×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৬-২৭
  • ৭২ বার পঠিত
পদ্মা সেতুর বিরোধিতাকারীরা উন্নয়নবিরোদী মন্তব্য করে হাইকোর্ট বলেছেন, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যা গল্প সৃষ্টির নেপথ্যের প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করা নিয়ে পাঁচ বছর আগে স্বপ্রণোদিত রুলটি গতকাল রবিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়।

আজ সোমবার সেটি শুনানির জন্য উঠলে আদালত বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের জাতীয় সম্পদ। এটি জাতীয় উন্নয়নের প্রতীক।

আমাদের অহংকার। জাতীয় স্বার্থেই পদ্মা সেতু। এর বিরোধিতাকারীরা উন্নয়নের বিরুদ্ধে। এ ধরনের জাতীয় স্বার্থ ও উন্নয়নের বিরোধিতাকারীরা দেশ-জাতির শত্রু। তাদের খুঁজে বের করতে হবে।
এরপর আদালত আগামী মঙ্গলবার প্রয়োজনীয় আদেশের জন্য রাখেন। তবে তার আগে অ্যাটর্নি জেনারেল, দুর্নীতি দমন কমিশন -দুদক ও সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর বক্তব্য শুনবেন বলে জানিয়েছেন আদালত। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। আর দুদকের পক্ষে আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের জন্যম চুক্তি করেও পরে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে প্রথমে তা স্থগিত এবং পরে বাতিল করে। এরপর নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ তদারকির পাঁচ কোটি ডলারের কাজ পেতে এসএনসি-লাভালিনের কর্মীরা ২০১০ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে মামলা হয়েছিল কানাডার আদালতে। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে কানাডার আদালত ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ওই মামলার তিন আসামিকে খালাস দেন। রায়ে কানাডার আদালত বলেন, এই মামলায় প্রমাণ হিসেবে যেগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলো ‘অনুমানভিত্তিক, গাল-গল্প ও গুজবের বেশি কিছু নয়’।

এ রায়ের আগে দুর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগে বাধ্য হন সেই সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন। অভিযোগ ছিল সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধেও। সে সময় সেতু সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে দুর্নীতির মামলায় কারাগারেও যেতে হয়। তবে তদন্তের পর তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়ায় যায়নি বলে জানায় দুদক। পরে ২০১৪ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশে পদ্মা দুর্নীতি মামলার অবসান ঘটে। সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ সাত আসামির সবাইকে অব্যাহতি দেন আদালত। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেছিলেন, হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাং কের অর্থায়ন আটকেছিলেন নোবেলজয়ী বাংলাদেশি মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাতে বাংলাদেশের এক সম্পাদকেরও ভূমিকা ছিল।

এরপরই দেশের বিভিন্ন দৈনিক পদ্মা সেতু ষড়যন্ত্রে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে জড়িয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেসব প্রতিবেদন নজরে আসার পর ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে রুলসহ আদেশ দেন। ১৯৫৬ সালের ‘ইনকোয়ারি অ্যাক্টের ৩ ধারা এবং অন্যান্য আইন অনুযায়ী পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যা গল্প সৃষ্টির নেপথ্যের প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে একটি তদন্ত কমিশন গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, জানতে রুল জারি করেন। ‘প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের’ কেন বিচারের মুখোমুখী করা হবে না- তাও জানতে চাওয়া হয় রুলে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, যোগযোগ সচিব, দুদক চেয়ারম্যান ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এ ছাড়া কমিটি বা কমিশন গঠনে কী উদ্যোষগ নেওয়া হয়েছে- তা জানিয়ে ৩০ দিনের মধ্যেয় প্রতিবেদন দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দেন আদালত।

এর পর যা হলো

হাইকোর্টের এ আদেশের পর মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে কয়েক দফা বৈঠক করে। তারই এক পর্যায়য়ে ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ মন্ত্রী পরিষদ বিভাগকে চিঠি দিয়ে জানায় হাইকোর্টের জারি করা রুল সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য বা নথি তাদের কাছে নেই।

তাছাড়া বিধান অনুযায়ী কমিশন গঠন করতে হলে বিষয়টি মন্ত্রীসভায় তোলার প্রয়োজন আছে। সেতু বিভাগ এও বলে যে, ‘দ্য কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬ বিষয়ক আইনটি কোন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আইনে তার উল্লেখ নেই।

পরে সে সময়ের মন্ত্রীপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সভাপতিত্বে ওই বছরের ৭ মে অনুষ্ঠিত আরেক সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, তদন্ত কমিশন গঠনের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব চাওয়া হবে এবং আইন মন্ত্রণালয় প্রস্তাব পাঠালে তার সারসংক্ষেপ মন্ত্রীসভায় উপস্থাপন করা হবে। উপস্থাপনের পর মন্ত্রীসভা সেটিতে অনুমোদন দিলে আইন মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিশন গঠনের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।

এরপর মন্ত্রীপরিষদ প্রস্তাব চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিলে ২০১৭ সালের ২৭ জুলাই জবাবে আইন মন্ত্রলায় জানায়, কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্টের বিধান অনুযায়ী যেকোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগ তদন্ত কমিশন গঠন করতে পারে। এমনকি গঠিত কমিশনের ক্ষমতা ও কর্মপরিধিও নির্ধারণ করতে পারে। সুতরাং তদন্তের বিষয়টি যে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কর্মপরিধিভুক্ত সে মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বিষয় ও প্রকৃতি বিবেচনা করে এক বা একাধিক সদস্য নিয়োগ করতে পারে।

ইনকোয়ারি অ্যাক্টের ৪ ও ৫ ধারা উল্লেখ করে আইন মন্ত্রণালয়ের সে চিঠিতে আরো বলা হয়, তদন্ত কমিশন গঠন হলে সে কমিশন দেওয়ানি আদালত হিসেবে গণ্য হবে এবং দেওয়ানি আদালতের মত ক্ষমতাও প্রয়োগ করতে পারবে। এক্ষেত্রে কমিশনে বিচার বিভাগীয় কোনো কর্মকর্তাকে সভাপতি বা সদস্য হিসেবে নিয়োগের প্রয়োজন হলে তখন সেটি আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা তৈরি হবে। যে কারণে এ পর্যারয়ে বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিধিভুক্ত নয়।

এরপর মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ ও আইন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আরও কয়েক দফা চিঠি চালাচালিতে বিষয়টি তাদের কর্মপরিধিভুক্ত নয় বলে জানায় আইন মন্ত্রণালয়। পরে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ তদন্ত কমিশন গঠনের উদ্যোগ বা পদক্ষেপ নিতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগকে চিঠি দেয়। ২০০৭ সালের ২ নভেম্বর এ চিঠির জবাব দেয় সেতু বিভাগ। সেখানে বলা হয়, তদন্ত কমিশন গঠন করা হলে ওই কমিশনে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক (করিগরী) মো. কামরুজ্জামানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

এরপর পদ্মা সেতুর ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে ‘তদন্ত কমিশন’ গঠনের আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। এর মধ্যে স্বপ্রণোদিত রুল জারি করা আদালতের এখতিয়ার পরিবর্তন, করোনা ভাইরাস মহামারীসহ নানা কারণে রুলটি এখতিয়ার সম্পন্ন অন্য কোনো বেঞ্চে আর উঠায়নি রাষ্ট্রপক্ষ। গত শনিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধনের প্রাক্কালে বিষয়টি আলোচনায় আসে। এ প্রেক্ষাপটে রুল জারির পাঁচ বছর তিন মাস পর ফের আদালতে উঠলো বিষয়টি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat