×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৮-০৩
  • ৫৫ বার পঠিত
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউসুফ আলী তাঁর মক্কেলদের কাছ থেকে (গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী) কী বাবদ ২৬ কোটি টাকা নিয়েছেন, সেটা সুনির্দিষ্টভাবে তাঁকে উল্লেখ করে একটি হলফনামা বৃহস্পতিবারের মধ্যে দিতে বলেছেন হাইকোর্ট। এসংক্রান্ত প্রাথমিক তথ্য পাওয়ার পর মঙ্গলবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।  

এ সময় আদালত ইউসুফ আলীর আইনজীবীদের উদ্দেশ করে বলেন, “হলফনামা দিয়ে বিষয়টি  পরিষ্কার করুন, যাতে দেশের উচ্চ আদালত নিয়ে মানুষের বিন্দুমাত্র সন্দেহ না থাকে। আইনজীবী হিসেবে আপনি যে ফি পেয়েছেন, তা লুকানোর কিছু নেই।

আপনি কত টাকা ফি নিয়েছেন, তা হলফনামায় স্পষ্টভাবে জানান। ‘অন্যান্য খরচ’ বাবদ, আরো ১০ কোটি টাকা কী বাবদ পেয়েছেন, তা ‘পরিষ্কারভাবে’ জানাবেন। এতে আদালতের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা-ও স্পষ্ট করবেন। ”
এর আগে আইনজীবী ইউসুফ আলীর আইনজীবীদের দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা আদায় বাবদ ইউসুফ আলী ‘ফি হিসেবে’ ১৬ কোটি টাকা নিয়েছেন। এ ছাড়া ‘অন্যান্য খরচ’ বাবদ আরো ১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, যা শ্রমিক-কর্মচারীদের কাছ থেকেই পেয়েছেন তিনি।  

আদালতে আইনজীবী ইউসুফ আলীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আহসানুল করিম, সাঈদ আহমেদ রাজা, রবিউল আলম বুদু ও অনীক আর হক। গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান।   

পরে আইনজীবী আহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইনজীবী ইউসুফ আলী এবং অন্য আইনজীবী যাঁরা ছিলেন তাঁদের ১৬ কোটি টাকা প্রদান করা হয়। আরো ১০ কোটি টাকা ট্রেড ইউনিয়নের অ্যাকাউন্টে আছে। সুতরাং যে টাকা প্রদান করা হয়েছে তা ফি বাবদই প্রদান করা হয়েছে। আদালতে শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও একই কথা বলা হয়েছে। গ্রামীণ টেলিকমের কাছ থেকে অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী কোনো টাকা গ্রহণ করেননি। এমনকি তাঁদের অন্য কোনো অ্যাডভোকেটও গ্রহণ করেননি। হলফনামা যেটি দেওয়া হয়েছে, সেটি আদালতের দৃষ্টিতে অসম্পূর্ণ মনে হয়েছে। তাই পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করে আরেকটি হলফনামা দিতে বলেছেন। ’ 

আগামী বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে জানিয়ে আইনজীবী বলেন, ‘সেদিন হলফনামা দিয়ে ইউসুফ আলী সাহেবকে বলতে হবে যে কত টাকা তিনি ফি হিসেবে পেয়েছেন, আদৌ তিনি ফি হিসেবে পেয়েছেন কি না, কত টাকা তিনি গ্রহণ করেছেন। বাকি ১০ কোটি টাকা অন্যান্য বাবদ খরচের কথা বলেছেন। এই ১০ কোটি টাকা কে পেল, সেটি পরিষ্কারভাবে বলতে বলা হয়েছে। ’

নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধের বিষয়ে গত ৩০ জুন জানতে চান হাইকোর্ট। গ্রামীণ টেলিকম ও প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিক-কর্মচারীদের আইনজীবীদের কাছে এসংক্রান্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়। কোন কর্মচারীকে কত টাকা দেওয়া হয়েছে তার তালিকা এবং এসংক্রান্ত নথিসহ হলফনামা করে প্রতিবেদন দিতে বলেন আদালত। সে ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার বিষয়টি আদালতে শুনানির জন্য ওঠে।

কম্পানির মুনাফার ৫ শতাংশ ‘শ্রমিকের অংশগ্রহণ তহবিল গঠন’ করে ২০০৬ সাল থেকে লভ্যাংশ শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন করার কথা; কিন্তু সেই লভ্যাংশ শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন না করায় শ্রম আদালত ও হাইকোর্টে মামলা করেন তাঁরা। আর গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আবেদন করে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন।

আইন অনুযায়ী পাওনা টাকা পরিশোধ করা হবে, সম্প্রতি এমন সমঝোতার পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ছাঁটাই, পাওনা নিয়ে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের করা শতাধিক মামলা প্রত্যাহার করা হয়।

সে সমঝোতায় গত ২৩ মে বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে একটি, বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে পাঁচটি এবং শ্রম আদালত থেকে ১০৪টি মামলা প্রত্যাহার করেন গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীরা।  

হাইকোর্টে ছয়টি মামলার মধ্যে গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে করা মামলাটিও ছিল। বাকি পাঁচটি মামলার মধ্যে দুটি রিট মামলা, তিনটি আদালত অবমাননার। আর শ্রম আদালতে ১০৪টি মামলার মধ্যে ১০৩টিই শ্রমিক-কর্মচারীদের আলাদা মামলা। একটি মামলা ইউনিয়নের।
এর পরদিন, অর্থাৎ গত ২৪ মে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের আইনজীবী ইউসুফ আলী কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, ‘যতটুকু জানি হিসাব-নিকাশ করে ৪৩৭ কোটি টাকায় রফা হয়েছে। ১৭৬ জন শ্রমিক-কর্মচারী এ টাকাটা পাবেন। ’

আর গ্রামীণ টেলিকমের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেছিলেন, ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড অনুযায়ী তাঁদের যে টাকাটা প্রাপ্য সেই টাকাটা তাঁদের দেওয়া হচ্ছে। ২০১১ সাল থেকে ফান্ডের টাকা ধরা হয়েছে। পরে আইনজীবী ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, ১২ কোটি টাকার বিনিময়ে তিনি গ্রামীণ টেলিকম ও শ্রমিক-কর্মচারীদের মামলাসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করেছেন। বিষয়টি নজরে আসার পর আদালতে এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশের পাশাপাশি আইনজীবীদের কাছে প্রতিবেদন চান।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat