×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৮-১৬
  • ৫১ বার পঠিত
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেতের সঙ্গে বৈঠকে ছয় শতাধিক ব্যক্তির গুমের অভিযোগ সংক্রান্ত একটি তালিকা দিয়েছে বেসরকারি সংগঠন ‘মায়ের ডাক’। ‘গুম হওয়া’ ব্যক্তিদের স্বজনদের ওই সংগঠনের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, তাঁদের ওই হিসাব ২০১৪ সালের নির্বাচনপূর্ব সময় থেকে করা। তাঁরা একটি তালিকা দিয়েছেন হাইকমিশনারকে।

হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরের প্রধান। তিনি গতকাল সোমবার সকালে ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে প্রায় তিন ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন ২০টিরও বেশি নাগরিকসমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে।

বৈঠকে ঢাকায় জাতিসংঘ কার্যালয় ও জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন, পরিবেশ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, উর্দুভাষীদের অধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় ওই বৈঠকে। এতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের সম্মাননীয় নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সমাজকর্মী খুশী কবির, পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এবং বেসরকারি সংস্থা হিসেবে নিবন্ধন হারানো অধিকারের সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এখন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই চলছে বলে বৈঠকে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার। বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে হাইকমিশনার বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির বিভিন্ন দিক শুনেছেন। ভালো-মন্দ সব দিক নিয়েই আলোচনা হয়েছে ওই বৈঠকে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো যাতে এ দেশে নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারে, সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরের ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, ‘হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেত বলেছেন, ঢাকায় আজ নাগরিকসমাজের বিভিন্ন শাখার প্রতিনিধিদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় হয়েছে। মানবাধিকারের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিতকরণ ও মোকাবেলায় নাগরিকসমাজের কাজের সুযোগ, অনুকূল পরিবেশ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রয়োজন। ’ বৈঠক শেষে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘আমরা যারা মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা নিয়ে কাজ করছি, আমরা আমাদের কথাগুলো তুলে ধরেছি। ’

সমাজকর্মী খুশী কবির বলেন, ‘সবার কাছে সবগুলো সেক্টরের মানবাধিকারের অবস্থাটা জানতে চাওয়া হয়েছে। আমাদের অনেকে ভালো দিকগুলো যেমন বলেছেন, সেই সঙ্গে আমাদের কোথায় দুর্বলতাগুলো আছে, কোথায় কী করতে হবে—এ বিষয়গুলো খুব স্পষ্টভাবেই খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। ’

মানবাধিকারের ক্ষেত্রে কাজ করার চ্যালেঞ্জ, সুশাসন ও গণতন্ত্র নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘কাজের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো কী সেগুলো তুলে ধরেছি। সেগুলোর ক্ষেত্রে যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার একটা ভূমিকা আছে, সেটি তুলে ধরেছি। ’ তিনি বলেন, ‘এখানে গণতন্ত্রের কথা আলোচনা হয়েছে। এখানে ডিজিটাল নিরাপত্তার কথা অনেকে বলেছেন। আমি পরিবেশের কথা বলেছি। সুশাসনের কথা এসেছে। জবাবদিহির কথা এসেছে। ’

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উর্দুভাষীদের প্রতিনিধি খালিদ হোসেন। তিনি বলেন, এ দেশে উর্দুভাষীরা পাসপোর্ট পাচ্ছে না—এমন তথ্য তিনি বৈঠকে তুলে ধরেছেন।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, মানবাধিকারকর্মীরা ‘গুম’, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’সহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধানকে অবহিত করেছেন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি এএফপিকে বলেন, ‘আমরা বলেছি, এটি (বাংলাদেশ) এখন পুলিশি রাষ্ট্র, জনগণের রাষ্ট্র নয়। ’ তিনি আরো বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় সংস্থার দ্বারা ছয় শরও বেশি লোক গুম হওয়ার কথা আমরা বলেছি। ’

উল্লেখ্য, বৈঠকে নাগরিকসমাজের প্রতিনিধিরা ‘গুম’ নিয়ে যে অভিযোগ করেছেন তা সরকারের অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মিশেল বাশেলেত গত রবিবার ঢাকায় এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সরকারের ওই মন্ত্রীরা বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগগুলোর জবাব দিয়েছেন এবং তাঁদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশে ‘এনফোর্সড ডিস-অ্যাপিয়ারেন্স’ বা ‘গুম’ বলে কিছু নেই। ৭৬ জন নিখোঁজ হয়েছে বলে সরকারের কাছে তথ্য এসেছিল। তাদের ১০ জন এরই মধ্যে ফিরে এসেছে। বাকিদের অনেকের বিষয়ে তাদের পরিবারই তথ্য দিচ্ছে না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ঘৃণ্য অপরাধ করে, ব্যবসা-বাণিজ্যে ঋণে জর্জরিত হয়ে দেউলিয়া হয়ে ও পারিবারিকভাবে অসুবিধায় পড়ে লোকজন গা-ঢাকা দেয়।

বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন

হাইকমিশনার বাশেলেত গতকাল দুপুরে ঢাকার ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যান। সেখানে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ও শ্রদ্ধা জানান। এ ছাড়া তিনি পরিদর্শক বইয়েও স্বাক্ষর করেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধানকে জাদুঘর প্রাঙ্গণে স্বাগত জানান। তিনি তাঁকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ঘুরিয়ে দেখান।

আজ রোহিঙ্গা শিবিরে যাচ্ছেন

কক্সবাজার থেকে আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি জানান, মিশেল বাশেলেত গতকাল বিকেলে কক্সবাজারে পৌঁছেছেন। তিনি আজ মঙ্গলবার কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করবেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat