ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনির অভিযোগে রেলের টিকিট বিক্রিতে অনিয়ম-অবহেলার দায়ে সহজ ডটকমকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছিল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সেই জরিমানা আপাতত গুনতে হচ্ছে না রেলের টিকিট বিক্রির অংশীদার এ প্রতিষ্ঠানটিকে। জরিমানার টাকা আদায় স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। এ জরিমানার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সহজ ডটকমের রিটের প্রাথমিক শুনানির পর রুল জারি করেন আদালত।
আজ রবিবার (৩১ জুলাই) এ আদেশ দেন বিচরপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
মহিউদ্দিন রনির অভিযোগের ভিত্তিতে সহজ ডটকমকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দুই লাখ টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। বাণিজ্যসচিব, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মহিউদ্দিন রনিসহ পাঁচ বিবাদীকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তানজিব উল আলম। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কাজী এরশাদুল আলম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
পরে আইনজীবী তানজিব উল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাইকোর্ট জরিমানা আদায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। ফলে সহজ ডটকমকে আপাতাত জরিমানার দুই লাখ টাকা দিতে হচ্ছে না। ’
টিকিট বিক্রির অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সহজ ডটকম থেকে টিকিট কিনে না পেয়ে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি।
গত ১৩ জুন তিনি ঢাকা-রাজশাহীর ট্রেনের তিনটি টিকিট কাটতে চেয়েছিলেন। মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হলেও টিকিট পাননি। টাকা ফেরত না পেয়ে রেল ও টিকিট বিক্রির অপারেটর সহজ-সিনোসিস-ভিনসেন্ট জেভির কাছে ধরনা দেন রনি। সেখানে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হন তিনি। পরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে এ নিয়ে অভিযোগ দেন তিনি। কিন্তু অধিদপ্তরে প্রতিকার না পেয়ে গত ৭ জুলাই থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান নেন মহিউদ্দিন রনি। গত ১০ জুলাই ঈদের দিনেও তিনি অবস্থানে ছিলেন।
এক পর্যায়ে অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি রেলের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতির প্রতিবাদে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করেন। কিন্তু পুলিশের বাধায় শেষ পর্যন্ত গণস্বাক্ষর কর্মসূচি চালিয়ে যেতে পারেননি। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে মহিউদ্দিনের সঙ্গে যুক্ত হন আরো কয়েকজন। রনির অবস্থান নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর গত ২০ জুলাই বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির খায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আসে। রনির অভিযোগের বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি না, রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আইনজীবীকে তা জানাতে বলা হয়।
ওই দিনই মহিউদ্দিন রনির উপস্থিতিতে তার অভিযোগের শুনানি করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। শুনানিতে সহজ ডটকমের অবহেলার প্রমাণ পাওয়ায় দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ভোক্তা অধিকার আইনের ৭৬(৪) ধারা অনুযায়ী জরিমানার ২৫ শতাংশ রনিকে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে এই টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। গত ২৬ জুলাই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করে সহজ ডটকম।
এ জাতীয় আরো খবর..