ঢাকা : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কতিপয় বর্তমান এবং সাবেক কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে ‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক, ও ‘তথ্য-ভিত্তিক নয়’ অভিহিত করে বলেছেন, ঢাকা এটি কোনো ভূ-রাজনীতির প্রতিফল কি না তা পর্যালোচনা করে দেখবে।
ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলারকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ‘অসন্তোষ’ জানাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করার কয়েক ঘণ্টা পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এটি (নিষেধাজ্ঞা) অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক... আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরও জোরালো তথ্য-ভিত্তিক প্রতিক্রিয়া আশা করি।’
বাংলাদেশ ‘ভূরাজনীতির শিকার’ হয়েছে তিনি এমন মনে করেন কি না জানতে চাইলে মোমেন বলেন, ‘তা হতে পারে’ এবং তিনি ‘আমরা চলমান ঘটনা পর্যালোচনা করবো’ বলে উল্লেখ করেন।
এ পরিস্থিতি বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে কি না প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তা মনে করি না’। তবে তিনি দ্রুত যোগ করেন যে ‘এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করে।’
অ্যান্টি-ক্রাইম পুলিশ ইউনিটের দ্বারা মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ‘তথ্য-ভিত্তিক’ নয় উল্লেখ করে মোমেন বলেন, র্যাব একটি সুশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠান যা বরং ‘বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার সুরক্ষিত করে আসছে।’ রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
শুক্রবার মার্কিন ডিপার্টমেন্টস অফ ট্রেজারি এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টস র্যাব এবং এর সাবেক মহাপরিচালক বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদসহ সাত বর্তমান ও সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ওপর মানবাধিকার-সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ভূ-রাজনীতির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে কিনা প্রশ্নের উত্তরে মোমেন বলেন, বাংলাদেশ এর শিকার কিনা তা তারা বিশ্লেষণ করে দেখবেন।
তিনি বলেন, ‘(এখন), আমি শুধু বলতে পারি যে কখনো কখনো কোনো দেশ বা সরকার ভালো পারফরমেন্স করলে প্রায়ই আক্রমণের সম্মুখীন হয়... আপনি যদি ভাল করেন, মাঝে মাঝে তা প্রভাব নিয়ে আসে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে যে র্যাব ১০ বছরে ৬০০ মানুষকে হত্যা করেছে। কিন্তু ‘কারা নিহত হয়েছে আমাদের কাছে তার কোনো তথ্য নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত তথ্য-ভিত্তিক উচিত ছিল।’
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ছয় লাখ মানুষ নিখোঁজ হয়, এক হাজার পুলিশ সদস্য কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত হয়, কিন্তু কাউকে শাস্তি দেয়া হয় না।
মন্ত্রী বলেন, এর আগে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন।
মোমেন বলেন, ‘তিনিও (মিলার) কিছুটা বিস্মিত (নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে)।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে তার কার্যালয়ে তলব করে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ঢাকার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
এতে বলা হয়, ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র সচিব মাসুদের অফিসে পৌঁছানোর পর বাংলাদেশ সরকারের সাথে কোনো পূর্ব পরামর্শ ছাড়াই মার্কিন প্রশাসন একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ায় তিনি বাংলাদেশের হতাশা প্রকাশ করেন।’
বিবৃতিতে বলা হয়, মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের উত্থাপিত উদ্বেগের বিষয়টি নোট করেন এবং ওয়াশিংটন ডিসিকে তা অবহিত করার আশ্বাস দেন।
এত বলা হয়, ‘তিনি (মিলার) সম্মত হন যে প্রতিষ্ঠিত পরামর্শ প্রক্রিয়া এবং উচ্চ পর্যায়ের সফরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে চমৎকার বহুমুখী সম্পর্ক আরও গভীর করা যেতে পারে।’
এতে আরো বলা হয়, রাষ্ট্রদূত পারস্পরিক স্বার্থের ইস্যুতে আগামী দিনে বাংলাদেশ সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত থাকার জন্য মার্কিন সরকারের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ও স্টেট ডিপার্টমেন্ট বেনজির আহমেদসহ র্যাবের সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
ট্রেজারি দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আজ, আনÍর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব দ্য ট্রেজারি অফিস অব ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল (ওএফএসি) একাধিক নিষেধাজ্ঞা কর্তৃপক্ষের অনুসরণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার অপব্যবহার এবং নিপীড়নের সাথে সম্পৃক্ততার জন্য ১৫ জন ব্যক্তি এবং ১০টি সংস্থাকে মনোনীত করছে।’
একযোগে এক ঘোষণায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ এবং র্যাবের আরেক সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদকে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়।