আদালতের নোটিশ জারিকারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বিচারের হুমকির ঘটনায় নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পার পেলেন ফরিদপুরের বোয়ালমারীর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম। তাকে সতর্ক করে আদালত অবমানার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
সোমবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ইউএনও রেজাউল করিমের সঙ্গে অফিস সহকারী উকিল হোসেনকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
তিনিও নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আদালত অবমাননার দায় থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন।
ইউএনওর পক্ষে আদালতে ছিলেন আইনজীবী শফিক আহমেদ ও মাহবুব শফিক। অফিস সহকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোজাম্মেল হক। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় আদালত ইউএনও ও তার অফিস সহকারী উকিল হোসেনকে আদালত অবমাননার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতে বিচারাধীন একটি মামলার নোটিশ নিয়ে গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে ফরিদপুর জেলা জজ আদালতের নেজারত শাখার জারিকারক কামাল হোসেন ও মেহেদী হাসান বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে যান।
অফিস সহকারী উকিল হোসেনকে নোটিশটি গ্রহণ করার অনুরোধ করলেও উকিল হোসেন নোটিশটি গ্রহণ না করে তাদের অপেক্ষায় রাখেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও যখন কেউ নোটিশ গ্রহণ করছিল না, তখন জারিকারকরা বিষয়টি আদালতকে জানাবেন বলে নোটিশ নিয়ে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন। তখন অফিস সহকারী উকিল হোসেনের সঙ্গে এ নিয়ে দুই জারিকারকের সঙ্গে তর্ক শুরু করেন। এক পর্যায়ে উকিল হোসেন নোটিশটি বুঝে নিয়ে বিষয়টি ইউএনও মো. রেজাউল করিমকে জানান। সঙ্গে সঙ্গে দুই জারিকারককে নিজের অফিসকক্ষে ডেকে নিয়ে দরজা আটকে দেন তিনি।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা এসংক্রান্ত খবরে জানা যায়, অফিস স্টাফদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে ইউএনও জারিকারকদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাজা দেওয়ার হুমকি দেন। এ সময় নাকি ইউএনও জারিকারকদের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছিলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিতেও নির্দেশ দিয়েছিলেন তাদের। শেষ পর্যন্ত মুচলেকা দিলে দুই জারিকারককে মুক্তি দেন ইউএনও।
এ ঘটনা সমন জারিকারী বিচারক ও ফরিদপুরের জেলা ও দায়রা জজকে লিখিতভাবে জানালে ফরিদপুরের বোয়ালমারীর জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতের বিচারক ইউএনওর কাছে এ ঘটনার ব্যাখ্যা চান। পরে ঘটনার বিশদ বর্ণনা দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে চিঠি লেখেন ফরিদপুরের জেলা ও দায়রা জজ। সে চিঠি প্রধান বিচারপতির কাছে যায়। প্রধান বিচারপতি বিষয়টি হাইকোর্টে উপস্থাপন করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠান। এরপর গত ৭ জুন বিষয়টি হাইকোর্টে উঠলে ইউএনও মো. রেজাউল করিম ও অফিস সহকারী উকিল হোসেনকে তলব করেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, জানতে কারণ দর্শাতে বলা হয়।
গত ২১ জুন তলবে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে নিঃশর্ত ক্ষমা চান বোয়ালমারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিম ও তার কার্যাালয়ের অফিস সহকারী উকিল হোসেন। এরপর বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ কর্মকর্তার প্রতি উষ্মা প্রকাশ করার পাশাপাশি তাদের ভর্ৎসনা করেন।
পরে আদালত ইউএনও মো. রেজাউল করিম ও অফিস নাজির উকিল হেসেনকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে বিষয়টি আদেশের জন্য রাখেন। সেই ধারাবাহিকতায় ইউএনও ও অফিস সহকারীকে আদালত অবমাননার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে আদেশ দিলেন।
এ জাতীয় আরো খবর..