×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৮-০৭
  • ৩৫ বার পঠিত
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি পুরো অর্থনীতিতে চাপে ফেলবে। এতে স্থানীয় ও রপ্তানিমুখী শিল্প এবং কৃষির উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, পণ্য পরিবহণসহ সব খাতেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফলে অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি যুক্তিসঙ্গত নয়। শনিবার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতিবিদরা এসব কথা বলেছেন।

এ বিষয়ে শনিবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, তেলের দাম বাড়লে উৎপাদন ও পণ্য পরিবহণ খরচ বাড়বে, মূল্যস্ফীতি হবে, এটাই স্বাভাবিক। এখন বিশ্ববাজারে তেলের দাম নিম্নমুখী। করোনার সময় যখন তেলের দাম কম ছিল, তখন ৪৮-৫০ হাজার কোটি টাকা মুনাফা হয়েছে। ওই টাকা দিয়ে এখন ভর্তুকি দেওয়া যেত। এছাড়া জ্বালানি তেলের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ককর আছে। এটি কমিয়েও তেলের দাম সমন্বয় করা যেত। সব সময় আমরা তেলের দাম সমন্বয় করার কথা বলেছি, ধীরে ধীরে দাম বাড়াতে বলেছি। হঠাৎ করে এক বিশাল অঙ্কের মূল্যবৃদ্ধি সবকিছুর ওপর প্রভাব ফেলবে। আগামীকাল (রোববার) জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক আছে। তার পরিকল্পনা শুনে পরে বিস্তারিত জানানো হবে। তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে ১৫ শতাংশ গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এটিকে স্বাগত জানিয়েছে। কারণ এটা সহনীয় ছিল, গায়ে লাগেনি। কিন্তু তেলের ৫০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি অসহনীয় পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি সেলিম ওসমান এমপি বলেন, বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম কমতির দিকে, ঠিক তখন জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আমাদের হতবাক করেছে। এ সিদ্ধান্তের কারণে নিঃসন্দেহে চাপে পড়বে রপ্তানিমুখী শিল্প খাত। বিশেষ করে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে এর প্রভাব সরাসরি বিদ্যুৎ, পরিবহণসহ অন্য উপখাতগুলোতে পড়বে। যা প্রকারান্তরে রপ্তানি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে হ্রাস করবে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনায় বসে খাতওয়ারি বিকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ দুই বছর যাবৎ করোনা মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিপ্রায় এক ধরনের দীর্ঘ শ্লথ প্রবৃদ্ধির দিকে এগিয়েছে, যা থেকে আমরা এখনো বেরোতে পারিনি। তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়ার ওপরই একটি মারাত্মক চাপ বাড়বে। ফলে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের অর্ডার সন্তোষজনক নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম ও জাহাজ ভাড়া দুটোই বেড়েছে। এ অবস্থায় তেলের দাম বাড়ায় গার্মেন্ট শিল্প ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ অনেক কারখানা উৎপাদন সচল রাখতে ডিজেল জেনারেটর চালায়। এখন জেনারেটরে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হতো ২১-২৫ টাকা, ডিজেলের দাম বাড়ানোয় খরচ পড়বে ৩২-৩৫ টাকা। পাশাপাশি স্থানীয় পরিবহণ খরচ তো আছেই। সামগ্রিকভাবে গার্মেন্ট শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে পশ্চাৎপদ শিল্প হিসেবে টেক্সটাইল খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি আরও বলেন, জ্বালানি তেলের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির মতো কিছু সিদ্ধান্তের কারণে সরকারের অনেক অর্জন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। তেলের দাম পর্যায়ক্রমে কয়েক দফা বাড়ানো উচিত ছিল। তাতে খুব সমস্যা হতো না। কিন্তু হুট করেই এত মূল্যবৃদ্ধি মানুষের অস্বস্তি বাড়িয়েছে। এর সামাজিক প্রভাব বেশি পড়েছে বলে মনে হয়। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, এলাকাভেদে ২-৫ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। উৎপাদন অব্যাহত রাখতে গার্মেন্ট মালিকরা জেনারেটর চালাত। তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানোয় পোশাক খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, তেলের দাম বাড়ায় শিল্পে নানামুখী চাপ বাড়বে। প্রথমত, পরিবহণ খরচ বাড়ায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে। এতে রপ্তানিমুখী শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর চাপ আসবে। দ্বিতীয়ত, শিল্পের উৎপাদন খরচ বাড়বে। এতে প্রতিযোগী সক্ষমতা কমবে। সামনের দিনগুলোতে অর্ডার আরও কমে আসতে পারে। ধীরে ধীরে দাম বাড়ালে এসব সমস্যা থেকে হয়তো কিছুটা হলেও রেহাই পাওয়া যেত। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, তেলের মূল্যবৃদ্ধি জীবনযাত্রার ব্যয় বহুলাংশে বৃদ্ধি করবে বলে আশঙ্কা করছি। পরিবহণ, কৃষি, বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্প খাতে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে। সেচকাজে ব্যবহৃত ডিজেলের দাম বাড়ায় কৃষিপণ্যের দাম বাড়বে। ব্যক্তি খাতে পরিচালিত ক্যাপটিভ পাওয়ারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বাড়বে। এতে পণ্যের দামেও প্রভাব পড়বে। সব মিলিয়ে সামগ্রিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এই মুহূর্তে দেশে মূল্যস্ফীতিজনিত প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, সেটিকে আরও উসকে দেবে তেলের মূল্যবৃদ্ধি।

তিনি আরও বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিও ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া যুক্তিযুক্ত হবে না। এর পরিবর্তে ক্যাপাসিটি চার্জের ভর্তুকি দেওয়া থেকে সরকারকে সরে আসার কৌশল খোঁজা উচিত।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat