×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৮-২২
  • ৮০ বার পঠিত
দৈনিক মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার পর চা শ্রমিক নেতাদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা মানেননি সাধারণ চা শ্রমিকরা। তাঁরা এটিকে ‘প্রহসনমূলক চুক্তি’ আখ্যা দিয়ে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে গতকাল রবিবার সড়কে নেমে আসেন। এর মধ্যে হবিগঞ্জে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে টানা চার ঘণ্টা পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন ২৩টি চা-বাগানের শ্রমিকরা। অন্যদিকে সিলেট বিমানবন্দর সড়ক প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন সিলেটের সাতটি চা-বাগানের শ্রমিকরা।

ফেঞ্চুগঞ্জের চা শ্রমিকরা প্রায় এক ঘণ্টা ফেঞ্চুগঞ্জ-ভাটেরা সড়ক অবরোধ করেন।

চা মালিকদের সংগঠন চা সংসদের পক্ষ থেকে ১৪৫ টাকা মজুরির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে হবিগঞ্জের ২৩ চা-বাগানের শ্রমিকরা গতকাল রবিবার সকাল ১১টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন।

গতকাল জগদীশপুরসহ কয়েকটি বাগানের শ্রমিকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে রাস্তা অবরোধ করেন। এই অবরোধ চলে চার ঘণ্টা। গতকাল সকাল ১১টা থেকে লস্করপুর ভ্যালির প্রায় পাঁচ হাজার নারী-পুরুষ চা শ্রমিক বিভিন্ন যানবাহনে জগদীশপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে এসে প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন নিয়ে মহাসড়কে অবস্থান নেন। অবরোধ চলাকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শত শত যাত্রীবাহী বাসসহ অন্য যানবাহন আটকা পড়ে। ব্যাপক গরমের মধ্যে সড়কে আটকা পড়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীসাধারণ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করলেও বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা তা মানেননি। মহাসড়কে অবস্থান করে তাঁরা দাবি আদায়ে অন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন।

মহাসড়কে সমাবেশে শ্রমিক নেতারা বলেন, গত ১৩ আগস্ট থেকে দেশের ১৬৮টি চা-বাগানের শ্রমিকরা দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতি করে আসছেন। এর মধ্যে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের উদ্যোগে শ্রীমঙ্গল শ্রম দপ্তরের কার্যালয়ে শ্রমিক নেতাদের নিয়ে সরকারপক্ষের বৈঠক হয়; কিন্তু ওই বৈঠকে চা-বাগান মালিকপক্ষের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। এরপর ঢাকায় শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে শ্রমিক প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ চা সংসদের প্রতিনিধিদের নিয়ে দ্বিতীয় বৈঠকেও কোনো সুরাহা হয়নি। আগামী বুধবার ২৩ আগস্ট ঢাকায় শ্রমমন্ত্রী বেগম মন্ু্নজান সুফিয়ানের উপস্থিতে সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পান বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলের বৈঠকে শ্রমিকদের মজুরি ১২০ থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার ঘোষণা একটি প্রহসন। আমাদের জিম্মি করে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদে লাগাতার কর্মবিরতির অষ্টম দিনে হবিগঞ্জের ২৩টি চা-বাগানের কয়েক হাজার শ্রমিক মহাসড়কে অবস্থান নেন। ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে আমরা অবরোধ প্রত্যাহার করেছি। তবে প্রতিদিন সব চা-বাগানে কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে। ’

সিলেটে গতকাল সকাল থেকে রাজপথে নামতে শুরু করেন চা শ্রমিকরা। সিলেটের সাতটি চা-বাগানে পৃথকভাবে জড়ো হয়ে তাঁরা মিছিল করে সিলেট বিমানবন্দর সড়ক প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। আন্দোলনরতদের চাপের মুখে চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা অবরোধস্থলে হাজির হয়ে দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। একই দাবিতে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায়ও এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন চা শ্রমিকরা।

গতকাল সকালে বিভিন্ন বাগান থেকে শত শত শ্রমিক বেরিয়ে আসেন। সকাল ১১টার দিকে তাঁরা মালনিছড়া দুর্গামন্দিরের সামনে সমাবেশ করেন। পরে নগরে মিছিল বের করেন। মিছিল নগরের চৌকিদেখি এলাকা ঘুরে এসে লক্কাতুরা চা-বাগানের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এরপর দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনরত চা শ্রমিকরা লক্কাতুরা এলাকায় ওসমানী বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করেন।

দুই ঘণ্টার অবরোধ চলাকালে বিভিন্ন চা-বাগানের শ্রমিক নেতারা বক্তব্য দেন।

দুই ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নিলেও আন্দোলনকারীরা লক্কাতুরা চা-বাগানে অবস্থান নেন। সমাবেশ শেষে চা শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক হৃদেশ মোদী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের চলমান আন্দোলনের যে বর্তমান কমিটি আছে, সে কমিটি নিয়েও আমাদের অনেক প্রশ্ন আছে। তাই আমরা পরিষ্কার বলেছি, আমরা কমিটি বুঝি না, আমরা পরিষ্কার ঘোষণা চাই। ’

গতকাল সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছেন চা শ্রমিকরা। দুপুর ১২টার দিকে মোমিনছড়া চা-বাগান পূজামণ্ডপের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন তাঁরা।

মোমিনছড়া চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি লিটন কুমার মৃধার সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন চা শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা আবু জাফর, পঞ্চায়েত কমিটির নেতা হৃদয় ছত্রী, মাসুক আহমদ, মুক্তা আচার্য প্রমুখ।

গতকাল মৌলভীবাজার জেলায় পৃথক এলাকায় চা শ্রমিকরা দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, জেলার সদর উপজেলার মৌলভী চা-বাগান, কমলগঞ্জ উপজেলার চম্পারায় চা-বাগান, মৃত্তিঙ্গা চা-বাগান, শমসেরনগর চা-বাগান ও আলীনগর চা-বাগান এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন চা শ্রমিকরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat