মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে শ্রমিক-কর্মচারীদের মামলা প্রত্যাহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউসুফ আলী। একটি ইংরেজি পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে আসা এসংক্রান্ত প্রতিবেদনকে তিনি ‘গুজব’, ‘সম্পূর্ণরূপে অসত্য’, ‘বানোয়াট’ এবং ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করছেন।
কম্পানির মুনাফার ৫ শতাংশ ‘শ্রমিকের অংশগ্রহণ তহবিল গঠন’ করে ২০০৬ সাল থেকে লভ্যাংশ শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন করার কথা; কিন্তু সেই লভ্যাংশ শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন না করায় শ্রম আদালত ও হাইকোর্টে মামলা করেন তারা। আর গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আবেদন করে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন।
আইন অনুযায়ী পাওনা টাকা পরিশোধ করা হবে। সম্প্রতি আদালতের বাইরে এমন সমঝোতার পর মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ছাঁটাই, পাওনা নিয়ে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের করা শতাধিক মামলা প্রত্যাহার করা হয়।
এর মধ্যে একটি ইংরেজি দৈনিকের অনলাইন সংস্করণে খবর আসে শ্রমিক-কর্মচারীদের আইনজীবী ১২ কোটি টাকার বিনিময়ে গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে সমঝোতা করেছেন। তারই অংশ হিসেবে আদালতের বাইরে সমঝোতা করে শ্রমিক-কর্মচারীদের মামলা প্রত্যাহারে বাধ্য করেছেন।
প্রতিবেদনটি নজরে আসার পর গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ বিস্ময় প্রকাশ করে শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ সংক্রান্ত প্রতিবেদন চান আইনজীবীদের কাছে। প্রতিষ্ঠানটির কোন কর্মচারীকে কত টাকা দেওয়া হয়েছে তার তালিকা এবং এসংক্রান্ত নথিসহ আগামী ২ আগস্টের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
আদালত সেদিন আইনজীবীদের সতর্ক করে বলেছেন, ‘আদালত ব্যবহার করে কোনো অনিয়ম করা চলবে না। সব কিছু আইন অনুযায়ী না হলে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। আমি আদালতের মর্যাদা এবং আইনজীবীদের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাই না। শুধু বাংলাদেশেই নয়, এই উপমহাদেশে এমন কোনো আইনজীবী নেই, যিনি একটি মামলার জন্য ১২ কোটি টাকা ফি নিতে পারেন।
আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় রবিবার দুপুরে হঠাৎ গণমাধ্যমের সামনে এসে নিজের বক্তব্য তুলে ধরার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন আইনজীবী ইউসুফ আলী। সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমাকে নিয়ে ১২ কোটি টাকার যে গল্প বানানো হয়েছে, তা সম্পূর্ণ আষাঢ়ে গল্প ছাড়া আর কিছু না। আমি সকালে গিয়ে দেখেছি, আমার সবগুলো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। আমার ব্যক্তিগত তিনটি অ্যাকাউন্ট আর আমার পার্টনারের দুইটা আর আমার চেম্বারের একটা অ্যাকাউন্ট। সবগুলো অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। ’
আইনজীবী ইউসুফ আলী বলেন, ‘লিখিত চুক্তির শর্ত অনুযায়ী গ্রামীণ টেলিকম সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্টে ৪৩৭ কোটি টাকা দেওয়ার পর প্রত্যেক শ্রমিক-কর্মচারী ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে জবানবন্দি দিয়ে তাদের মামলা প্রত্যাহার করে নেন। একইভাবে তাদের অনুরোধে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন সব রিট মামলা, আদালত অবমাননার মামলা এবং গ্রামীণ টেলিকম অবসায়নের মামলা প্রত্যাহার করি। ’
তিনি আরো বলেন, ‘এসব মামলা প্রত্যাহারের পর গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীবৃন্দ সন্তুষ্ট হয়ে সম্পূর্ণ স্বচ্ছভাবে অ্যাকাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে আমাদের ফিস প্রদান করেছেন। ’
আইনজীবীর ফিস বাবাদ শ্রমিক-কর্মচারীরা মোট কত টাকা দিয়েছেন, জানতে চাইলে সে প্রশ্নের জবাব দেননি আইনজীবী ইউসুফ আলী।
এ জাতীয় আরো খবর..