দেশের হাসপাতালে রোগ নির্ণয় সময়ের ব্যাপার ■︎ ১২৮ দেশে বিস্তার
সালেহ আহাম্মেদ জুবায়ের : বাংলাদেশে করোনার নতুন ঢেউ শুরু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দ্রুত আবার সংক্রমণ বাড়ছে। সরকার এ বিষয়ে সতর্ককামূলকভাবে করণীয় নিয়ে আজ রোববার বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বলে জানা গেছে। যে সকল দেশে অনেক বেশি মানুষ ওমিক্রনে আক্রান্ত হচ্ছে, তাতে তাদের আইসোলেশনে যেতে হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়েছে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৪ জন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন এমন তথ্য সরকারি সূত্রগুলো জানাচ্ছে। যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশে হাসপাতালে ভর্তির হারও বেড়ে চলেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের ১২৮টি দেশে অমিক্রন ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ওমিক্রন সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। দুইদিন আগে অমিক্রনে শনাক্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে দেশটিতে। লক্ষণগুলো হচ্ছে: অনেক মানুষের কাছে অমিক্রন সাধারণ ঠাণ্ডার মতো মনে হবে। অনেকে বলেছেন, ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের গলা শুকিয়ে যাওয়া, সর্দি লাগা, শরীরের জয়েন্টে ব্যথা বা মাথা ব্যথা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইফুল্লাহ মুনশি বলছেন, ‘ওমিক্রনের লক্ষণগুলো খুবই হালকা ধরনের হয়। ডেলটা বা অন্য ধরনগুলোর মতো অতোটা প্রকট নয়। অনেকের ফুসফুসের ওপরের দিকে ব্যথা হতে পারে। সাধারণত সিকোয়েন্সিং করে এটা শনাক্ত করা যায়।’ তবে তিনি বলছেন, করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা গেলেই যেসব সতর্কতা নেয়ার কথা বরাবর বলা হয়েছে, সবাইকে সেগুলো নিতে হবে। শুধু ওমিক্রনের জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থা নেয়ার নেই। এর আগের করোনাভাইরাসের ধরনগুলোয় আক্রান্ত হলে স্বাদ বা গন্ধ চলে যাওয়ার ঘটনা ঘটতো। এছাড়া কাশি এবং উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর হতো। এখনো করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে এই তিনটি প্রধান লক্ষণ। চিকিৎসকরা বলছেন, ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে অনেক সময় হালকা ঠাণ্ডা বা সাধারণ অসুস্থতার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। এছাড়া আরো যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে: বুকের ওপরের অংশে ব্যথা, মাথা ব্যথা, জ্বর, ক্লান্ত লাগা, শরীরে ব্যথা, গলা শুকিয়ে যাওয়ার অনুভূতি। ওমিক্রন সংক্রমণ বাড়লেও তাদের সবাইকে হয়তো হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না বলে এই বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন। ওমিক্রন সংক্রমণ বাড়লেও তাদের সবাইকে হয়তো হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না বলে এই বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন। শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক তৌফিক আহমেদ বলছেন, ‘যদিও ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ওমিক্রন অনেক বেশি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তে জানা যাচ্ছে, ওমিক্রন একটু হালকা ধরনের, আক্রান্তদের গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার কম।’ তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহামারি বিশেষজ্ঞ ড. আব্দি মাহমুদ বলেছেন, ‘ওমিক্রন যে অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে কম ক্ষতিকর, সেটি বলার মতো যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। সুতরাং মুল বার্তা হলো, আপনি যদি টিকা নিয়ে থাকেন, তাহলেই আপনি নিরাপদ।’ সব ধরনের ভাইরাস দ্রুত অভিযোজিত হয় বা নিজেকে বিস্তার করে। তার ফলেই করোনাভাইরাসের এসব নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের জন্ম হয়। অনেক ভ্যারিয়েন্ট ভাইরাসকে আরও বেশি ক্ষতিকর করে তুলতে পারে। আবার অনেকগুলো শুধুমাত্র নিজেকে বিস্তার করে বা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিজ্ঞানীরা একে বর্ণনা করেছেন ‘ভ্যারিয়েন্টও অব কনসার্ন’ বা (ভিওসি) নামে। ২৫০ বেড টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার আন্তর্জাতিক মিডিয়া বিবিসি’কে জানান, ‘ডেল্টা বা অন্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ওমিক্রন খুব দ্রুত ছড়ায়। কিন্তু এটি ততোটা প্রাণঘাতী নয়। বিশ্বব্যাপী দেখা গেছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও অন্যগুলোর তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার হার কম।’
এর মধ্যে রয়েছে স্পাইক প্রোটিন নামের যে ভাইরাসের ধরনটিও, যা লক্ষ্য করে বেশিরভাগ টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। ফলে প্রাথমিকভাবে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল যে, বর্তমান টিকাগুলো হয়তো অমিক্রনের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে না। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের খবরে বহু দেশের বিমনাবন্দরে জারি হয়েছে নতুন সতর্কতা।
তবে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা গবেষণা করে দেখতে পেয়েছে, ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও বুস্টার ডোজ নিলে ৮৮ শতাংশ ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ঠেকানো যায়।
ডা. আয়শা আক্তার বলছেন, ‘ওমিক্রন নাকি ডেল্টায় আক্রান্ত হয়েছেন, সেটা নিয়ে চিন্তা করার চেয়ে বরং করোনাভাইরাসে যাতে আক্রান্ত না হন, সেই চেষ্টা করতে হবে। সেজন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আর কোনভাবে আক্রান্ত হয়ে গেলে আইসোলেশনসহ চিকিৎসার যেসব পদ্ধতি আছে, সেগুলোই অনুসরণ করতে হবে।’
অন্য ধরনগুলোর সঙ্গে এর আরেকটি বড় পার্থক্য লক্ষণ প্রকাশের ক্ষেত্রে। দক্ষিণ আফ্রিকায় বিস্তারের ধরন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের অন্য ধরনগুলোয় লক্ষণ প্রকাশে অনেক সময় সাতদিন সময় লাগলেও, এই ক্ষেত্রে সাধারণত তিন দিনের ভেতর লক্ষণ প্রকাশ হয়ে থাকে।
ওমিক্রন শনাক্ত করতে কী ধরনের পরীক্ষা করা হয়? সন্দেহভাজন রোগীর অমিক্রন হয়েছে কিনা, সেটা জানতে পুরো জেনেটিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন হয়।
করোনাভাইরাসের পিসিআর মেশিনে মুখের যে লালা পরীক্ষা করা হয়, সে লালায় ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেলে পরে সেটা পাঠিয়ে দেয়া হয় জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য। সেজন্য চার থেকে পাঁচদিন সময় লেগে যায়। জেনেটিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, আক্রান্ত ব্যক্তি ওমিক্রন নাকি অন্য কোন ধরনে আক্রান্ত হয়েছেন।
বাংলাদেশের কয়েকটা প্রতিষ্ঠানে করোনাভাইরাসের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের পরীক্ষা হচ্ছে শুধুমাত্র সরকারের রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা আইইডিসিআরে।
এ জাতীয় আরো খবর..