ব্র্যান্ডি চ্যাস্টেইন মুহূর্তটি দেখেছেন। শুধু চ্যাস্টেইন কেন, মুহূর্তটি যে-ই দেখেছেন দৃশ্যটি তাঁরই চোখে লেগে থাকার কথা।
২৪ বছর বয়সী ক্লোয়ি কেলি গোল করার আনন্দে দিগ্বিদিক ছুটলেন। হাসি আর আনন্দমিশ্রিত চোখে বিশ্বজয়ের আনন্দ। দৌড়ের সময় এক টানে খুলে ফেললেন জার্সিও! কিছু মনে পড়ে?
মনে করিয়ে দেওয়ার আগে ক্লোয়ি কেলির গল্পটা আগে বলে নেওয়া যাক। মেয়েদের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে কাল জার্মানিকে ২-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইংল্যান্ড। ম্যাচের ১১০ মিনিটে কেলির গোলে জয় তুলে নেয় ‘দ্য লায়নেস’রা।
মেয়েদের ফুটবলে এটাই প্রথম ইউরো জয় ইংল্যান্ডের। আর ছেলে ও মেয়েদের ফুটবল মিলিয়ে ১৯৬৬ বিশ্বকাপ জয়ের পর এই প্রথম বড় কোনো টুর্নামেন্টে শিরোপার দেখা পেল ইংলিশরা। ক্লোয়ি কেলির জার্সি খুলে দিগ্বিদিক ছোটাটা ইংরেজদের চোখে অবশ্যই ‘আইকনিক।’ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য টাইমস’ তো প্রতিবেদনেই লিখেছে, ‘এখন পর্যন্ত মেয়েদের ফুটবলে এটাই সবচেয়ে আইকনিক মুহূর্ত।’
চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় এমন কিছু মনে করার অধিকার ব্রিটিশদের আছে। তবে এমন দৃশ্য কিন্তু আগেও দেখা গেছে। আর ম্যানচেস্টার সিটি স্ট্রাইকার ক্লোয়ি কেলি ২৩ বছর আগের সে মুহূর্তটাই মনে করিয়ে দিয়েছেন ওয়েম্বলির ফাইনালে। যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসাডেনায় ১৯৯৯ বিশ্বকাপ ফাইনাল গড়িয়েছিল টাইব্রেকারে।
চীনের বিপক্ষে সে ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে শেষ শটটি নেন যুক্তরাষ্ট্রের ফরোয়ার্ড ব্র্যান্ডি চ্যাস্টেইন। লক্ষ্যভেদ করে যুক্তরাষ্ট্রকে ৫-৪ গোলে বিশ্বকাপ জিতিয়ে চ্যাস্টেইনও দিগ্বিদিক দৌড়ের সময় জার্সি খুলে ফেলেছিলেন। সেই মুহূর্তের ছবি তখন অনেক সংবাদমাধ্যমই বড় করে ছাপিয়েছিল। নিউইয়র্ক টাইমস লেখে, ‘নারী অ্যাথলেটদের যত ছবি তোলা হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে আইকনিক ছবি।’
ক্লোয়ি কেলি কাল ইউরোর ফাইনালে গোলের পর জার্সি খুলে চ্যাস্টেইনকে তাঁর সেই মুহূর্তই স্মরণ করিয়ে দেন। ৫৪ বছর বয়সী সাবেক এই ফুটবলারও চুপ করে থাকতে পারেননি। ক্লোয়িকে ট্যাগ করে টুইট করেন চ্যাস্টেইন, ‘খেলা দেখলাম তোমার। ভালো করেছ ক্লোয়ি কেলি। বাকি জীবন পুরো ইংল্যান্ডবাসীর কাছ থেকে বিনা পয়সায় ডিনার করো এবং গলা ভেজাও।’ পরে কেলির কাছে চ্যাস্টেইন জানতে চেয়েছেন, একসঙ্গে উদ্যাপন করা যাবে কি না, ‘দ্রুতই ইংল্যান্ডে যাব। আমরা দেখা করে উৎসবটা একসঙ্গে উদ্যাপন করতে পারি।’
কেলির বাসা ওয়েম্বলি থেকে বেশি দূরে নয়। বড় হয়েছেন পশ্চিম লন্ডনের ইলিংয়ে। ম্যাচের দিন টিকিট কিনে ৯২ নম্বর বাসে চেপে চলে আসতেন ওয়েম্বলিতে। বাসা থেকে ওয়েম্বলি মাত্র ১৫ মিনিটের পথ হওয়ায় কেলির প্রশ্নটা মোটেও অবান্তর মনে হয় না, ‘বাসা থেকে মাত্র ১৫ মিনিটের পথ। (ওয়েম্বলি) এটা তো আমার ঘর-ই , তাই না?’
সেই ‘ঘরে’ই কাল ম্যাচ শেষে যখন ৮০ হাজারের বেশি দর্শক কেলির নামে চিৎকার করেছেন, তাঁর নাম প্রিন্ট করে স্যুভেনির বের করেছেন, তখন বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কেলির প্রতিক্রিয়া, ‘হায় খোদা!’ এরপর দর্শকদের প্রশংসাও ঠিকমতো করতে পারেননি। ততক্ষণে ইউরো জয়ের আনন্দে সতীর্থরা ‘সুইট ক্যারোলিন’ গান ধরেছেন।
সাক্ষাৎকার ফেলে কেলি সমবেত সংগীত আর উদ্যাপনে অংশ নিতে ছুট লাগান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেলির এই সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারকেই ইংলিশরা বলছেন, ‘ম্যাচের পর সর্বকালের সেরা সাক্ষাৎকার।’
সেটি হোক বা না হোক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক সমর্থকের একটি মন্তব্য দিয়েই বোঝানো সম্ভব, কাল রাতের ইংরেজদের জীবনে কেলি কতটা ঝড় তুলেছেন, ‘সাক্ষাৎকারের মাঝপথে দৌড়ে কেলির দলীয় উৎসবে যোগ দেওয়ার এই দৃশ্য দেখতে কোনো দিন ক্লান্ত লাগবে না।’ আর জার্সি খোলার মুহূর্ত?
এ জাতীয় আরো খবর..