।

কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবার লবণ উৎপাদনে অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। বর্তমানে কক্সবাজার বিসিকের লবণশিল্পের উন্নয়ন কর্মসূচি কার্যালয়ের আওতায় ১২টি লবণ কেন্দ্রের মাধ্যমে জেলার সব উপজেলায় ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে লবণ চাষের জন্য লবণ চাষিদের প্রশিক্ষণ, ঋণ প্রদান, প্রযুক্তি সম্প্রসারণসহ সার্বিক সহায়তার কারণে লবণ উৎপাদন বেশি হচ্ছে।

আমরা ২০১৮ সাল থেকে লবণের ন্যায্য মূল্যের জন্য কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চোরাই পথে লবণ আসা বন্ধ হয়েছে। আর উৎপাদন মৌসুমে চাষিরা যাতে লবণের দাম পান সেদিকও তিনি দেখছেন। আশা করছি, লবণের দাম বাড়বে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat