×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৮-১১
  • ৪০ বার পঠিত
ইরানের পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের প্রস্তাবিত মন্ত্রীদের তালিকার প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে। এতে পশ্চিমাবান্ধব কূটনীতিক হিসেবে পরিচিত সাবেক প্রধান পরমাণু আলোচক আব্বাস আরাগচিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে একজন নারীও এ তালিকায় আছেন।

সংসদের স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত সংসদ অধিবেশন চলাকালীন প্রেসিডেন্টের উপস্থাপিত ১৯ সদস্যের মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা করেন।

সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনা প্রকাশিত তালিকায় দেখা যায়, পেজেশকিয়ান তার মন্ত্রিসভায় অশিয়া মন্ত্রীদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও প্রস্তাবিত মনোনীতদের মধ্যে কোনো সুন্নি মন্ত্রী নেই। একই সঙ্গে প্রস্তাবিত মন্ত্রিসভার সদস্যদের গড় বয়স কমপক্ষে ৫৫, যা একটি ‘তরুণ’ মন্ত্রিসভা গঠনে পেজেশকিয়ানের পূর্বের প্রতিশ্রুতির বিপরীত।
তবে পেজেশকিয়ান সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রার্থী হিসেবে ফারজানেহ সাদেগ নামের এক নারীকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তার নিয়োগ চূড়ান্ত হলে ১৯৭৯ সালে ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে মন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হওয়া দ্বিতীয় ইরানি নারী হয়ে উঠবেন।

প্রত্যেক প্রস্তাবিত প্রার্থীর যোগ্যতা ও দক্ষতা কঠোরপন্থীপ্রধান সংসদের সংশ্লিষ্ট কমিটির মাধ্যমে গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হবে। এরপর মন্ত্রীদের তাদের কর্মসূচির পক্ষে সংসদে যুক্তি উপস্থাপন করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে, এরপর তারা আস্থা ভোটের মুখোমুখি হবেন।

পেজেশকিয়ান অর্থমন্ত্রী পদে মনোনীত করেছেন আব্দোলনাসের হেম্মতিকে, যিনি ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর। একই সঙ্গে তিনি ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন, কিছু সংস্কারপন্থী তার প্রার্থিতাকে সমর্থন করেছিলেন।

হেম্মতি অতীতে সরকারের অর্থনৈতিক কার্যকারিতা নিয়ে সমালোচনা করেছেন। যদিও তার মেয়াদকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতিজনিত নীতিগুলো বাস্তবায়ন করে, যা জাতীয় মুদ্রা রিয়ালের ব্যাপক অবমূল্যায়নের কারণ হয়।
তেলমন্ত্রী পদে পেজেশকিয়ান মোহসেন পাকজাদকে মনোনীত করেছেন, যিনি আগে হাসান রুহানির সরকারের অধীনে উপতেলমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া বিদ্যুৎসহ জ্বালানি সংকট সম্পর্কিত উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার জন্য পেজেশকিয়ান আব্বাস আলিয়াবাদিকেও পুনর্বহাল করেছেন, যিনি রাইসির প্রশাসনে জ্বালানিমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন।

বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদ ও সাবেক সংস্কারবাদী আইন প্রণেতা আহমেদ মিদারিকে পেজেশকিয়ান শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে মনোনীত করেছেন।

তিনি নির্বাচনী বিতর্কের সময় পেজেশকিয়ানের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সংসদে উল্লেখযোগ্য বিরোধিতার মুখোমুখি হতে পারেন।
 
ইব্রাহিম রাইসির প্রশাসনের সময় মার্কিন গোয়েন্দা বিষয়ক মন্ত্রী ইসমাইল খতিবকে পেজেশকিয়ানের গোয়েন্দামন্ত্রী হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। রেভল্যুশনারি গার্ডস (আইআরজিসি) গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে খতিবের দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে, কর্মজীবনের শুরুতে সেখানে বিভিন্ন উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

তেহরানে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, পেজেশকিয়ানের প্রস্তাবিত তালিকাটি "সমঝোতা মন্ত্রিসভা" বলে মনে হচ্ছে, যেখানে স্বরাষ্ট্র, গোয়েন্দা, শিক্ষা, ক্রীড়া, ইসলামিক দিকনির্দেশনা ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এই ছাড়গুলো সম্ভবত পররাষ্ট্র, শ্রম, অর্থনীতি, উচ্চশিক্ষা, যোগাযোগ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত সংস্কারপন্থী মন্ত্রীদের জন্য আস্থা ভোট নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে, যাতে তার সংস্কারপন্থী ভিত্তির সমর্থন বজায় থাকে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য পেজেশকিয়ান ইরানের বেসরকারি মেডিক্যাল কাউন্সিলের স্পষ্টভাষী সংস্কারবাদী চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিত ড. মোহাম্মদ-রেজা জাফরগান্দিকে নির্বাচিত করেছেন, যিনি তার ওকালতি ও নিয়ন্ত্রণমূলক কাজের জন্য পরিচিত। এ ছাড়া ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ নাসিরজাদেহ প্রতিরক্ষামন্ত্রী পদের জন্য মনোনীত হয়েছেন, যিনি বর্তমানে সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফের উপপ্রধান।

পেজেশকিয়ান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রার্থী হিসেবে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সাবেক উপপ্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসকান্দার মোমেনিকেও এগিয়ে রেখেছেন। এই পছন্দ কিছু সংস্কারপন্থীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, যারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একজন সামরিক ব্যক্তিকে নিয়োগের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করছেন।

এ ছাড়া অন্তত একটি মন্ত্রী পদ সংসদের স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফের ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে দেওয়া হয়েছে। তেহরান মিউনিসিপ্যালিটিতে গালিবাফের ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সাবেক আইন প্রণেতা আহমাদ ডনয়ামালিকে ক্রীড়ামন্ত্রীর ভূমিকার জন্য মনোনীত করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত মন্ত্রিসভার অন্যতম তরুণ মনোনীত ব্যক্তি সাত্তার হাসেমিকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। সংসদে অনুমোদিত হলে তিনি ইন্টারনেট ফিল্টারিংয়ের সমস্যার সমাধান করার কঠিন কাজের মুখোমুখি হবেন, যেটি পেজেশকিয়ান তার প্রচারণার সময় সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

পেজেশকিয়ান জুলাইয়ের শেষের দিকে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় ইরানকে বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত করার পক্ষে কথা বলেছেন তিনি। সেই সঙ্গে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করার ও ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে দেশটিতে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমিত। ৮৫ বছর বয়সী আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি দেশটির সর্বোচ্চ নেতা, যার ওপর রাষ্ট্রীয় নীতি বাস্তবায়নের দায়িত্ব রয়েছে।

সূত্র : ইরান ইন্টারন্যাশনাল, এএফপি

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat