×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৭-২০
  • ৭৬ বার পঠিত
ময়মনসিংহের ত্রিশালের সড়কে ট্রাকচাপায় মৃত্যুর আগে এক নারীর জন্ম দেওয়া নবজাতককে আপাতত পাঁচ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সড়ক পরিবহন আইনের ৫৪ ধারার অধীনে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডকে এ টাকা দিতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া নবজাতকটির দেখভাল ও সুরক্ষায় সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ কমিটিকে আগামী তিন মাসের মধ্যে নবজাতকটির সার্বিক বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

নবজাতকটির জন্য ক্ষতিপূরণ চাওয়া রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানির পর মঙ্গলবার রুলসহ এ আদেশ দেন বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রেজাউল হক।

গত ১৬ জুলাই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুর্ঘটনার সময় জন্ম নেওয়া নবজাতক ক্ষতিপূরণ দিতে এবং প্রয়োজনীয়তাসহ নবজাতকটির সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজকল্যাণসচিব, সড়ক পরিবহন সচিব, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), সড়ক আইনের অধীনে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও দুর্ঘটনার ওই ট্রাক মালিককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নবজাতকটির আইনি অভিভাবক বা অভিভাবকদের আপাতত ১৫ লাখ টাকা দিতে হবে ট্রাস্টি বোর্ডকে। এ ছাড়া নবজাতকটির যথাযথ চিকিৎসাও চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ৫২ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো মোটরযান হইতে উদ্ভূত দুর্ঘটনার ফলে কোনো ব্যক্তি আঘাতপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হইলে বা আঘাতপ্রাপ্ত হইয়া মৃত্যুবরণ করিলে, উক্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা, ক্ষেত্রমত, তাহার উত্তরাধিকারীগণের পক্ষে মনোনীত ব্যক্তি ধারা ৫৩ এর অধীন গঠিত আর্থিক সহায়তা তহবিল হইতে ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ বা, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, চিকিৎসার খরচ প্রাপ্য হইবেন। ’ আর আইনটির ৫৩(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘৫২ ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, আঘাতপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির অনুকূলে বা, ক্ষেত্রমত, মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের লক্ষ্যে আর্থিক সহায়তা তহবিল নামে একটি তহবিল গঠিত হইবে। ’

গত ১৬ জুলাই অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রত্না আক্তারকে চিকিৎসক দেখানোর জন্য ত্রিশাল উপজেলার রাইমনি গ্রামের ফকিরবাড়ির জাহাঙ্গীর আলম সদরে এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে ছয় বছরের মেয়ে সানজিদাও ছিল।

সদরের খান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী একটি ট্রাক তাদের চাপা দেয়। এতে তিনজনই ছিটকে রাস্তায় পড়ে যায়। এ অবস্থায় রাস্তায়ই সন্তানের জন্ম দেন রত্না। এর পরই তিনি মারা যান। দুর্ঘটনাস্থলেই স্বামী জাহাঙ্গীর ও মেয়ে সানজিদারও মত্যু হয়।

এ দুর্ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত খবর পরদিন অর্থাৎ গত রবিবার আদালতের নজরে এনে দুর্ঘটনায় জন্ম নেওয়া নবজাতকটির ক্ষতিপূরণের জন্য স্বতঃপ্রণোদিত আদেশ চান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন। কিন্তু আদেশ না দিয়ে আইনজীবীকে আবেদন নিয়ে আসতে বলেন। পরে গত সোমবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট আবেদন করা হয়। রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কানিজ ফাতেমা।

এদিকে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ওই নবজাতককে গতকাল সোমবার রাতে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আর ঢাকার সাভার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে চাপা দেওয়া ট্রাকের চালক রাজু আহমেদকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat