জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেত আগামী রবিবার পাঁচ দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন। তাঁর এ সফর ঘিরে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়ে উঠেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও সংস্থা।
গতকাল বুধবার জেনেভায় ৯টি মানবাধিকার সংগঠন এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরপ্রধানের সফরে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানানো উচিত, বিশেষ করে ‘নাগরিক সমাজের জন্য সুযোগ সংকুচিত হওয়া’ ও ‘নিরাপত্তা বাহিনীর নিপীড়নের’ নিন্দা জানানো উচিত।
এই সংগঠনগুলো হলো অ্যান্টি-ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক, এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিস-অ্যাপিয়ারেন্স, এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ফোরাম-এশিয়া), ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের এলিয়স জাস্টিস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ), ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিস-অ্যাপিয়ারেন্সেস, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস ও রবার্ট জে কেনেডি হিউম্যান রাইটস।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরের প্রধান মিশেল বাশেলেত ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন। এ ছাড়া তিনি মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করতে পারেন। মিশেল বাশেলেতের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শনেরও কথা রয়েছে।
এ সফরকে সামনে রেখে গত ২১ জুলাই ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আন্ত মন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, গত বছর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান ছয় কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ এ সফরকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। এই সফর থেকে বাংলাদেশের সম্ভাব্য অর্জন ও ঝুঁকিগুলোও বিবেচনায় নিয়েছে সরকার, বিশেষ করে এই সফর ঘিরে বিভিন্ন মহলের নানামুখী প্রচারণার আশঙ্কাও আছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহিরয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরের প্রধান মিশেল বাশেলেতের সফরে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জনগুলো তুলে ধরবে সরকার। তিনি বলেন, ‘আমরা এই সফরের জন্য অধীর অপেক্ষায় আছি। তিনি অগ্রগতি দেখবেন এবং চ্যালেঞ্জগুলো জানতে পারবেন। ’
এইচআরডাব্লিউসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বিবৃতিতে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ নিয়েও মন্তব্য রয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগে নাগরিক সমাজের ওপর চাপ বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছে সংগঠনগুলো।
২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগে ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ছিল। ওই আইন এবং ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সরকারের সমালোচনা, সাংবাদিক নিপীড়ন ও মুখ বন্ধ করতে ব্যবহার করা হয়েছে। ওই আইনগুলোর আওতায় অনেক মামলা হয়েছে। সেগুলো অনেক বছর ধরে চলছে।
ওই সংগঠনগুলো বলেছে, মিশেল বাশেলেতের উচিত গুম, নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানানো। নিরাপত্তা বাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘন করলে তাদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ঝুঁকিতে পড়তে পারে―এমন বার্তা দিতেও মিশেল বাশেলেতকে ওই ৯ সংগঠন আহ্বান জানিয়েছে।
এ জাতীয় আরো খবর..