×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৬-০২
  • ৯৮ বার পঠিত
চালের বাজারের অস্থিরতা কমাতে রাজধানীসহ সারা দেশে অবৈধভাবে চাল মজুদকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অভিযান চালানোর সময় ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যান।

এদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল ৩২ জেলায় অভিযান চালিয়ে ৪০ হাজার ৩২ মেট্রিক টন চালের অবৈধ মজুদের সন্ধান পেয়েছে তারা। এসব ঘটনায় সাত লাখ ২৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।


অন্যদিকে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার গতকাল বলেছেন, ছয়টি প্রতিষ্ঠান চাল প্যাকেটজাত করে বিক্রি করার কারণে চালের দাম বাড়ছে। কোনো প্রতিষ্ঠান যাতে প্যাকেটজাত চাল বিক্রি করতে না পারে সে জন্য প্রজ্ঞাপন জারির চিন্তা করছে সরকার।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চালের দাম নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দেওয়ার পর গত মঙ্গলবার থেকে অভিযান শুরু হয়। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে মজুদদারদের কাছে কত চাল রয়েছে বা প্যাকেটজাত চাল বিক্রিকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে কত চাল মজুদ রয়েছে, তার নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই সরকারের কাছে। অন্যদিকে মঙ্গল ও বুধবার খাদ্য মন্ত্রণালয় রাজধানীতে বেশ কয়েকটি আড়ত ও পাইকারি দোকানে অভিযান চালিয়ে অবৈধ মজুদের চিত্র পায়নি।

কারওয়ান বাজারে অভিযান

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গতকাল দুপুরে চালের পাইকারি দোকানে অভিযান চালায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মর্জিনা আক্তারের নেতৃত্বাধীন একটি দল। চাল ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স আছে কি না, অনুমোদনের চেয়ে বেশি চাল মজুদ আছে কি না, কেনা-বেচার রশিদ, খুচরা মূল্যতালিকা প্রদর্শন প্রভৃতি বিষয় যাচাই করে তারা।

মর্জিনা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে দোকানে যাচ্ছি, কোনোটারই লাইসেন্স ঠিক পাওয়া যাচ্ছে না। চালের মজুদের হিসাবেও গরমিল রয়েছে। আমরা অভিযান শুরুর পর অনেক ব্যবসায়ী দোকান ফেলে পালিয়ে গেছেন। অভিযানে আড়ত মালিকরা কোনো ধরনের সহযোগিতা করছেন না। এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

একই দিন দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর মিরপুরে শাহ স্মৃতি মার্কেটের পাইকারি চালের আড়তে অভিযান শুরু করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানের শুরুতেই তাইয়্যেবা রাইস এজেন্সিতে অভিযান চালিয়ে তারা দেখতে পায়, যেসব চালের দাম বেশি সেগুলোর কোনো মূল্যতালিকা নেই। এসব অনিয়মের জন্য দোকান মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আইনানুযায়ী পাইকারি বিক্রেতারা ৩০০ মেট্রিক টন চাল মজুদ রাখতে পারেন। এ ছাড়া খুচরা ব্যবসায়ীরা ১৫ টন মজুদ রাখতে পারেন। কারওয়ান বাজারে ১০-১২টি দোকানে অভিযান চালিয়ে এত মজুদ পাওয়া যায়নি।

৩২ জেলায় অভিযান : রাজধানীসহ দেশের ৩২ জেলায় পাইকারি চালের আড়তে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকাল সারা দেশে ৮৬টি চাল বিক্রির পাইকারি প্রতিষ্ঠান বা আড়তে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে মজুদ ৪০ হাজার ৩২ মেট্রিক টন চাল পায় সংস্থাটি। এর সঙ্গে জড়িতদের জরিমানা করা হয় সাত লাখ ২৬ হাজার টাকা।

গতকাল রাজধানীর মিরপুর শাহ আলী বাজার ও যাত্রাবাড়ীতে চালের আড়তে অভিযান চালানো হয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিকাশ চন্দ্রের নেতৃত্বে রাজধানীর মিরপুরে শাহ স্মৃতি মার্কেটের পাইকারি চালের আড়তে অভিযান চালানো হয়। জানতে চাইলে বিকাশ চন্দ্র দাস কালের কণ্ঠকে বলেন, মিরপুরের শাহ আলী বাজারে দুটি আড়তে অভিযান চালিয়ে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

খাদ্যমন্ত্রী যা বললেন

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দেশের বাজার থেকে চাল কিনে সেটা প্যাকেটজাত করে আবার বিক্রি করা যাবে না—এমন একটি প্রজ্ঞাপন জারির চিন্তা করছে সরকার। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ছয়টি প্রতিষ্ঠান ৬০ থেকে ৬৫ টাকার চাল প্যাকেটজাত করে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি করছে। একই সঙ্গে আগাম টাকা মিলারদের দিয়ে আসছে, এমনকি প্যাকেটও দিয়ে আসছে নওগাঁ, দিনাজপুর, বগুড়া ইত্যাদি স্থানে। আমরা সেগুলোও বন্ধ করেছি। ’

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মোটা চাল ও ধানের দাম কিন্তু খুব একটা বাড়েনি। যেটা আটাশ, ঊনত্রিশ, শম্পাকাটারি, জিরাকাটারি যেটাকে নাজিরশাইল বা মিনিকেট বলে বিক্রি করে, এটার দাম বেড়েছে। একটি বিষয় কিন্তু মনে রাখতে হবে, এই যে বিপুল পরিমাণ চাল যখন এরা (কম্পানি) তুলে নিচ্ছে, প্যাকেট করতে লাগে তিন টাকা, বিক্রি করছে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে। এর জন্য তার বেশি দামে কিনে আনতেও সমস্যা নেই। এ কারণে যারা এদের কাছে চাল বিক্রি করছে তারা বাজারের ধানও প্রতিযোগিতা করে কিনছে। এর পরও কৃষক বলে তাদের লোকসান হচ্ছে। ’ দিনাজপুরে দেশের বড় একটি শিল্প গ্রুপের মিল আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে প্রায় পাঁচ হাজার টন চাল উদ্বৃত্ত ছিল। এটাকে সিলগালা করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তাদের মালামাল জব্দ করা হয়েছে। ’

বগুড়া : মেসার্স বর্ণ ট্রেডার্স নামের একটি অনিবন্ধিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে চাল মজুদ রাখার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক সঞ্জীব কুমার সাহাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ধুনটের ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত।

কুষ্টিয়া : দেশের সরু চালের বড় মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরের বেশ কয়েকটি চালকলে দুপুরে অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগের যৌথ টিম। এ সময় নিউ বনফুল, ভিআইপি, বাসমতি নামের ভুয়া লেবেল লাগিয়ে বাজারজাত করার দায়ে প্রতিষ্ঠানের মালিক আজিজুল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকা, মেসার্স ফোর স্টার মোকামে অতিরিক্ত ধান-চাল মজুদ রাখায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে ব্যাপারী রাইস মিলে ধান-চালের তেমন মজুদ না পাওয়া গেলেও ইফাদ অটো রাইস মিলের তিনটি গুদামে ধানের মজুদ কিছুটা বেশি ছিল। তাই ওই মিল মালিককে সতর্ক করা হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : পৌর এলাকার আনন্দ বাজারে এক মাসের বেশি চাল মজুদ করে রাখায় শামীম এন্টারপ্রাইজকে ২০ হাজার টাকা এবং প্লাস্টিকের বস্তায় চাল রাখায় আবুল খায়ের এন্টারপ্রাইজকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সদর ইউএনও মো. ইয়ামিন হোসেন এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat