সরকারকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত সময় দিল বামপন্থী দলগুলোজ্বালানি তেল, সারসহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ দেশের বামপন্থী দলগুলো। ইতোমধ্যে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে আগামী ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আগামী ২৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার হরতাল কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে সর্বশেষ গত ৯ আগস্ট সিপিবি কার্যালয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ৯ বাম দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়।
সভায় যার যার অবস্থান থেকে জ্বালানি তেল-সারসহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ও জনজীবনের সংকট দূর করতে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের অবসানের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলায় ঐকমত্য পোষণ করা হয়। বৈঠকে শাহবাগে ছাত্রমিছিলে পুলিশ ও সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার নিন্দা ও ছাত্রনেতাদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয় এবং হামলাকারী পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের বিচার দাবি করা হয়। সম্প্রতি বাস ডাকাতি এবং বাসসহ বিভিন্ন এলাকায় দলবদ্ধ নারী ধর্ষণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
এর আগে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশের বামপন্থী দলগুলো তীব্র প্রতিবাদ জানায়। দলগুলোর পক্ষ থেকে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। গত ৬ ও ৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও করণীয় নিয়ে আলোচনাকালে জ্বালানি তেল, সারসহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সভায় হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি দেওয়ার প্রস্তাব আসে। প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শেষে বিষয়টি নিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ অন্য বামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর ৮ আগস্ট বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সভায় একই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার না হলে ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অভিমুখে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। একই দিন জেলায় জেলায় ডিসি অফিসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত হয়। বাম জোট ও ৯ বাম দলের যৌথ সভা থেকেও কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করা হয়েছে। এ ছাড়া যুগপৎভাবে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই কর্মসূচির সঙ্গে বাম ধারার রাজনৈতিক দলসহ প্রগতিশীল অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে একাত্ম হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
এ বিষয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, বাম জোট ও ৯ বাম দলের যৌথসভায় জ্বালানি তেল, সারসহ নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং পুলিশ ও সন্ত্রাসী পেটোয়া বাহিনীর হামলা নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় বাম নেতারা মত প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান সরকার ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন দীর্ঘায়িত করতে চাইছে। এর বিরুদ্ধে শ্রমিক-কৃষক-নিপীড়িত জাতিসত্তা ও জনগণের বিকল্প শক্তির সমাবেশ গড়ে তুলতে হবে। সভায় হরতাল কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানান।
আগামী ২৫ আগস্ট সারা দেশে হরতাল কর্মসূচি পালনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান বাম জোটের অন্যতম শরিক সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, সিপিবির সভায় আগেই আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের পর হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেওয়া হবে। দ্রুতই সংবাদ সম্মেলনের করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বামধারার ৯টি দলও হরতালসহ আন্দোলন কর্মসূচি যুগপৎভাবে পালন করবে বলে বাম জোটকে জানিয়েছে। অন্যান্য বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্ম করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে ৯ বাম দলের সমন্বয়ক জাফর আহমেদ জানান, জ্বালানি তেল, পরিবহনভাড়া ও ইউরিয়াসহ নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং লোড শেডিং বন্ধ, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য খাতে চুরি-দুর্নীতির বিচার, বিদেশে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনা ও পাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলন জোরদার করতে দ্রুতই হরতালসহ নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..