বর্তমান সরকারকে আর টিকতে দেওয়া যায় না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, সরকারকে বলব, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন এবং পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। সংসদ বিলুপ্ত করুন এবং একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার মাধ্যমে জনগণের পার্লামেন্টে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত করে তারাই সরকার প্রতিষ্ঠা করবে।
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাবের কথা তুলে ধরে আজ রবিবার সকালে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কৃষক দলের সমাবেশে এ কথা বলেন।
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা মোটরসাইকেল চালায় তারা তো এখন চোখে অন্ধকার দেখছে। চোখে অন্ধকার দেখছে আমাদের কৃষক ভাইয়েরা। ডিজেলের দাম বাড়লে কিভাবে সেচের কাজ করবেন? এটাতে সরকারের কোনো কিছু যায় আসে না। কারণ, জনগণ তো তাদের দরকার নাই। তাদের আছে পুলিশ বাহিনী, বন্দুক বাহিনী, বিজিবি বাহিনী-এই বাহিনী দিয়ে সে দেশ চালাবে।
ঐক্যবদ্ধের আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সবাই সংঘবদ্ধ হচ্ছি, ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি। আসুন, আর নিজেদের মধ্যে ছোট-খাটো বিভেদ সৃষ্টি না করে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৯৭১ সালের আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল জনগণের একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করা এবং একটা সাম্য তৈরি করা সেটা করি।
সরকার মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, দেশের কিছু মানুষকে সরকার ধনী থেকে আরো ধনী বানিয়েছে। আর কিছু মানুষকে গরিব থেকে গরিবে নিয়ে গেছে। আপনারা বড় বড় বড়াই করেন, মিথ্যা তথ্য দেন। একটা তথ্যও তাদের সঠিক না। সমস্ত তথ্যগুলো হচ্ছে জনগণকে বিভ্রান্ত করবার জন্য।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, পেট্রল-ডিজেল-অকটেন সব কিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে এই সরকার। গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে, পানির দাম বাড়িয়েছে, সারের বাড়িয়েছে। কোথায় যাবে মানুষ? আপনাদের পকেটে বহু দুর্নীতির টাকা আছে, ঘুষের টাকা আছে। কিন্তু আমাদের পকেটে ভাই নিজের বেঁচে থাকার পয়সাটুকু শেষ হয়ে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও দেশে কমে না মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে সারের দাম বাড়বে, যাতায়াত খরচ বেড়ে যাবে, সব কিছুর দাম বাড়বে। অর্থনীতিতে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং অর্থনীতি খারাপের দিকে যাবে? তেলের কেন বাড়ল? পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লোকসানে যাচ্ছে। লোকসানে কেন যাবে? ৫ বছর তো এই প্রতিষ্ঠান লাভ করেছে প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকা। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কম ছিল। কিন্তু আপনারা কমাননি। এখন কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করেছে। আমাদের হাছান মাহমুদ (তথ্যমন্ত্রী) সাহেব বললেন, বিশ্বের সব দেশে নাকি তেলে দাম আমাদের চেয়ে বেশি। আমেরিকাতে ১৪ ডলার ছিল, তেলের দাম কমানোর সঙ্গে সঙ্গে তা ৩ ডলারে পৌঁছেছে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের দাম কমছে তখন তারাও কমায়, আমাদের দেশে- আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের দাম কমে তখন এখানে (বাংলাদেশে) তেলের দাম বাড়ানো হয়। কেন? তারা যে লুটপাট করে, তারা যে চুরি করে, দুর্নীতি করে সেই টাকাকে হালাল করার জন্য জনগণের পকেট থেকে কেড়ে নিয়ে যায়। পয়সা আমরা দেই।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, এক যুগ ধরে বাংলাদেশের উন্নয়ন উন্নয়ন শুনে আসছি। এই উন্নয়নটা কিসের উন্নয়ন? এই উন্নয়নটা হচ্ছে বাংলাদেশে ধর্ষণের জোয়ার, এটা কোনো উন্নয়নের জোয়ার না, বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জোয়ার, এটা কোনো উন্নয়নের জোয়ার না, বাংলাদেশে মানুষের অধিকার হরণের জোয়ার, কোনো উন্নয়নের জোয়ার না। এটা হচ্ছে সরকারের মিথ্যা কথার জোয়ার। এটা হচ্ছে ব্যাংক লুটের জোয়ার, এই জোয়ারে বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকে আর কিছু অবশিষ্ট নাই। প্রত্যেকটা ব্যাংককে আওয়ামী লুটেরা বাহিনী ধবংস করে দিয়েছে- আপনারা সহসাই আস্তে আস্তে তা বুঝবেন। এই জোয়ার ডলারের অতিমূল্যায়ন এবং টাকার অবমূল্যায়ন। অতত্রব এই জোয়ারের বিরুদ্ধে আর প্রতিবাদ নয়, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের পরিচালনায় সমাবেশে বিএনপির শামসুজ্জামান দুদু, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, ফজলুল হক মিলন, আবদুস সালাম আজাদ, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, ঢাকা মহানগর বিএনপি দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের আমিনুল হকসহ কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
এ জাতীয় আরো খবর..