দেশবাসীকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'সবাই একটু মিতব্যয়ী হন বা সব ব্যবহারে সকলেই যদি একটু সতর্ক হন তাহলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। দ্রব্যমূল্য যে বেড়েছে এবং সেটা যে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে সেটা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে হবে। যদিও সমালোচকরা সমালোচনা করবেই। '
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলানগরে এনইসি মিলনায়তনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সভায় যোগ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই অবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমর্থ হয়েছে। না হলে দেশের মধ্যে অরাজকতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারত।
প্রধানমন্ত্রী আসন্ন বাজেট ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, 'আমরা এই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও বাজেট দিতে যাচ্ছি এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আজকে অনুমোদন দেব। সেখানেও আমি মনে করি প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং সচিবরা এখানে রয়েছেন, পরিকল্পনা কমিশনের যারা রয়েছেন তাদের অনুরোধ করব আমরা আপনাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রকল্প অনুমোদন করে দেব বা প্রকল্প নেব এটা ঠিক। কিন্তু এগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আপনাদের অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে। যেটা দেশের জন্য একান্তভাবে প্রয়োজন এই মুহূর্তে আমরা শুধু সেগুলোই বাস্তবায়ন করব। '
তিনি বলেন, 'যেটা আমাদের এখনই প্রয়োজন সেগুলোই আমরা করব। আর যেগুলোর এখনই প্রয়োজন নেই সেগুলো একটু ধীরগতিতে করব। যেন আমাদের অর্থনীতির ওপর চাপ না পড়ে। কারণ যেখানে বিশ্বব্যাপী একটা মন্দা এবং পরিস্থিতি একটা দুর্ভিক্ষ অবস্থার দিকে যাচ্ছে সেখানে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। '
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'টাকা খরচের ক্ষেত্রে এবং সব ক্ষেত্রেই আমাদের অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। অহেতুক আমাদের সম্পদ যেন আমরা নষ্ট না করি। সেগুলো আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে। আমরা যদি খুব ভালোভাবে হিসাব করে চলতে পারি তাহলে আমাদের দেশের কোনো সমস্যা হবে না―এটা আমি বিশ্বাস করি। '
সরকার পরিচালনায় এসে সকলকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গদিতে বসে কেবল হুকুম জারি নয়, সকলের সঙ্গে মিলেমিশেই কাজ করতে চেয়েছি। যারা আমার সঙ্গে কাজ করতে এসেছেন তাদের এই অনুভূতি বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে আমি তাদেরই একজন এবং সকলের জন্য কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করাই আমার উদ্দেশ্য। '
তিনি এ ক্ষেত্রে কোনো প্রটোকলের বেড়াজালে নিজেকে আবদ্ধ না রেখে তার দ্বার সকলের জন্য অবারিত রেখেছেন এবং যার যখন প্রয়োজন তার সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ রেখেই কাজ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় পদ্মা সেতুতে রেললাইন রাখা এবং অর্থ ব্যয় নিয়ে সমালোচনার উত্তরে নানা পরিসংখ্যান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'পদ্মা সেতুর একটি টাকাও আমরা কারো কাছ থেকে ধার করিনি বা ঋণ নিইনি। এটি বাংলাদেশের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে করা হচ্ছে। ' তিনি মানুষকে বিভ্রান্ত করার মতো তথ্য প্রদানকারী সমালোচকদের সংযত হয়ে কথা বলারও পরামর্শ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, 'পত্রিকা পড়ে নয়, বরং দেশের মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে এবং তাদের প্রয়োজন অনুভব করে দেশের উন্নয়নে নানামুখী সিদ্ধান্ত নিয়ে এত দিন দেশ পরিচালনা করেছি এবং সেটাই অব্যাহত রাখতে চাই। '
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বৈঠকে উপস্থিত সকলকে কোথায় কী লেখা হলো না হলো তা নিয়ে চিন্তা না করে নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলার আহ্বান জানান।
করোনাভাইরাস, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং সর্বোপরি বিশ্বব্যাপী চলমান অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল রাখতে পারায় সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং কেউ আর বাংলাদেশকে পেছনে ফেরাতে পারবে না বলেও তার দৃঢ় আস্থা পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ জাতীয় আরো খবর..