নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষ হওয়ার সময় ম্যাচে ২-২ গোলের সমতা। শিরোপা জয়ের আশা বাঁচিয়ে রেখেই অতিরিক্ত সময়ের খেলা শুরু করে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ দল। কিন্তু অতিরিক্ত সময়ের খেলা ৯ মিনিট গড়াতে না গড়াতেই সব আশা শেষ হয়ে যায়। স্কোরলাইন যে তখন ভারতের পক্ষে হয়ে যায় ৫-২!
আসলে বাংলাদেশের শিরোপা জয়ের স্বপ্নের মৃত্যু হয়েছে ভারতের স্ট্রাইকার গুরকিরাত সিংয়ের দুর্দান্ত খেলার কাছে। ম্যাচের ভাগ্য বদলে দিয়েছেন ইন্ডিয়ান সুপার লিগের ক্লাব মুম্বাই সিটি এফসির এই ফুটবলার। ভারতের ৫ গোলের ৪টিই করেছেন গুরকিরাত। অন্য গোলটি করেছেন হিমাংশু জাংরা। বাংলাদেশের গোল দুটি রাজন হাওলাদার ও শাহীন মিয়ার। ৮ গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জিতেছেন গুরকিরাত।
এমনিতেই ছেলেদের বয়সভিত্তিক সাফে ভারতের আধিপত্য বেশি। এর আগের পাঁচবার হওয়া টুর্নামেন্টে প্রত্যেকবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। বাংলাদেশ রানার্সআপ হয়েছে একবার। ২০১৯ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ সাফের ফাইনালে বাংলাদেশকে ২-১ গোলে হারায় ভারত। বয়সভিত্তিক সাফের ফাইনালে সেই হারের প্রতিশোধ নেওয়ার দারুণ সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। কিন্তু ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে আজ বাংলাদেশের হৃদয় ভাঙল ভারতের যুবারা।
পাঁচ দেশ নিয়ে হওয়া এবারের টুর্নামেন্ট হয়েছে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে। টুর্নামেন্টে ভারতকে লিগের ম্যাচে ২-১ গোলে হারায় বাংলাদেশ। সেই হারের প্রতিশোধটাও দারুণভাবে নিল ভারত।
আজ প্রথম মিনিটেই পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশের যুবারা। ম্যাচের বয়স তখন মাত্র ২৫ সেকেন্ড। পেনাল্টির বাঁশি বাঁজতেই বাংলাদেশের ফুটবলাররা ঘিরে ধরেন মালদ্বীপের রেফারি শাহ আলী হোসেনকে। কিন্তু রেফারি তাঁর সিদ্ধান্তে রইলেন অনড়। বাংলাদেশ গোলরক্ষক মোহাম্মদ আসিফ বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়া ভারতের ফরোয়ার্ড গুরকিরাত সিংকে অহেতুক ফাউল করেন। সেই ফাউলের জেরেই পেনাল্টি থেকে গোল করে প্রথম মিনিটে এগিয়ে যায় ভারত। গোলটি করেন গুরকিরাত সিং।
ম্যাচের বাকি সময়ে অবশ্য বেশ কিছু দুর্দান্ত সেভ করে দলের নিশ্চিত কয়েকটি গোল বাঁচিয়েছেন আসিফ। ম্যাচের শুরুতে পিছিয়ে পড়ে অবশ্য এতটুকু হাল ছেড়ে দেয়নি বাংলাদেশের যুবারা। বরং গোল শোধে মরিয়া বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা ম্যাচে ফিরতে সাধ্যমতো চেষ্টা করে গেছেন।
বাংলাদেশ কোচ পল স্মলির কৌশলই ছিল আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলানো। বিরতিতে যাওয়ার খানিক আগে বাংলাদেশের ম্যাচে ফেরা তো সেই আক্রমণেরই ফল। ডান প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠা রফিকুল ইসলাম বক্সে ঢুকে আলতো করে বল বাড়িয়ে দেন রাজন হাওলাদারের কাছে। তিন ডিফেন্ডারের ফাঁক দিয়ে দুর্দান্ত এক গোল করে ম্যাচে সমতা আনেন রাজন (১-১)।
ম্যাচের ৪৭ মিনিটে শাহীন মিয়ার গোলে জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। মাঝমাঠের কাছ থেকে লম্বা পাসে উড়ে আসা বল প্রথমে ক্লিয়ারের চেষ্টা করেন ভারতের এক ডিফেন্ডার। কিন্তু সেই বলটা শাহীন মিয়ার সামনে পড়লে দুর্দান্ত শটে করেন ২-১। এরপর ৬০ মিনিটে গুরকিরাত সিংয়ের গোলে ২-২ করেছে ভারত।
বাকি সময়ে অবশ্য দুই দল চেষ্টা করেও আর কোনো গোল করতে পারেনি। তবে অতিরিক্ত সময়ের শুরুতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই স্কোরলাইন ৩-২ করেন হিমাংশু। অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক খেলা বাংলাদেশের রক্ষণ বলে আসলে কিছু ছিল না তখন। এরপর আরও দুটি গোল করেন গুরকিরাত।
বাংলাদেশ আজ গোলের জন্য তাকিয়ে ছিল পিয়াস আহমেদের দিকে। কিন্তু টুর্নামেন্টে ৩ গোল করা পিয়াস আজ আসল মঞ্চেই জ্বলে উঠতে পারেননি। ২ ম্যাচে ৪ গোল করা মিরাজুল ইসলামকে বদলি হিসেবে নামালেও কোনো কাজ হয়নি।
এ জাতীয় আরো খবর..