রহস্যময় বঙ্গোপসাগর। মাঝসমুদ্রে গেলে মনে হয়, এর বুঝি কূলকিনারা নেই। এর মধ্যেই কখনো ঝড়, কখনো তেড়ে আসে বিশাল ঢেউ। সব বুক পেতে দাঁড়িয়ে থাকে মাছ ধরার একটি ট্রলার। যে ট্রলারের যাত্রীরা পেশাদার জেলে নন, অভিনয়শিল্পী। জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা, শঙ্কা, আসন্ন বিপদ মাথায় রেখেই দিনের পর দিন কাজ করে চলে একদল শুটিং ইউনিট। এভাবে গভীর সমুদ্রে গোপনে টানা ৪০ দিন শুটিং করে প্রথম আলোচনায় আসে ‘হাওয়া’। সেটা ২০১৯ সালের ঘটনা। করোনার কারণে দীর্ঘদিন আটকে ছিল সিনেমাটি। মহামারির সময় মাস্কে ‘হাওয়া’র ছবি জুড়ে দিয়ে আলোচনায় আসে হাওয়া। চলতি বছর গোপন সিন্দুক থেকে রত্ন বের করার মতোই নতুন নতুন চমক দিয়েছে হাওয়া, যার শুরুটা হয় পোস্টার দিয়ে। এরপর ট্রেলার দিয়ে রীতিমতো আলোচনার ঝড় তোলে। বাংলাদেশ তো বটেই, পশ্চিমবঙ্গের ইউটিউবাররাও বাংলাদেশি সিনেমার ট্রেলারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। তবে কে জানত, হাওয়ার মোক্ষম চমক তখনো বাকি। যা প্রকাশ্যে আসে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে। সিনেমার গান ‘সাদা সাদা কালা কালা’ মুক্তির পরই ঝড় তোলে। রাতারাতি পরিণত হয় গণমানুষের গানে। বহুল প্রতীক্ষিত সিনেমাটা আজ মুক্তি পাচ্ছে প্রেক্ষাগৃহে।
মেজবাউর রহমান সুমনের প্রথম ছবি ‘হাওয়া’। যা রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টার সিনেমাসসহ দেশের ২৪টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে। আগে ছোট পর্দায় কাজ করেছেন, বানিয়েছেন অনেক বিজ্ঞাপন। তবে সুমনের জন্য বড় পর্দার পরীক্ষা এই প্রথম। সিনেমার গল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটা মিস্ট্রি-ড্রামা ঘরানার গল্প। বাস্তবতার গল্প হলেও শেষে গিয়ে রূপকথার গল্প হয়ে ওঠার ব্যাপার আছে। বলতে পারেন, ছবিটি দেখতে বসে দর্শক একটি জার্নির মধ্য দিয়ে যাবেন। গল্পটিকে নতুন আঙ্গিকে দর্শকের সামনে আনার চেষ্টা করেছি। এতটুকুই।’ মাঝসমুদ্রে গন্তব্যহীন একটি মাছ ধরার ট্রলারে আটকে পড়া আট মাঝিমাল্লা ও এক রহস্যময় বেদেনিকে ঘিরে হাওয়ার গল্প। দীর্ঘ দুই বছর গবেষণা শেষে ২০১৯ সালের অক্টোবরে গভীর সমুদ্রে ছবিটির শুটিং শুরু হয়। ওই বছরের নভেম্বরেই শেষ হয় শুটিং।
একটি নৌকার মধ্যেই পুরো সিনেমা। বিষয়টি দর্শক কীভাবে নেবেন, সেটা নিয়েই চিন্তিত ছিলেন চান মাঝি চরিত্রে অভিনয় করা চঞ্চল চৌধুরী। ট্রেলার প্রকাশের পর থেকেই যাঁর লুক দর্শকের প্রশংসা পাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘গভীর সমুদ্রে শুটিং করা সহজ ছিল না। নানা প্রতিবন্ধকতা, ভয়ভীতির মধ্য দিয়ে শুটিং করতে হয়েছে। দুই দিন একরকম হারিয়ে গিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমাদের সেই শ্রম বৃথা যায়নি। শুটিং করতে করতে একসময় মনে হয়েছিল, শেষ করে আসতে পারব কি না। সেই সিনেমা নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ আমাদের মুগ্ধ করেছে। হলে দেখার পর দর্শক সিনেমাটিকে কীভাবে নেন, সেই অপেক্ষায় আছি।’
হাওয়ার একমাত্র নারী চরিত্র গুলতি। যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাজিফা তুষি। সিনেমাটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ-তরুণীর কাছে ছবিটি নিয়ে কথা বলতে গিয়েছি। মুক্তির আগে দর্শকের সঙ্গে যোগাযোগটা বেশ শক্তভাবে করতে পেরেছি। সবাই ছবিটি দেখতে মুখিয়ে আছেন। টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। আমার নিজেরও কয়েকটি টিকিট দরকার ছিল, পাইনি।’ তবে মুক্তির পর দর্শকের প্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তিত নন অভিনেত্রী, ‘মুক্তির আগে দর্শকই ছবিটি নিয়ে আলোচনা তৈরি করেছেন। সুতরাং মুক্তির পর দর্শক যা বলবেন, মাথা পেতে নেব।’
এদিকে গত ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘পরাণ’ দিয়ে বাজিমাত করেছেন শরীফুল রাজ। আজ থেকে তাঁর পরাণ চলবে ৬০টি হলে। একই সঙ্গে আজ মুক্তি পাওয়া হাওয়াতেও আছেন তিনি। হাওয়ার শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে তিনি বলেন, ‘কোনো কোনো সময় একটি দৃশ্য শুটিং করতে গিয়ে দুই দিনও সময় নিতে হয়েছে। কারণ, সমুদ্রে জোয়ার–ভাটার কারণে নৌকা ঘুরে যেত। এতে সঠিকভাবে সূর্যের আলো পাওয়া যেত না। দৃশ্য ধারণের জন্য অপেক্ষা করতে হতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অনেকগুলো দৃশ্যের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেছে।’ পরিচালনার সঙ্গে হাওয়ার কাহিনি ও সংলাপও লিখেছেন মেজবাউর রহমান সুমন নিজেই। যৌথভাবে চিত্রনাট্য করেছেন মেজবাউর রহমান সুমন, সুকর্ণ সাহেদ ও জাহিন ফারুখ। প্রথম ছবি থেকে কী প্রত্যাশা, জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, ‘কোনো প্রত্যাশা নিয়ে সিনেমাটি বানাইনি। আমার ভালো লাগা, আমার মতো করে একটি সিনেমা বানিয়েছি। তবে দর্শকের মনোভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে, মুক্তির আগেই আমাদের ভাবনাগুলোতে বিশ্বাস করেছেন তাঁরা। এটাই বড় পাওয়া। এখন দেখা যাক, মুক্তির পর কী হয়।’ চঞ্চল চৌধুরী, শরীফুল রাজ, নাজিফা তুষি ছাড়াও হাওয়ার বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুমন আনোয়ার, সোহেল মণ্ডল, নাসির উদ্দিন।
এ জাতীয় আরো খবর..