সিলেটে দক্ষিণ সুরমার তীরবর্তী অঞ্চলে আশ্রয়কেন্দ্র শাহ পরান সরকারি কলেজ। এই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন গৃহবধূ রোজিনা আক্তার। রোজিনার দুই সন্তানের মধ্যে ছোট মাইশার বয়স এক বছর দুই মাস, আর বড় সন্তান মিম। মিমের বয়স দুই বছর।
তারা ঠিকমতো দুধ খেতে পারছে না। প্রতিদিন কিনে খাওয়াতে হচ্ছে। দুজনের ভাগ্যে জুটেছে ১০ টাকার গুঁড়া দুধ।
সন্তানকে খাওয়াতে না পারার নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে রোজিনা আক্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বন্যার আগে আমরা তিন বেলা ভাতসহ এটাসেটা খেতাম। ভাত খেলে বাচ্চাটাও ঠিকমতো দুধ পায়। কিন্তু এখন তো এক বেলা ভাত খাই, আর দুই বেলা চিড়া দিয়েই চলে যায়। টাকার অভাবে এখন দুধ কিনতে পারছি না। এদিক-সেদিক করে ১০ টাকার প্যাকেটের দুধ কিনে খাওয়াতে হচ্ছে দুজনকে। ’
রোজিনা আরো জানান, বাচ্চারা ছোট। তারা বাড়িতে থাকতে আগে সুজি, কলা খাওয়ানো হতো। কিন্তু এখন তা সম্ভব হচ্ছে না।
স্বামী দিনমজুর উল্লেখ করে রোজিনা বলেন, ‘আমরা দিনে আনি দিনে খাই। বন্যায় চার দিন ধরে কাজ বন্ধ। বাচ্চার দুধ খাওয়ার টাকা কোথায় পাব?’
গতকাল সোমবার কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, ছোট শিশুদের খাওয়া নিয়ে সবচেয়ে ভোগান্তি। মায়েরা পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছেন না বলে শিশুরা বুকের দুধ পাচ্ছে না। আবার টাকা দিয়ে গুঁড়া দুধ কিনবেন, এমন সামর্থ্যও নেই অনেকের।
নুরবানু বেগম তাঁর নাতি জুবায়েরকে (এক বছর ) ঘুম পাড়াচ্ছেন আশ্রয়কেন্দ্র মির্জাজাঙ্গাল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বারান্দায়। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চার দিন ধরে এখানে আছি। এখানে মানুষ অনেক বেশি। বারান্দায় মাদুর বিছিয়ে থাকছি। ’ তাঁর নাতির বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘বাচ্চারা তো কিছু বোঝে না, তারা শুধু খাবারের জন্য কান্নাকাটি করে। আর এই কেন্দ্রে ভাত ও খিচুড়ি দেয়। ’ এখানে তাঁর নাতির খাওয়ার অনেক কষ্ট হচ্ছে বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
পৌনে দুই বছর বয়সী শিশুকে নিয়ে খাদিজা খাতুন উঠেছেন
ভাতারিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে। খাদিজা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা নিজেরা ভালো আছি, কিন্তু আমাদের বাচ্চারা ভালো নেই। আমরা এক বেলা খেলেও বাচ্চাদের ঠিকমতো খাওয়াতে পারছি না। ’
এ জাতীয় আরো খবর..