প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘আমরা মেরুদণ্ড শক্ত রাখার চেষ্টা করব। কামিয়াব কতটুকু হব, সেটা আল্লাহপাক জানেন। নির্বাচন কমিশন আইন ও বিধির আলোকে পরিচালিত হবে। আমরা এর বাইরে যেতে পারব না।
সবার আন্তরিক সহযোগিতা, প্রয়াস থাকলে আমরা সংসদ নির্বাচনের কঠিন কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারব। ইভিএম নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। ইভিএমে হ্যাকিং কোনোভাবেই সম্ভব না। কারণ এটার সঙ্গে ইন্টারনেটের সংযোগ নেই। এটা নিয়ে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। ’
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি এসব কথা বলেন।
গতকালের সংলাপে আমন্ত্রিত ছিল জাকের পার্টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। এর মধ্যে বিজেপি সংলাপ বর্জন করে।
সংলাপে উত্থাপন করা জাকের পার্টির প্রস্তাবে বলা হয়, ইভিএম প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা প্রশংসনীয়। কিন্তু ইভিএম পুরো নিশ্ছিদ্র বা নিরাপদ না। নির্বাচনকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে ব্লকচেইন প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ই-ভোটিং প্রক্রিয়ায় ঘরে বসে ভোট প্রদানের ব্যবস্থা এখনই গ্রহণ করা উচিত। তা না হলে ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে হানাহানি, মারামারি ও দুঃখজনক হত্যাকাণ্ড ঘটতে থাকবে।
আর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ প্রার্থীদের হলফনামায় মামলার তথ্য নেওয়া বন্ধ করা এবং দল নিবন্ধনের শর্ত শিথিল করার প্রস্তাব রাখে।
জাকের পার্টির সঙ্গে সংলাপে সিইসি বলেন, ‘আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। সেই চাওয়াটা পূরণ করতে হলে সবাইকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। গণতন্ত্রের মাধ্যমেই আমাদের স্বাধীন দেশের যাত্রা শুরু হয়েছে। সেই জন্য আমাদের সহযোগিতা করবেন। ইভিএম নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। ইভিএমে হ্যাকিং কোনোভাবেই সম্ভব না। কিন্তু বাইরে অনেক কথা চাউর আছে যে হ্যাকিং হতে পারে, এটাতে ভোট কারচুপি হতে পারে। কিন্তু আমরা এ পর্যন্ত সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ পাইনি। এখনো ইভিএম নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি, যাতে অপপ্রয়োগ সম্ভব না হয়। সেটা নিশ্চিত করেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। ’
তিনি আরো বলেন, ‘কমিশন আইন ও বিধির আলোকে পরিচালিত হবে। আমরা এর বাইরে যেতে পারব না। আমাদের সবার আন্তরিক সহযোগিতা, প্রয়াস থাকলে সংসদ নির্বাচনের কঠিন কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারব। ’
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে সংলাপে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা মেরুদণ্ড শক্ত রাখার চেষ্টা করব। কামিয়াব কতটুকু হব, সেটা আল্লাহ পাক জানেন। ’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালে সংবিধান, আইন ও বিধি-বিধানের আলোকে আপনাদের সহায়তা নিয়ে ক্ষমতা প্রয়োগ করব। সরকারও সহায়তা করবে বলে বিশ্বাস করি। ’
নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনের সময় সাহসিকতার সঙ্গে সক্ষমতা এবং শক্তি প্রদর্শন করতে হবে—এই বক্তব্যের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, আমরা সেই চেষ্টাটা অবশ্যই করব। সে ক্ষেত্রে আপনাদের সহায়তা, সমর্থন লাগবে। ’
আবদুল কাদের সিদ্দিকী যা বললেন : কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী (বীর-উত্তম) সংলাপে বলেন, পত্রিকায় দেখেছি সংলাপে বিএনপির জন্য দুই ঘণ্টা, আওয়ামী লীগের জন্য দুই ঘণ্টা বরাদ্দ। আর বাকিদের জন্য বরাদ্দ এক ঘণ্টা। এটা যদি আপনাদের সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে, তবে আপনারা আপনাদের নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। বর্তমানে যারা ভারত শাসন করে, সেই বিজেপি যখন দল গঠন করে, তখন সংসদে মাত্র দুটি আসন পেয়েছিল। আজকে সেই দল প্রায় ৩০০ আসনের অধিকারী। সেই জন্য নির্বাচন কমিশন যদি আগে থেকেই বড় দল, ছোট দল এটা যদি বিভাজন করে, তাহলে শুধু ভোটারদের প্রতি কেন, আমাদের প্রতিও একটা বিমাতাসুলভ আচরণ হয়। সব দলকে এক মাপে বিচার করুন। ক্ষমতা আজ আছে, কাল নেই। ক্ষমতা খুবই ক্ষণস্থায়ী। ’
তিনি বলেন, ‘আগের সিইসির মতো আপনাকেও বলতে শুনছি, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন নষ্ট হবে, গণতন্ত্র নষ্ট হবে। আমরা বলব, এখানে বিএনপি কিছু না, আওয়ামী লীগও কিছু না, এখানে সব কিছু হচ্ছে জনগণ এবং দেশের ভোটার। সে জন্য নির্বিবাদে ভোটারদের ভোটে অংশগ্রহণ প্রয়োজন। আপনি যথার্থই বলেছেন, মানুষের উৎসাহ কমে গেছে। ’
এ জাতীয় আরো খবর..