রাজধানীর সবুজবাগে ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীকে প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেন আসামি রাজু আহমেদ নামে এক যুবক। আট মাসের গর্ভাবস্থায় তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী পরিবার৷ এ মামলায় আসামি রাজু আহমেদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত এ রায় ঘোষণা করেন।
এদিন আসামি রাজুকে আদালতে হাজির করা হয়।
এরপর তার উপস্থিতিতে আদালত রায় পড়া শুরু করেন। রায় পড়া শেষ হলে আদালত আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন৷ পাশাপাশি তাকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো ছয় মাস কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর আদালত সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, আসামি রাজু আহমেদের করা অপরাধ লজ্জাজনক, পূর্বপরিকল্পনাপ্রসূত, ভয়াবহ, সুস্থির চিন্তাযুক্ত এবং স্পর্শকাতর যা আমাদের বিবেককে তাড়িত ও ধ্বংসিত করে। আসামি সুন্দরভাবে অপরাধ করার জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক ভিকটিমকে ধর্ষণ করেছেন। তাছাড়া আসামির এমন অপরাধে ভিকটিমের পুত্র সন্তান জন্মেছে এবং আসামি এই সন্তানের জৈবিক পিতা।
পর্যবেক্ষণে বিচারক আরো বলেন, অভিযোগপত্র পর্যালোচনায় আসামির বয়স ৩০ বছর মর্মে দেখা যায়। আসামি মানসিকভাবে অনগ্রসর নতুবা ১২ বছর বয়স্ক ভিকটিমের সাথে কোনোভাবেই শারীরিক সম্পর্ক করতেন না। ভিকটিম পরিবার পুত্র সন্তানটির তত্ত্বাবধান দাবি করেননি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৯ (১) ধারায় মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান সন্নিবিসিত করা হয়েছে। আইন শিশুকে পিতৃ পরিচয় প্রদান করেছে, কিন্তু শিশুটির পিতামাতার যত্ন, ভালোবাসা দিতে অক্ষম। আসামিকে সর্বোচ্চ সাজা প্রদান করা হলে নবজাতকটি চিরতরে ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হবে। যার কারণে আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা সমীচীন হবে না মর্মে প্রতিভাত হয়। এমতবস্থায় আসামি রাজু আহমেদকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৯ (১) ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করা হলে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে মর্মে প্রতীয়মান হয়।
ধর্ষণের অভিযোগে ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা বাদী হয়ে সুবজবাগ থানায় মামলা করেন। মামলার ২০ দিনের মাথায় ২৭ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী পুত্র সন্তান জন্ম দেয়। বর্তমানে শিশুটি রাজধানীর আজিমপুরে সোনামণি নিবাসে রয়েছে। তদন্ত শেষে একই বছরের ৭ মে অভিযোগ পত্র দেয় পুলিশ। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আদালত অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এ মামলার বিচার চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে আদালত ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।
এ জাতীয় আরো খবর..