সর্বকালের সেরা গানগুলো কী কী? এই প্রশ্নের উত্তর নিশ্চিতভাবেই একেকজন একেক রকম দেবেন। কারণ এটি ব্যক্তিগত রুচি, যুগ এবং ট্র্যাডিশনাল, আধুনিক কিংবা চলচ্চিত্রের গানসহ বাংলা সঙ্গীতের বিভিন্ন ঘরানার উপর নির্ভর করে। সর্বকালের সেরা ১০টি বাংলা গান কোনগুলো- চ্যাটজিপিটিকে জিজ্ঞাসা করলে গানের যে তালিকা দেয়া হয় এরমধ্যে রয়েছে ক্লাসিক এবং কনটেম্পোরারি গান যেগুলো প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এবং বাঙালি সংস্কৃতিতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছে-
চ্যাটজিপিটির সার্চে সর্বকালের সেরা ১০টি গান
ওপেনএআই'র আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স চ্যাটজিপিটিতে সেরা বাংলা গান সম্পর্কে একাধিকবার জিজ্ঞাসা করা হলে কিছুটা ভিন্ন ভিন্ন জবাব আসে। তবে এগুলোর মধ্যে কিছু গান কমন পড়ে যায়। সেখান থেকে দশটি গানের কথা উল্লেখ করা হল-
১. কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই- মান্না দে
কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই
কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী বিকেলগুলো সেই, আজ আর নেই।
স্মৃতিচারণমূলক গানটি প্রকাশিত হয় ১৯৮৩ সালে। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা ও সুপর্ণকান্ত ঘোষের সুরে এই গানে কন্ঠ দেন মান্না দে। এটিকে মান্না দের সেরা গান হিসেবেও অনেকে বিবেচনা করেন।
২. আমি চিনি গো চিনি তোমারে- রবীন্দ্রসঙ্গীত।
আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী
আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী
তুমি থাক সিন্ধুপারে
তুমি থাক সিন্ধুপারে ওগো বিদেশিনী
ওগো বিদেশিনী
রবী ঠাকুরের বিশাল সৃষ্টিমালার মধ্যে এটি এক অনবদ্য সৃষ্টি। ক্ল্যাসিক ঘরানার গানের অসাধারণ মেলোডি এবং কাব্যিক সংলাপ শ্রোতার হৃদয় কাড়ে।
৩. ভালোবেসে সখী- রবীন্দ্রসঙ্গীত।
ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো- তোমার
মনের মন্দিরে।
এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আরেকটি জনপ্রিয় গান। রোমান্টিক গানটির প্রাণবন্ত সুর এবং কথা যেনো সব যুগ এবং জেনারেশনের জন্য মানানসই।
৪. জীবনে কি পাবো না- মান্না দে।
জীবনে কী পাবো না
ভুলেছি সে ভাবনা
সামনে যা দেখি, জানি না সে কি
আসল কি নকল সোনা
এটি মান্না দের গাওয়া জনপ্রিয় গানগুলোর একটি। সুধীন দাশগুপ্তের কথা ও সুরের গানটি ‘তিন ভুবনের পারে’ সিনেমায় ব্যবহার হয়েছিল।
৫. তুমি রবে নীরবে- রবীন্দ্রসঙ্গীত।
তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম
তুমি রবে নীরবে
নিবিড় নিভৃত পূর্ণিমা নিশীথিনী-সম
তুমি রবে নীরবে
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া গানটি জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে সময় বা জেনারেশনের গণ্ডিতে আটকে থাকেনি। আজও রুচিশীল সংগীতপ্রেমীরা বেখায়েলেই গুনগুনিয়ে গেয়ে ওঠেন রোমান্টিক এই গান।
৬. এই পথ যদি না শেষ হয়- হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এবং সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
এই পথ যদি না শেষ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলোতো?
যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলোতো?
তুমিই বলো
এই পথ যদি না শেষ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলোতো?
