পাকিস্তানের রাজনীতিতে বরাবরই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা থাকে সেনাবাহিনীর। কান কথা আছে, ‘ঐশ্বরিক ক্ষমতাপ্রাপ্ত’ বিরাট এই সশস্ত্র বাহিনীই পাকিস্তানের আরেক ‘অলিখিত সরকার’। রাজনৈতিক সমালোচকরাও প্রায়ই হাসিঠাট্টার ছলেই বলেন-‘প্রতিটি দেশের একটি সেনাবাহিনী থাকে। শুধু সেনাবাহিনীর একটি দেশ আছে সেটি হলো পাকিস্তান।’ সে হিসাবে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান নিয়োগ, মেয়াদ বৃদ্ধি, বিদায়, রাজনৈতিক দর্শন-এই বিষয়গুলো ফুটপাত থেকে অন্দরমহলের হেঁসেল-সবখানেই থাকে মুখে মুখে।
সম্প্রতি বিশ্বনন্দিত ক্রিকেট তারকা ইমরান খানের সরকারের পতনের পর দেশটির রাজনীতিতে নতুন করে সেনাবাহিনীর ভূমিকা আলোচনায় আসে। তার বিদায়ের পেছনের শক্তি হিসাবে আঙুল উঠেছিল দেশটির সেনাবাহিনীর দিকে। আগামী নভেম্বরেই শেষ হচ্ছে বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়ার মেয়াদ। ২০১৬ সালে তিন বছরের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন তিনি। কিন্তু রাজনৈতিক নানা নাটকীয়তার মধ্যে ২০১৯ সালে আরও তিন বছর বাড়ানো হয় তার মেয়াদ। সে হিসাবে নভেম্বরে অবসরে যাওয়ার কথা বাজোয়ার। আর এই নিয়েই শুরু হয়েছে নতুন তোড়জোড়। আবারও কি মেয়াদ বাড়াবেন বাজওয়া নাকি এবার নতুন সেনানায়ক আনবেন শাহবাজ শরিফের সরকার। ‘বাজওয়ার হাত ধরে ক্ষমতায়’ বসা শাহবাজের নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগকেই সবচেয়ে কঠিন কাজ হিসাবে মনে করা হচ্ছে। আরেক মেয়াদে নিয়োগ দেওয়া না হলে শীর্ষ ছয় লেফটেন্যান্ট জেনারেল থেকে একজনকে দায়িত্ব দিতে হবে।
পাকিস্তানের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৪৩(৩) অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে সামরিক বাহিনীর প্রধানদের নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট। ২০২০ সালে পার্লামেন্টে পাশ হওয়া এক আইন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী চাইলে তার বিবেচনায় সামরিক বাহিনীর প্রধানদের মেয়াদ বাড়াতে পারেন। তবে আইনে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, বয়স ৬৪ বছর হলে সামরিক বাহিনীর প্রধানদের অবশ্যই অবসরে যেতে হবে। সে হিসাবে বর্তমান সেনাপ্রধানের বয়স যেহেতু ৬১ বছর, মেয়াদ বাড়ালে তিনিও আরও এক টার্ম থাকতে পারেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের এক মন্ত্রী জানান, নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগে আগস্টের শেষ নাগাদ নেপথ্যের আলোচনা শুরু করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। নিয়ম অনুযায়ী, ব্যক্তিগত তথ্যসহ চার থেকে পাঁচজন শীর্ষ লেফটেন্যান্ট জেনারেলের নাম প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে থাকে সামরিক বাহিনীর জেনারেল হেডকোয়ার্টার্স (জিএইচকিউ)। এই পদের জন্য উপযুক্ত কর্মকর্তা বেছে নিতে পরে তাদের নাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেয় মন্ত্রণালয়। তাহলে কে হতে যাচ্ছেন বাজওয়ার উত্তরসূরি? পাকিস্তানের বহুল জনপ্রিয় ইংরেজি পত্রিকা দ্য ডনের বিশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সম্ভাব্য কয়েকজনের নাম।
লে. জেনারেল আজহার আব্বাস : ভারত বিষয়ে সবচেয়ে অভিজ্ঞ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজহার আব্বাস। বর্তমানে তিনি চিফ অব জেনারেল স্টাফের দায়িত্বে আছেন। তিনি দক্ষতার সঙ্গে জিএইচকিউতে সেনাবাহিনীর আভিযানিক ও গোয়েন্দা অধিদপ্তরের সরাসরি দেখভাল করছেন। আজহার আব্বাসকে বর্তমান সেনাপ্রধানের আস্থাভাজন হিসাবেই বিবেচনা করা হয়।
লে. জেনারেল আসিম মুনির : সেনাবাহিনীর নতুন প্রধান হওয়ার দৌড়ে আসিম মুনির সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে দুই তারকা জেনারেল হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হলেও দুই মাস পর তিনি দায়িত্ব নেন। এ হিসাবে তার মেয়াদ শেষ হবে নভেম্বরে, যখন বর্তমান সেনাপ্রধান অবসরে যাবেন। নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগের কয়েকদিন আগেই দুজনকে চার তারকা জেনারেল হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হবে।
লে. জেনারেল ফাইজ হামিদ : পাকিস্তানে সেনাপ্রধান হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে আলোচিত প্রার্থী লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফাইজ হামিদ। বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়া ও ফাইজের একে অপরের সম্পর্কে ভালো জানাশোনা আছে। কারণ তারা এক সময় একসঙ্গে কাজ করেছেন। তিন তারকা জেনারেল হিসাবে পদোন্নতি পাওয়ার পর প্রথম ফাইজকে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসাবে ২০১৯ সালের এপ্রিলে নিয়োগ দেওয়া হয়। মাত্র দুই মাস পরই তাকে আকস্মিকভাবে আইএসআইয়ের পরিচালক হিসাবে পদায়ন করা হয়।
লে. জেনারেল নোমান মাহমুদ : রেজিমেন্টের কর্মকর্তা নোমান মাহমুদ বালুচ। বর্তমানে তিনি ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট পদে আছেন। কোয়েটার কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজে প্রধান প্রশিক্ষক হিসাবেও তার ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে। নোমান মাহমুদ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মহাপরিচালক (অ্যানালাইসিস) হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে তাকে তিন তারকা জেনারেল হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
এ জাতীয় আরো খবর..