×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৮-১৮
  • ১৭৭ বার পঠিত
কার্টুনের বাংলা চলতি প্রতিশব্দ ব্যঙ্গচিত্র, যাতে অনেক সময়ই ব্যঙ্গ বা তির্যক উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে বড় অসংগতি, অন্যায় তুলে ধরা হয়। প্রতিবাদের ভাষা হিসেবেও এক অমোঘ অস্ত্র কার্টুন। দৃক গ্যালারিতে শুরু হওয়া কার্টুন প্রদর্শনী যেন সে সত্যই তুলে ধরল আরেকবার।

গতকাল শনিবার বিকেলে দৃকপাঠ ভবনের ফটক ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল মানুষের দীর্ঘ সারি।
 
সে অনুযায়ী আট তলায় দৃক গ্যালারিতেও ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই দশা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের সময়ে অনলাইন ও অফলাইনে আঁকা কার্টুনগুলো নিয়ে ‘কার্টুনে বিদ্রোহ’ প্রদর্শনী উপভোগ করতে এসেছেন সবাই। গ্যালারিতে ঢুকলেই সামনে পড়ে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার একটি কার্টুনধর্মী প্রতিকৃতি। তাতে পেঁচিয়ে রাখা হয়েছে কয়েক গাছা দড়ি।

দর্শনার্থীরা কেউ কেউ দড়ি ধরে টান দেওয়ার ভঙ্গি করে ছবি তুলছেন। দৃশ্যটি দেখে মনে পড়তে পারে সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘হীরক রাজার দেশে’র জনপ্রিয় সংলাপ ‘দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান’।

প্রদর্শনীতে আহসান হাবীব, মেহেদী হক, দেবাশীষ চক্রবর্তী, আরাফাত করিম, মাহতাব রশিদ, রাকিব হাসান অপু, কলকাতার কৌশিক সরকারসহ নবীন ও প্রতিষ্ঠিত অনেক শিল্পীর তিন শর বেশি কার্টুন রয়েছে। কার্টুন ছাড়াও ভিডিও চিত্রে ছাত্র-জনতার উত্তাল আন্দোলনের দিনগুলো দেখানো হচ্ছে ছোট পর্দায়।
 
বিভিন্ন সংবাদপত্রের ক্লিপিং ও ভিডিও ফুটেজ থেকে উপস্থাপনাটি বানানো। অন্যদিকে আন্দোলনের সময় পশ্চিমা স্টাইলের হিপহপ ও রক ধারার কিছু প্রতিবাদী সংগীতও প্রকাশ করেছেন শিল্পীরা। সেগুলোও শুনতে পাচ্ছেন দর্শক-শ্রোতারা।

আন্দোলন চলাকালে সংবাদপত্র ও বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া অনেক দৃশ্যের ভিত্তিতে নির্মিত অনেক কার্টুন রয়েছে প্রদর্শনীতে। এর মধ্যে একটি কার্টুনে দেখা যায়, বিক্ষোভরত এক শিক্ষার্থী দুই হাতে প্রাণপণে পুলিশের কাভার্ড ভ্যান ঠেকানোর চেষ্টা করছেন।

দেবাশীষ চক্রবর্তীর আঁকা একটি পোস্টারে দেখা যায়, কঠোরভাবে বিক্ষোভ দমনকারী পুলিশের এক কর্মী কোমরে দুই হাত দিয়ে বলছেন, ‘মাইরা তো ফেলছি, এখন কী করবা?’।

বিনোদন ছাড়াও স্বাধীন মত প্রকাশের জনপ্রিয় মাধ্যম কার্টুন। বাংলাদেশে ব্যঙ্গাত্মক রাজনৈতিক কার্টুনের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে। একসময় দেশের সংবাদপত্রগুলোতে নিয়মিত কার্টুন ছাপা হতো। তবে পাঠকদের ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও বেশ কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক কারণে কার্টুন ছাপা কার্যত বন্ধ। ক্ষমতাসীনদের নিয়ে কার্টুন আঁকতে গেলে সাতবার ভাবতে হতো। কোটা আন্দোলনের জের ধরে সরকারবিরোধী মনোভাব তুঙ্গে ওঠায় ভয়ভীতি লোপ পায়। বদলে যায় পরিস্থিতি। সংবাদপত্র, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, শহরের দেয়াল—সব জায়গায় কার্টুন ফিরে আসে জোরেশোরে। এসব কার্টুন নিয়েই এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বাংলাদেশ কার্টুনিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, ব্যঙ্গাত্মক অনলাইন সাময়িকী ইআরকি ও দৃক।

প্রদর্শনীতে ডিজিটাল মাধ্যমে আঁকা রাজনৈতিক কার্টুন, শহরের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়া বিচিত্র ধরনের গ্রাফিতি, সংবাদপত্রের জন্য আঁকা প্রখ্যাত শিল্পীদের কার্টুন জায়গা পেয়েছে। প্রদর্শনীর কিউরেটর রেজাউর রহমান জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মানুষের মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছে বেশ কিছু চিত্র। এসব অমূল্য সৃষ্টিকর্মের সব প্রদর্শনীতে তুলে আনা সম্ভব নয়। তবে যেসব চিত্রকর্ম নিয়ে এর আয়োজন করা হয়েছে, তা দর্শকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে ছাত্র আন্দোলনের এই উজ্জ্বল সময়ে।

প্রদর্শনীটি চলবে ২৩ আগস্ট রাত ৮টা পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে এটি খোলা থাকবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat