আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রবাসে থাকা বাংলাদেশি ভোটারদের দিকেও নজর দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা মনে করেন, প্রবাসীদের ভোট নিশ্চিতে ইসির উদ্যোগকে বিএনপি শুধু সমর্থনই করছে না বরং এটিই বিএনপির দাবি। এ লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানামুখী কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি ভোটারদের কাছে টানতে বিশেষ প্রচারও চালাবে দলটি।
এরই মধ্যে প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। যেসব দেশের দূতাবাস ও কনস্যুলেট কিংবা হাইকমিশনে এনআইডি দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, সেখানে প্রবাসীদের নানাভাবে সহায়তা করছেন স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এরই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল রোববার প্রবাসে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্যপদ গ্রহণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দলটির ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। ঢাকার গুলশানে একটি হোটেলে অনুষ্ঠিতব্য কর্মসূচিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি ও সিনিয়র নেতারা অংশ নেবেন।
প্রবাসীদের জন্য অনলাইন সদস্যপদ নবায়ন ও সংগ্রহ কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে প্রবাসে দলের সাংগঠনিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী হবে এবং আগামীদিনে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা আরও বাড়বে বলে মনে করে বিএনপি। দলটির সংশ্লিষ্ট নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার দেওয়ার উদ্যোগ খুবই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। প্রবাসীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
মোট ভোটার ও ইসির কার্যক্রম: খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশের মোট ভোটার সাড়ে ১২ কোটির বেশি। মোট ভোটারের ১০ শতাংশের বেশি বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। প্রবাসে থাকা এসব ভোটার বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছেন।
অথচ তারা জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট প্রদান কার্যক্রম থেকে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে এবারই প্রথম প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। সে অনুযায়ী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনেই প্রবাসীদের ভোট নেওয়ার লক্ষ্যে এরই মধ্যে প্রবাসীদের ভোটগ্রহণের বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে ইসি।
বাংলাদেশ থেকে কত মানুষ প্রবাসে স্থায়ী হতে যায়, এ বিষয়ে সঠিক পরিসংখ্যান বা তালিকা কোথাও নেই। এ অবস্থায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনশক্তি ব্যুরো, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসহ (বায়রা) বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে ইসি। এতে দেখা গেছে, অন্তত ৪০টি দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের আধিক্য রয়েছে। এসব দেশে ১ কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ জন প্রবাসী রয়েছেন।
দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সৌদি আরবসহ সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য, লিবিয়া, সুদান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, হংকং, মিশর, ব্রুনাই, মরিশাস, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, চায়না, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, তুরস্ক ও সাইপ্রাস। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪০ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮৮ প্রবাসী রয়েছেন সৌদি আরবে এবং সবচেয়ে কম রয়েছে নিউজিল্যান্ডে ২ হাজার ৫০০ জন। এসব প্রবাসীর মধ্যে ৭০ শতাংশের মতো ভোটারের এনআইডি আছে বলে ধারণা করছে ইসি। যাদের মধ্যে নির্বাচনে ৫০ শতাংশ ভোটারের সাড়া পাবেন বলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, বিভিন্ন দেশে ঠিক কত সংখ্যক প্রবাসী রয়েছেন তার সঠিক হিসাব নেই। প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থাগুলোর সঙ্গে আমরা কথা বলে জেনেছি, সেই সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ বা এর কিছু বেশি হবে। এদের মধ্যে অন্তত ৭০ শতাংশ বাংলাদেশির এনআইডি আছে। সেই হিসাবে ৫০ লাখের মতো ভোটারকে পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।
ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সূত্র জানায়, ডাক বিভাগের সহযোগিতায় পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট নেবে ইসি। এজন্য ডিজিটাল ভোটিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি হবে, যেখানে প্রবাসীরা মুখের ছবি ও এনআইডি যাচাই করে ভোটার হবেন। এরপর ডাকযোগে ব্যালট পাঠানো হবে এবং কিউআর কোড, ওটিপি ও নিরাপত্তা যাচাইয়ের মাধ্যমে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা থাকবে। ভোটাররা ব্যালটে পছন্দমতো প্রতীক চিহ্নিত করে ফেরত খামে ভরে হলোগ্রাম স্টিকার দিয়ে সিল করে নিকটস্থ পোস্ট অফিসে জমা দেবেন। পরে ডাক বিভাগ ব্যালটগুলো ইসিতে ফেরত পাঠাবে, সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে যাবে।