×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-০৫-১৯
  • ৪৭ বার পঠিত
পিরোজপুরের কাউখালীর শীতল পাটির ঐতিহ্য অনেক পুরনো। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পাঠ্য বইতে ও পিরোজপুরের পরিচিতিতে এই শীতল পাটির কথা উল্লেখ থাকত। কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পাটি বুনিয়েদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এবং শীতল পাটি তৈরির প্রধান কাঁচামাল পাইত্রা প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণে কাউখালীর ঐতিহ্যবাহী শীতল পাটি তার ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। অথচ শুধু এশিয়াতেই নয়; এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকায়ও আমাদের শীতল পাটির কদর দিন দিন বাড়ছে।

উপজেলার সুবিদপুর গ্রাম এক সময় শীতল পাটির তৈরির প্রধান ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত ছিল। পাইত্রা উৎপাদন এবং পাইত্রা রক্ষণাবেক্ষণ করে পাটি তৈরি করা হতো বলে এলাকাটির নাম হয়ে যায় ‘পাটিয়াল পাড়া’। আর পাটি উৎপাদকদের বলা হয় ‘পাটিকর’। এ গ্রামের বেশির ভাগ নারী-পুরুষই ছিল পাটিকর। কারণ, তারা শীতল পাটি উৎপাদনের সাথে জড়িত ছিল। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পাটিকর সম্প্রদায়ের এক বড় অংশ দেশ ছেড়ে চলে যায়। একসময় এ গ্রামে প্রায় ৩০০ একরেরও বেশি পাইত্রা বন ছিল। বনের বেশির ভাগই এখন উধাও হয়ে গেছে। বর্তমানে ৩৫ থেকে ৪০ একর জমি পাইত্রা বন হিসেবে এখনো পড়ে আছে। এছাড়া অনেকে পাটিকর উপজেলার পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকেও অনেকে পাইত্রা সংগ্রহ করে থাকেন।

পাইত্রা গাছ একবার বপন করলেই হয়। বারবার বপন করার দরকার হয় না। এখানকার পাটিকররা তাদের আর্থিক দৈনতার কারণে জমিজমা হারাচ্ছেন। জমি চলে যাচ্ছে প্রভাবশালীদের হাতে। অন্যদিকে প্রভাবশালীরা পাইত্রা বন কেটে বাড়িঘর নির্মাণ ও ধান চাষ করছেন। এর ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে পাইত্রা বন। পাইত্রার অভাবে পাটিয়ালরা তাই পাটি বোনা বন্ধ করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।

পাটি শিল্প এবং এর সাথে যুক্তদের সমস্যা সমাধানে কোনো ঋণের সুবিধাও নেই। পাটিকরদের কয়েকজন জানান, তাদের উন্নত প্রশিক্ষণ এবং তৈরি পাটির সঠিক মূল্য নিশ্চিত করা হলে এবং সেই সাথে ব্যাংক ঋণ বা এনজিও’র মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণ দিলে তারা এ পেশা টিকিয়ে রাখতে পারত। এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাশাপাশি বিদেশিদের কাছেও শীতল পাটির কদর দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় শীতল পাটি উন্নয়ন প্রকল্প সমিতির নেতা ব্রজেন্দ্র লাল পাটিকর বলেন, পাইকাররা এসে আমাদের কাছ থেকে অল্প দামে পাটি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ও বিদেশে পাঠাচ্ছে বেশি দামে সেই পাটি বিক্রি করছে। অথচ আমরা পাটির উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছি না। সরকার যদি এই শিল্পটাকে রপ্তানিকারক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিত এবং সেই সাথে আমাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করত, তাহলে বাংলাদেশের শীতল পাটি পৃথিবী বিখ্যাত শিল্প হিসেবে নিয়ে যাওয়া যেত।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat