প্রতারণা করে মানুষের ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের হোতাকে গ্রেপ্তার করার দাবি করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত রবিবার নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে মো. খোকন ব্যাপারী ওরফে জুনায়েদ (৩০) নামের ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর এসব তথ্য জানান।
সিআইডি জানায়, খোকন ব্যাপারী পাঁচ-ছয় বছর ধরে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন।
তাঁর নিজস্ব একটি চক্র রয়েছে। তিনি ওই চক্রের হোতা।প্রতারণা করে এখন পর্যন্ত তিনি এক কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
মুক্তা ধর বলেন, একটি চক্র বিকাশ/নগদ/রকেটের অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে আর্থিক লেনদেনের প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড থেকে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতারণার শিকার এক ব্যক্তির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডি নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালিয়ে খোকন ব্যাপারীকে গ্রেপ্তার করে।
সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, খোকনের নেতৃত্বে তিন-চার সদস্যের একটি প্রতারকচক্র ছয়টি ধাপে প্রতারণার কাজটি করত। প্রথম ধাপে প্রতারক বিকাশ/নগদ/রকেটের অফিসের কর্মকর্তা পরিচয়ে ভিকটিমকে ফোন দিয়ে অ্যাকাউন্ট আপডেট করতে বলেন। আর অ্যাকাউন্টটি আপডেট না করলে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানান। দ্বিতীয় ধাপে প্রতারক জানান, ভিকটিমের ব্যবহৃত অ্যাকাউন্টে ভুল পাসওয়ার্ড তিনবারের বেশি দিলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
তৃতীয় ধাপে ভিকটিমকে জানানো হয়, তার অ্যাকাউন্টটি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে এবং অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা ব্লক হয়েছে। তবে এই টাকা ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ডে ট্রান্সফার করা সম্ভব। চতুর্থ ধাপে প্রতারক ভিকটিমের ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ডের নম্বর এবং সিভিএন জানতে চান। পঞ্চম ধাপে ভিকটিম এসব তথ্য সরবরাহ করলে ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ডের সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে যে মোবাইল ফোন নম্বর সরবরাহ করে সেই মোবাইল ফোন নম্বরে ওটিপি কোড সংবলিত একটি মেসেজ যায়। সর্বশেষ ষষ্ঠ ধাপে ভিকটিম মেসেজটি গ্রহণ করার পর সেই কোডটি প্রতারককে জানায়। কোডটি পাওয়ার পর ভিকটিমের ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ টাকা প্রতারক তাঁর নিজের বিকাশ/নগদ/রকেটের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ভুক্তভোগীর কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের পরপরই প্রতারকচক্রটির সদস্যরা নিজেদের পরিচয় গোপন করে রাখেন। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি এ পর্যন্ত তাঁর সহযোগীদের নিয়ে এক কোটিরও বেশি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন।
মুক্তা ধর বলেন, খোকনের দুটি ফেসবুক পেজ রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের দুটি পেজে অন্তর্ভুক্ত করতেন। তারপর তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বুঝে মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করে তাঁর প্রতারণার কার্যক্রম শুরু করেন।
এ জাতীয় আরো খবর..