×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৬-২৩
  • ১২ বার পঠিত
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে মা-মেয়ের গলা কেটে হত্যার মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশের দুই আসামিকে খালাস ও এক আসামিকে সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। খালাস পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন, সোনাদ্দি ওরফে সোনারুদ্দি ও মো. ইসমাইল হোসেন বাবু। আর মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে আসামি তরিকুল ইসলামকে।   

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সোনারুদ্দি ও ইসমাইলের আপিল গ্রহণ ও তরিকুলের আপিল খারিজ করে আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ।

আদালতে সোনারুদ্দির আপিলে শুনানি করেন আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা। ইসমাইলের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান। আর তরিকুলের আপিলে শুনানি করেন আইনজীবী এস এম বকস কল্লোল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ।  
আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা কালের কণ্ঠকে বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ অপরাধ প্রমাণ করতে না পারায় দুই জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এ মামলায় খালাস পাওয়া দুজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ছিল না। যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া তরিকুলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ দুজনের নাম আসলেও ঘটনা বা অপরাধের পরিপ্রেক্ষিত প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য-প্রমাণ যথাযথ ছিল না। এসব বিবেচনায় তাদের খালাস দেওয়া হয়েছে বলে মনে করি। ”

অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, “এ হত্যাণ্ড সম্পর্কে শুধুমাত্র তরিকুলের স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি আছে। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে কনডেম সেলে থাকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই হয়তো মৃত্যুদণ্ড থেকে তাকে যাবজ্জীবন দিয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ রায়ে বের হলে ব্যাখ্যা জানা যাবে। ”

ষোলো বছর আগে ২০০৬ সালের ২০ অক্টোবর সন্ধ্যায় ইফতারের পর রাজশাহীর গৌদাগাড়ীর ধুয়াপাড়া যৌবন গ্রামে বাড়িতে ঢুকে প্রবাসী মো. বজলুর রহমানের স্ত্রী মিলিয়ারা খাতুন ওরফে রোকসানা ওরফে মিলু (৩০) ও তার মেয়ে পারভীন ওরফে সাবনুরকে (৯) গলা কেটে হত্যা করা হয়। পরদিন মিলির বাবা রফিকুল ইসলাম গোদাগাড়ী থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করেন।  

এজাহারে বলা হয়, হত্যাকাণ্ডের সময় মিলির ছেলে মিনাল আলী তারাবীর নামাজ পড়তে গিয়েছিল। নামাজ থেকে এসে পঁচিল ঘেরা বাড়ির গেইট খোলার জন্য মা-বোনকে ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে প্রতিবেশিদের খবর দেন। প্রতিবেশিরা বাড়ির পাঁচিল টপকে ভেতরে গিয়ে মা-মেয়ের মস্তক বিচ্ছিন্ন লাশ দেখতে পান। পরে গোয়াল ঘরে ও টয়লেটে মা-মেয়ের ছিন্ন মস্তক পাওয়া যায়।  

রোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পর ২০০৮ সালের ২৩ জুলাই এ মামলায় রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মেসবাউদ্দৌলা রায় দেন। রায়ে ধুয়াপাড়ার সোনারুদ্দি, মো. ইসলামইল হোসেন বাবু, তরিকুল ইসলাম ভুতা ও আসমি মো. মোক্তারকে মৃত্যুদণ্ড দেন। তরিকুল ওই এলাকার কুখ্যাত এসলাম ডাকাতের ছেলে। আসামি মোক্তার মামলার শুরু থেকেই পলাতক।  

বিচারিক আদালতের রায়ের পর মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি তিন আসামি হাইকোর্টে আপিল ও জেল আপিল করেন। সে সবের শুনানির পর বিচারপতি শহিদুল ইসলাম ও বিচারপতি আবদুর রবের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১৪ সালের ১৩ মার্চ রায় দেন। রায়ে তিন আসামির আপিল খারিজ করায় বিচারিক আদালতের মৃত্যুদণ্ডাদেশই বহাল থাকে।  

হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের অনুমতি দেয়। আর পলাতক মোক্তারকে গ্রেপ্তার করে আদেশ কার্যকর করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেন বিচারিক আদালতের রায়ের পর থেকে কন্ডেম সেলে থাকা তিন আসামি। তাদের আপিল শুনানির পরই চূড়ান্ত রায় দিলেন আপিল বিভাগ।  

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat