জ্বালানি তেলের দাম হুট করে বেড়ে যাওয়ায় মোটরসাইকেল নিয়ে পেট্রলপাম্পে আসেন আতাউর শেখ (৪৫)। গতকাল শুক্রবার রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দীর্ঘ লাইনে থেকে তিনি পেলেন মাত্র ১০০ টাকার অকটেন। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও চাহিদা অনুসারে জ্বালানি তেল না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ানোর একটি লিমিট আছে। এভাবে দাম বাড়ানো মানে গরিব মারার সব ব্যবস্থা করা। এখন ধুঁকে ধুঁকে মরার পালা আমাদের।’
শুধু আতাউরই নন, মাদারীপুরে তাঁর মতো শত শত মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসচালক পাম্পে ভিড় করেন পেট্রল ও অকটেন নেওয়ার জন্য। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ মোটরসাইকেলের ৫০০ টাকা পর্যন্ত জ্বালানি তেল নেন। তবে বেশির ভাগ ক্রেতাকে দেওয়া হয় ১০০ থেকে ২০০ টাকার সমপরিমাণ তেল। পেট্রলপাম্পগুলোয় চাহিদা অনুসারে তেল না পাওয়ায় অনেককেই বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।
সরেজমিন রাত সাড়ে ১১টার থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মাদারীপুর ইউসুপ ফিলিং স্টেশন, সার্বিক ফিলিং স্টেশন, আড়িয়াল খাঁ ফিলিং স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি পাম্পে মোটরসাইকেল আরোহীদের উপচে পড়া ভিড়। মোটরসাইকেল ছাড়াও প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসগুলোর ভিড় দেখা যায় পাম্পে। জেলার পাম্পগুলোয় মোটরসাইকেলের ভিড় বেশি থাকায় প্রথমে আগের মূল্যে ২০০ টাকার পেট্রল, অকটেন দিলেও পরে চাপ বাড়তে থাকায় ১০০ টাকার তেল দেন পেট্রলপাম্পের মালিকেরা। আর মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারে দেওয়া হয় ৫০০ টাকার তেল। রাত সাড়ে ১২টার পর থেকে নতুন দামে তেল বিক্রি করা শুরু হলে পাম্পগুলোয় ধীরে ধীরে ভিড় কমতে শুরু করে।
মাদারীপুর শহরের ইউসুফ ফিলিং স্টেশনে তেল কিনতে আসা মো. হাবিবুর মুনশি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দেশে কোনো কিছুর ঠিক নেই। হুটহাট করে সবকিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে। কোনো কিছুর নিয়ন্ত্রণ নেই। একবার কিছুর দাম বাড়ানো হলে সেটা আর কমে না। এখন যেভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলো, তাতে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের যে কী হাল হবে, তা চিন্তা করতেই ভয় হচ্ছে।’
সার্বিক ফিলিং স্টেশনে কথা হয় শহরের পুরানবাজার এলাকার চাকরিজীবী শাহরিয়াত করিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পাম্পে প্রায় এক ঘণ্টা হুড়োহুড়ি করে ২০০ টাকার পেট্রল পাই। তা দিয়ে বড়জোর দুই দিন মোটরসাইকেল চলবে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় আমাদের সবার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।’
ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাসের চালক সোহাগ সরদার বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ার কারণে এখন ভাড়া বাড়বে। বেশি ভাড়া হলে গাড়িতে যাত্রীও কম ওঠে। একলাফে তেলের দাম এভাবে বাড়ানো ঠিক হয়নি। আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হব।’
মাদারীপুর ইউসুফ ফিলিং স্টেশনের মালিক মো. ইউসুফ বলেন, ‘আমাদের পাম্পগুলোতে মাত্র দুই দিনের তেল মজুত রাখা হয়। আজ হঠাৎ করে তেলের দাম বাড়ার কথা শুনে সবাই তেল নিতে ভিড় করছেন। মজুত রাখা সব তেল প্রায় শেষের দিকে।’
গতকাল শুক্রবার রাতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কথা জানানো হয়। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রলের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়। গতকাল রাত ১২টার পর থেকে নতুন এই দাম কার্যকর হয়েছে।
এ জাতীয় আরো খবর..