বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কতজন মেধাবী গরিব শিক্ষার্থীকে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ দিয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ পর্যন্ত কত টাকা গবেষণা খাতে বরাদ্দ করেছে, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
আগামী ৬০ দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানির পর রুলসহ এ আদেশ দেন বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ৯(৪) ধারা অনুযায়ী অনুন্নত অঞ্চলের দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিবছর ৩ শতাংশ স্থান সংরক্ষণ করে তাদের বিনা বেতনে শিক্ষার সুযোগ না দেওয়া এবং ৯(৬) ধারা অনুযায়ী গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নির্ধারিত অর্থ ব্যয় না করায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব, এই বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। আগামী ১৪ আগস্ট এ মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ রাখা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ‘সনদপত্রের শর্তাবলী’ শিরোনামের ৯(৪) ধারায় বলা হয়েছে, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত পূর্ণকালীন শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম শতকরা ছয় তন্মধ্যে শতকরা তিন ভাগ আসন মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এবং শতকরা তিন ভাগ আসন প্রত্যন্ত অনুন্নত অঞ্চলের মেধাবী অথচ দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য সংরক্ষণপূর্বক এই সকল শিক্ষার্থীকে টিউশন ফি ও অন্যান্য ফি ব্যতীত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুযোগ প্রদান করিতে হইবে এবং প্রতি শিক্ষা বৎসরের অধ্যয়নরত এইরূপ শিক্ষার্থীর তালিকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে দাখিল করিতে হইবে। ’
আর ৯(৬) ধারায় বলা হয়েছে, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক বাজেটের ব্যয় খাতে কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত একটি অংশ গবেষণার জন্য বরাদ্দপূর্বক উহা ব্যয় করিতে হইবে। ’
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) রিটে বলা হয়েছে, নিজস্ব উৎস থেকে খোঁজ নিয়ে দেখেছে যে, কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনটির ৯(৪), (৬) ধারার বাস্তবায়ন নেই। যে কারণে আইনের এ দুটি ধারার বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ চেয়ে গত ৩১ জানুয়ারি উইজিসির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচের্যের কাছে আবেদন করে ক্যাব। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ইউজিসি ক্যাবকে জানায়, তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখতে না পেয়ে ক্যাব গত ২৫ এপ্রিল বিবাদীদের আইনি নোটিশ দেয়। নোটিশে বলা হয়, মঞ্জুরি কমিশন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ১২ ও ৪৯ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়নি। সাত দিনের মধ্যে এ দুই ধারায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু সেটি না করায় এই রিট আবেদন।
‘সনদপত্রের শর্তপূরণে ব্যর্থতার ফলাফল’ শিরোনামে আইনের ১২ ধারায় বলা হয়েছে―(১) কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাময়িক অনুমতিপত্রের মেয়াদের মধ্যে বা, ক্ষেত্রমত, নবায়নকৃত সাময়িক অনুমতিপত্রের মেয়াদের মধ্যে সনদপত্রের জন্য আবেদন করিতে ব্যর্থ হইলে, অথবা সনদপত্র প্রাপ্তির জন্য ধারা ৯-এর কোন শর্ত পূরণে ব্যর্থ হইলে, উক্ত সাময়িক অনুমতিপত্র বা, ক্ষেত্রমত, নবায়নকৃত সাময়িক অনুমতিপত্রের মেয়াদ অবসানের সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও শিক্ষা সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম বন্ধ করিতে হইবে।
(২) উপ-ধারা (১)-এর অধীন কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ও শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হইলে, সংশ্লিষ্ট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় উহার চলমান প্রোগ্রাম বা কোর্সের শিক্ষার্থীদের বিষয়ে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।
আর ‘অপরাধ, আমলযোগ্যতা ও দণ্ড’ শিরোনামের ৪৯ ধারায় বলা হয়েছে―(১) কোন ব্যক্তি ধারা ৩(২),৩(৩),৬(৯), ৬(১০), ১২, ১৩(২), ৩৫(১), ৩৯, ৪৪(৫),৪৪(৬), ও ৪৪(৭),৪৫(২), ৪৬(২), ৪৬(৩), ৪৬(৬) বা ৪৭-এর বিধান লংঘন করিলে উক্ত লংঘন এই আইনের অধীন একটি অপরাধ হইবে এবং তজ্জন্য তিনি অনূর্ধ্ব ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ড অথবা ১০ (দশ) লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
(২) সরকার বা সরকারের নিকট হইতে এতদুদ্দেশ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগ ব্যতীত কোন আদালত এই আইনের অধীন কোন অপরাধ বিচারের জন্য গ্রহণ করিবে না।
এ জাতীয় আরো খবর..