জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা বলেছেন, করোনা মোকাবেলাসহ মেগাপ্রকল্পগুলোর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে। আর সরকারের এই অভূতপূর্ব উন্নয়নে দিশাহারা একটি মহল মিথ্যাচারে লিপ্ত। তারা নানামুখী ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। এই মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।
বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্যানেল সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম।
আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সারা দেশে উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। তাই দিশাহারা হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারে লিপ্ত একটি মহল। এ সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। যারা ষড়যন্ত্র ও হত্যার রাজনীতি করে তাদের প্রত্যাখ্যান করে উন্নয়নের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। ফ্রান্সের জন্য আইফেল টাওয়ার যেমন গর্বের, স্ট্যাচু অব লিবার্টি যেমন আমেরিকানদের জন্য গর্বের, চীনের জনগণের জন্য যেমন গ্রেট ওয়াল গর্বের তেমনি বাংলাদেশের জন্য পদ্মা সেতু গর্বের বস্তু। তিনি এ সময় বিএনপির কর্মকাণ্ডের সমালোচনাও করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, '২০০১ সালে বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস করে, শিল্প-কারখানায় অগ্নিসংযোগ করেছে, এটি কিসের আলামত? প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের সেরা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইউনিট নির্মাণ করেছেন। করোনার সময় ১২০টি হাসপাতালে অক্সিজেন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। আইসিইউ বেড দুই হাজারের মতো করা হয়েছে। দেশের ৭০ শতাংশ মানুষকে ২৮ কোটি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী সব সময় আমাদের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেওয়ায় সারা বিশ্বে আমাদের দেশ পঞ্চম ও এশিয়াতে প্রথম স্থান দখল করেছে। '
রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরেছিলেন বলেই আজকের এই উন্নয়ন। তিনি দেশে ফিরেছিলেন বলেই জাতির পিতা হত্যাকাণ্ড ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে।
তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরি। কিন্তু বিগত দিনে রেলপথ ও নৌপথকে অবজ্ঞা করা হয়েছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে রেলপথ উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে। পদ্মা সেতুর সঙ্গে রেলপথ যুক্ত করা হয়েছে। নৌ, সড়ক ও বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সরকারি দলের আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'জননেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ ও সরকারের হাল ধরার কারণে বাংলদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। জাতীয় বাজেটের আকার বাড়ছে। বিভিন্ন খাতে বরাদ্দও বাড়ছে। তবে করোনাকালে যে সফলতা দেখিয়েছি, এই সফলতা ধরে রাখতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। '
তিনি বলেন, এখন আগের মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাজেট নিয়ে আলোচনা হয় না। আলোচনার প্রধান বিষয় পদ্মা সেতু। এই সেতুর কারণে দেশের অর্থনীতির ব্যাপক উন্নতির পাশাপাশি সারা বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুর আলী বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী প্রণোদনা দেওয়ার কারণে করোনাকালে সংকট মোকাবেলা করে বিমান লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল উদ্বোধনের পর বিমানবন্দর আধুনিকায়নের কাজে শেষ হবে। আগামী বছরে প্রধানমন্ত্রী তা উদ্বোধন করতে পারবেন বলে আশা করছি। '
তিনি আরো বলেন, পর্যটনশিল্পের বিকাশে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতুকে ঘিরে নতুন পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনসহ অন্যান্য এলাকায় পর্যটকদের আকর্ষণে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
বিএনপির গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, 'আমরা প্রতিনিয়ত উন্নয়ন ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির কথা শুনছি। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে অবজ্ঞা করে সরকার শুধু উন্নয়নকে সামনে নিয়ে আসছে। শ্রীলঙ্কাতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে উন্নয়ন ভাবনা স্থিতিশীল নয়। তাই সংসদে অর্থমন্ত্রীর দেওয়া বাজেট জনকল্যাণ ও জনগণের জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। এই বাজেট বড় বড় ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেট সদস্যদের সুবিধা দেবে। '
তিনি বলেন, বাংলাদেশ কঠিন পরিস্থিতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। কম প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ রাখতে হবে। বিলাসী পণ্য আমদানি এক বছরের জন্য বন্ধ রাখতে হবে। ডলারের ওপর চাপ কমাতে হবে। দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার সুযোগ প্রদানকে আইনের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেন তিনি।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নাসরিন জাহান রতনা। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর এই সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ করোনা মহামারিকালে যেমন বিপুলসংখ্যক মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে, তেমনি এ সময়ে পাল্লা দিয়ে কোটিপতির সংখ্যাও বেড়েছে। অর্থমন্ত্রী দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার রোধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। অথচ এখন যারা চুরি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে তাদের আবার দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জাসদের শিরীন আখতার বলেন, 'সারা দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও দেশে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বাড়ছে। ধনী আরো ধনী হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক শক্তি ষড়যন্ত্র করছে। দুর্নীতি বন্ধে সরকারের ঘোষণা সত্ত্বেও দুর্নীতি চলছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্নীতি মোকাবেলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। '
এ বি তাজুল ইসলাম বলেন, 'করোনাকালে পৃথিবীর অনেক দেশে দুর্ভিক্ষ অবস্থা বিরাজ করছে। কিন্তু বাংলাদেশে সেই পরিস্থিতি হতে দেননি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। শুধু পদ্মা সেতুর মতো মেগাপ্রকল্প নয়, দুর্যোগে মানুষের পাশি দাঁড়িয়েছে বর্তমান সরকার। অনেকেই উৎসবের আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। কিন্তু আমরা বলতে চাই, আমরা উৎসবও করব, আবার মানুষের পাশেও দাঁড়াব। '
আওয়ামী লীগের নজরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে প্রতিটি খাতে লুটপাট চালিয়ে দেশটাকে লণ্ডভণ্ড করে যায়। সেই দেশকে এগিয়ে উন্নয়নশীল কাতারে নিয়ে এসেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা মহামারিকালে সরকার বিশাল অঙ্কের টাকা ভর্তুকি দিয়ে একদিকে দেশের মানুষের জীবনকে রক্ষা করেছে, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছে। অথচ নানাভাবে মিথ্যাচার চালিয়ে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।
এ জাতীয় আরো খবর..