বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ বলেছেন, 'বাংলাদেশর মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে শত বাধা অতিক্রম করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। পদ্মা সেতু শুধু একটি স্থাপনা নয়, এটা আমাদের সক্ষমতা ও আত্মমর্যাদার প্রতীক। পদ্মা সেতু নিয়ে অনেকে অনেক ধরনের ষড়যন্ত্র, বিরোধিতা ও কুকথা বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে সেই পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ায় তাদের মুখে চুনকালি পড়েছে।
বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে রওশন এরশাদ সিলেট, সুনামগঞ্চসহ বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, 'বন্যায় সিলেট, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় বড় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এর ফলে এসব অঞ্চলে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও স্থাপনা ধ্বংস হওয়ায় মানুষ অত্যন্ত কষ্টে আছে। আমি জানি সরকার এদের অনেক ধরনের সহায়তা করছে। তার পরও আমি বলব, এদেরকে আরো বেশি সাহায্য করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলব, ত্রাণসামগ্রী সেখানে পৌঁছানো ছাড়াও এই বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন। '
সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করে বিরোধী দলের নেতা বলেন, 'করোনা মহামারি-পরবর্তী নতুন বিশ্বের সামনে কঠিন এক চ্যালেঞ্জ এনে দিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যার প্রভাবে সারা বিশ্বেই জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যমূল্য বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। বাংলাদেশে বেড়েছে অসহনীয়ভাবে। ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন ব্যবস্থা। ডলারের বাজার অস্থির হয়ে ওঠায় আমদানি-রপ্তানি খাতেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এমন এক বৈরী সময়ে আমি মনে করি প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জগুলো হলো―আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ; তেল, গ্যাস ও সারের মূল্যবৃদ্ধিজনিত বর্ধিত ভর্তুকির জন্য অর্থের সংস্থান; বেসরকারি বিনিয়োগ অব্যাহত রেখে কর্মসৃজন; আমদানি সহনীয় পর্যায়ে রেখে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ স্থিতিশীল রাখা; ব্যাংকঋণের সুদের হার বর্তমান পর্যায়ে ধরে রাখা; করের আওতা বৃদ্ধি করে রাজস্বের পরিমাণ বাড়ানো ও বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনা; কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেওয়া এবং সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানো। ' এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি কমানোর কৌশল নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, সামাজিক সুরক্ষা এবং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে রওশন এরশাদ বলেন, 'সর্বজনীন পেনশন চালু ও যুব-বাজেটের জন্য অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে মেডিটেশন সেবা একটি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কাজেই একে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা উচিত। স্পিকারের নেতৃত্বে সংসদ সদস্যগণ বাল্যবিাহ প্রতিরোধ এবং মাতৃমৃত্যু কমানোর লক্ষ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন―এ কাজে সরকারের অর্থ বরাদ্দ করা প্রয়োজন। '
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, 'একাদশ জাতীয় সংসদের বেশির ভাগ সময় আমরা পূর্ণ করেছি। দেশের সকল রাজনৈতিক দলই এখন আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি মনে করি, সকল দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক হবে। যা গণতন্ত্রের মূলনীতি। ' গণতন্ত্রের বিকাশে সকলকে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পাললেন আহ্বান জানান তিনি।
এ জাতীয় আরো খবর..