আগুনের সূত্রপাত রাত নয়টার দিকে, নেভানোর চেষ্টার মধ্যে দুই ঘণ্টার মাথায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ। পোড়া গন্ধ, মানুষের আর্তচিৎকার আর অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনে ভারী হয়ে ওঠে বাতাস। শনিবার সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার ২৪ ঘণ্টা পরেও তা নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত দেড় শতাধিক।
সীতাকুণ্ডের আগুনের ঘটনার খবর দেশের গণমাধ্যমগুলোয় গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হচ্ছে। ভয়াবহ এই বিস্ফোরণের খবর উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতেও।
সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের ঘটনায় বিবিসি শিরোনাম করেছে ‘বাংলাদেশে অগ্নিকাণ্ড: ডিপোয় বিস্ফোরণে নিহত ৪০ জনের বেশি, আহত শতাধিক’। তাদের খবরে বলা হয়েছে, ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূর থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। বাংলাদেশের অনেক মানুষ এই বিস্ফোরণকে ২০২০ সালে বৈরুতে বন্দরের কাছে ভয়াবহ বিস্ফোরণের সঙ্গে মেলাচ্ছেন। বিবিসি বলেছে, বাংলাদেশে শিল্প খাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা খুবই সাধারণ। এর জন্য প্রায়ই নিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতিকে দায়ী করা হয়।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরেও ৪৯ জনের মৃত্যুর তথ্য দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ৩০০ জনের বেশি গুরুতর আহত। ডিপোতে বিস্ফোরণের সময় সেখানে ছিলেন ট্রাকচালক তোফায়েল আহমেদ। এএফপিকে তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের ফলে আমি প্রায় ১০ মিটার দূরে ছিটকে পড়লাম। আমার হাত–পা পুড়ে গেছে।’ আর ফায়ার সার্ভিসের সাবেক কর্মকর্তা ভারত চন্দ্র এএফপিকে বলেছেন, বাংলাদেশে এর আগে কোনো ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের এত বেশিসংখ্যক কর্মীর মৃত্যু হয়নি।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে সীতাকুণ্ডের বিস্ফোরণ
আল–জাজিরার দেওয়া হতাহতের তথ্য এএফপির মতোই। ‘বাংলাদেশ: কনটেইনার ডিপোতে প্রাণঘাতী আগুন ও বিস্ফোরণ’ শিরোনামের খবরে তারা বলছে, আগুনে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী রয়েছেন। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে থাকা অন্তত ২১ জন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী আহত হয়েছেন।
সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। গত বছরের ডিসেম্বরে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে একটি লঞ্চে আগুন লেগে কমপক্ষে ৩৮ জন নিহত হন। এর কয়েক মাস আগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি কারখানায় আগুন লেগে অন্তত ৫২ জন মারা যান।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে সীতাকুণ্ডের বিস্ফোরণ
অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহ সব ছবি প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তাদের খবরেও আগুনের ঘটনার খুটিনাটি তুলে ধরা হয়েছে। আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া আফজাল হোসেনের চাচাতো ভাই সাখাওয়াত হোসেন রয়টার্সকে বলেন, ‘আমার ভাইকে হারালাম। তার (আফজাল) বাবা মারা গেছেন মাত্র ১০ মাস আগে। ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট, তাতে কী, মায়ের খেয়াল সে একাই রাখত। এখন তার মা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। কোনো কিছুতেই তাঁকে শান্ত করা যাচ্ছে না।’
বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো ও বিভিন্ন বার্তা সংস্থার বরাত দিয়ে সীতাকুণ্ডের আগুনের খবর তুলে ধরেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে তাদের খবরে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। অন্যদিকে সীতাকুণ্ডের আগুনে ৪৮ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাদ্যম ডন।
এ জাতীয় আরো খবর..