উদ্ধার সরঞ্জাম আসতে দেরি হচ্ছে। নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগও করা যাচ্ছে না কারও সঙ্গে। বাধ্য হয়ে ভূমিকম্পে হতাহতদের খোঁজে খালি হাতেই ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয়রা।
বৃহস্পতিবার আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পাকতিকা প্রদেশের গায়ান জেলায়। অধিকাংশ বাড়িঘরই মাটির তৈরি। ধ্বংস হয়ে যাওয়া এসব বাড়িঘরের নিচ থেকে উদ্ধারে কোনো সরঞ্জাম না থাকায় স্থানীয়রা খালি হাতেই মাটি সরানোর কাজ করছেন।
বুধবার ৫ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে আফগানিস্তানে। এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে এবং তা দেড় হাজার ছাড়িয়ে যাবে। ভূমিকম্পের কারণে ধ্বংসস্তূপ এবং সাম্প্রতিক প্রবল বৃষ্টিপাত ও চলমান বন্যার কারণে ভূমিধসে খোস্ত ও পাকতিকা প্রদেশ যাওয়ার সড়কগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে সেখানে সরকারি উদ্ধারকর্মীদের পৌঁছানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। প্রদেশের বাসিন্দা আতিকুল্লাহ বাহরাম আলজাজিরাকে জানিয়েছেন, গায়ানে ৩০টিরও বেশি গ্রাম সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমি এমন কিছু পরিবারকে দেখেছি যারা একজন শিশু বা বৃদ্ধ ছাড়া সবাইকে হারিয়েছে। সেখানে ছয় বা সাতটি পরিবার ছিল যারা তাদের সব সদস্যকে হারিয়েছে।’
আফগানিস্তানে জাতিসংঘের মানবিক সহযোগিতাবিষয়ক সমন্বয়ক রমিজ আলাকবারভ সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের ধারণা, সেখানে প্রায় দুই হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি হবে। মৃত্যুশোকে কাতর আফগানরা এখন তাকিয়ে আছে বিদেশি সাহায্যের দিকে। সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে দেশটির তালেবান সরকারও। ইতোমধ্যেই সহায়তার হাত বাড়িয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ। চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর তার মধ্যে অন্যতম। আফগানিস্তানে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেছেন, তারা আফগানিস্তানকে মানবিক সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া বিপর্যস্ত আফগানিস্তানকে সহায়তাদানের বিষয়টিকে বিবেচনা করছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, জাপান মন্ত্রিসভার ডেপুটি চিফ সেক্রেটারি সেইজি কিহারা এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, স্থানীয় চাহিদাগুলো বুঝতে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছে সরকার। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১০ লাখ ডলার মানবিক সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতিও ভয়াবহ আকারে রূপ নিয়েছে দেশটিতে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার দেশটির সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজ জানিয়েছে, আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের ১৮টিতেই দেখা দিয়েছে আকস্মিক বন্যা। এ বন্যায় সে দেশে এখন পর্যন্ত ৪০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। বন্যাকবলিত প্রদেশগুলো হলো-কুনার, নানগারহার, নুরিস্তান, লাঘমান, পানশির, পারওয়ান, কাবুল, কাপিসা, ময়দান ওয়ার্দাক, বামিয়ান, গজনি, লোগার, সামানগান, সার-ই-পুল, তাখার, পাকতিয়া ও দাইকুন্দি।কুন্দুজের অধিবাসী আহমাদুল্লাহ তোলো নিউজকে বলেন, কুন্দুজের শত শত একর জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে এবং এখনো বন্যা পরিস্থিতির দৃশ্যমান কোনো উন্নতি হয়নি।
এ জাতীয় আরো খবর..