‘সপ্তপদী’ সিনেমার জনপ্রিয় এই গান আজও একইরকম রোমান্টিক অনুভূতি জাগায় শ্রোতার মনে। এর মেলোডি বর্তমান জেনারেশনকেও টানে। গৌরিপ্রসন্ব মজুমদারের লেখা গানটির মিউজিক ডিরেক্টর হেমন্ত মুখোপাধ্যায় নিজেই।
৭. মাঝে মাঝে তব দেখা পাই- রবীন্দ্রসঙ্গীত।
কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে
কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে
তোমারে দেখিতে দেয় না
মোহমেঘে তোমারে দেখিতে দেয় না
মোহমেঘে তোমারে
অন্ধ করে রাখে
তোমারে দেখিতে দেয় না
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই
চিরদিন কেন পাই না
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই
চিরদিন কেন পাই না
গভীর আধ্যাত্মিক এবং দার্শনিক ভাবধারার গান এটি। এ যুগে এসেও গানটি বিভিন্ন স্টাইলে গাওয়া হয়।
৮. আমি বাংলায় গান গাই- প্রতুল মুখোপাধ্যায়
আমি বাংলায় গান গাই,আমি বাংলার গান গাই
আমি আমার আমিকে চিরদিন-এই বাংলায় খুঁজে পাই
আমি বাংলায় দেখি স্বপ্ন, আমি বাংলায় বাঁধি সুর
আমি এই বাংলার মায়া ভরা পথে, হেঁটেছি এতটা দূর
বাংলা আমার জীবনানন্দ, বাংলা প্রাণের সুখ
আমি একবার দেখি, বার বার দেখি, দেখি বাংলার মুখ॥
গানটি বাংলা ভাষার প্রতি বাঙালি জাতির ভালোবাসার একটি বিখ্যাত গান। এটিরে কথা লিখেছেন গীতিকার ও কবি প্রতুল মুখোপাধ্যায়। গানটির সুরকার ও মূল গায়কও তিনি। ২০০৬ সালের মার্চ মাসে বিবিসি বাংলার এক শ্রোতা জরিপ অনুসারে গানটি সর্বকালের সর্বাধিক জনপ্রিয় বিশটি বাংলা গানের একটি হিসেবে মনোনীত হয়।
৯. একলা চলো রে- রবীন্দ্রসঙ্গীত।
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে।
একলা চলো, একলা চলো, একলা চলো, একলা চলো রে॥
যদি কেউ কথা না কয়, ওরে ওরে ও অভাগা,
যদি সবাই থাকে মুখ ফিরায়ে সবাই করে ভয়-
তবে পরান খুলে
ও তুই মুখ ফুটে তোর মনের কথা একলা বলো রে॥
দৃঢ়সংকল্প এবং আত্মনির্ভরতার বার্তা রয়েছে এই গানে; যা শাহরুখ খানের মতো এই যুগের বিখ্যাত তারকারাও কভার করেছেন।
উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, ‘একলা চলো রে’ লেখা হয়েছিল ভারতের গিরিডিহ শহরে যা বর্তমানে ঝাড়খন্ড নামে পরিচিত। এটি ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের স্বদেশী সময়কালে রচিত ২২টি প্রতিবাদী গানের একটি। ‘আমার সোনার বাংলা’সহ এই গানটি ১৯০৫ সালে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিতে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান গান হয়ে ওঠে।
১০. মনে পড়ে রুবি রায়- আর ডি বর্মন
মনে পড়ে, রুবি রায়, কবিতায় তোমাকে
একদিন কত করে ডেকেছি
আজ হায়, রুবি রায়, ডেকে বলো আমাকে
"তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি?"
মনে পড়ে, রুবি রায়, কবিতায় তোমাকে
একদিন কত করে ডেকেছি
আজ হায়, রুবি রায়, ডেকে বলো আমাকে
"তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি?"
এ জাতীয় আরো খবর..