'হলি আর্টিজানের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর যদি আমরা ঘুরে দাঁড়াতে না পারতাম তাহলে আজ যে পদ্মা সেতু দেখছি, যে মেট্রো রেল দেখছি কোনো কিছুই বাস্তবায়ন করতে পারতাম না। তখন হয়তো দেশের চিত্রটা অন্য রকম হতো। নিরাপত্তাজনিত কারণে বিদেশি প্রকৌশলীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে আসতে চাইতেন না। দেশে জঙ্গিবাদ অনেকটা নিয়ন্ত্রণের কারণে এখন আর বড় হামলার সক্ষমতা নেই তাদের'।
শুক্রবার সকালে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ছয় বছর উপলক্ষে রাজধানীর গুলশানে ‘দীপ্ত শপথ’ ভাস্কর্যে শহীদ পুলিশ সদস্যদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর এ কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশের অবদানের কথা তুলে ধরে ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিস্তার আফগানফেরত মুজাহিদদের হাত ধরে। অর্থাৎ হরকাতুল জিহাদের ও জেএমবির উত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে জঙ্গিবাদের শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ইরাকে যখন আইএসের উৎপাত শুরু হয় তখন বাংলাদেশের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য বাংলাদেশের কিছু মানুষ তামিম চৌধুরীর নেতৃত্বে হলি আর্টিজানের হামলা করে।
এরপর চট্টগ্রামের মৌলভীবাজার ও খুলনা বিভাগের বিভিন্ন স্থানসহ দেশের অনেক জায়গায় জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এরপর জঙ্গি ও উগ্রবাদ দমনে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সেই সময়কার জঙ্গিদের আস্তানা তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। জঙ্গিবাদ দমনে বিভিন্ন সময় তারা বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করছে। এই সফলতার পুরো ভাগীদার বাংলাদেশ। তবে আমার ভালো লাগছে যে এসবের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম দিয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকতে পেরেছে যুক্তরাষ্ট্র।
হলি আর্টিজান পরবর্তী সময়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে পাওয়ার কথা জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, হলি আর্টিজানের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর থেকেই অ্যান্টি-টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ), আমাদের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটসহ (সিটিটিসি) বিভিন্ন মেট্রো ও জেলা পুলিশে সিটিসির মতো একটি করে নতুন ইউনিট খোলা হয়। এসব ইউনিটের অধিকাংশ সদস্যই ইউএস সরকারের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন। এ ছাড়া ইউএস সরকারের পক্ষ থেকে অস্ত্র ও প্রটেকশনের রিক্রুটমেন্ট দেয় বাংলাদেশকে। এসব সরঞ্জাম পাওয়ার পর চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে আমাদের সিলেট, মৌলভীবাজার এমনকি খুলনা বিভাগেরও কয়েকটি জেলাসহ যেখানেই আমরা খবর পেয়েছি পুরো জঙ্গি নেটওয়ার্কে তখন যারা ছিল আমরা তছনছ করে দিয়েছি।
তবে জঙ্গি দমনে আমরা আত্মতৃপ্তিতে ভুগি না জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, কারণ এখনো জঙ্গি তৎপরতা মাঝে মাঝে চোখে পড়ছে। জঙ্গিদের সোশ্যাল মিডিয়ায় একটিভিটিসহ সব বিষয়ে আমরা মনিটরিং করছি।
দেশে এখনো জঙ্গি তৎপরতা রয়েছে জানিয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, এখনো কিন্তু জঙ্গিদের তৎপরতা মাঝে মাঝে চোখে পড়ছে। আমরা তাদের সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সব কিছু মনিটর করছি।
এ সময় ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, র্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী অব্দুল্লাহ আল মামুন, নিহত পুলিশ কর্মকর্তা সালাহউদ্দীন খানের পরিবারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ জাতীয় আরো খবর..