ভোলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের দুজন নেতা নিহতের ঘটনায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দেশব্যাপী হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচির জন্য চাপ দিলেও সেই পথে হাঁটেনি দলটি। বরং তারা ঘটনা বিশ্লেষণ করছে। এটি পরিকল্পিত হামলা, নাকি পুলিশের ধারাবাহিক ‘মারমুখী আচরণেরই’ বহিঃপ্রকাশ, তা খতিয়ে দেখছেন দলের নীতিনির্ধারকরা।
হরতাল না দেওয়ার পথে কয়েকটি যুক্তি তুলে ধরছেন শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
তাঁরা বলছেন, বিএনপি আন্দোলনের উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় আছে। সে সময়টা যত দিন না আসবে তত দিন কঠোর কর্মসূচির পথে যাবে না তারা।সরকারের মেয়াদের শেষ সময় নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা থাকলেও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরি হলে যেকোনো সময় কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার কৌশল নিয়েছে দলটি।
ভোলার ঘটনার পরদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্য দেওয়ার সময় নেতাকর্মীরা হরতাল দেওয়ার দাবি তুলে স্লোগান দেন। জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আগে রাজপথ দখলের নির্দেশ দিয়ে বলেন, হরতাল পরে, আগে মাঠ দখল করতে হবে।
ফখরুল ইসলামের বক্তব্যের সূত্র ধরে বিএনপির একাধিক শীর্ষস্থানীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে কথা বলেছে কালের কণ্ঠ। তাঁরা বলেন, আন্দোলনের জন্য ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ অতিষ্ঠ। লোড শেডিংয়ের কারণে মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। জ্বালানি ও ডলার সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য। এসব সংকট নিয়ে বিএনপি ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকবে এখন। এরই মধ্যে পাঁচ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিএনপির এক নেতা বলেন, ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে সবাই সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে একমত হয়েছে। সবাই যার যার অবস্থান থেকে সরকারবিরোধী কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। সব দল যখন এক মঞ্চে এসে আন্দোলনের কর্মসূচি দেবে তখন তা ভিন্ন মাত্রা পাবে। যেহেতু ঐক্য প্রক্রিয়া চূড়ান্ত রূপ নেয়নি, তাই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু এখনই সম্ভব নয়।
সংশ্লিষ্ট নেতাদের মতে, সরকারের শেষ সময়ে নানা ধরনের সংকট তৈরি হয়। সরকার নানামুখী চাপে থাকে। এর সঙ্গে যোগ হয় সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পশ্চিমা দেশসহ দাতাদের চাপ। এবার সেই চাপ আগেভাগে শুরু হয়েছে।
বিএনপি নেতারা মনে করছেন, দেশে এখন আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি হতে পারে। সে জন্য বিএনপির প্রস্তুতি আছে। দলের সব ইউনিট ও সংগঠনকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হরতাল না দিলেও আমরা ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্যে আছি। আন্দোলনের মাধ্যমে রাজপথ দখলে নিতে পারলেই হরতাল দেওয়া হবে। ’
তদন্ত শেষে ঢাকায় প্রতিনিধিদল
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে দলের একটি প্রতিনিধিদল ভোলায় গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার তদন্ত করেছে। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা স্থানীয় জনগণ, সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শী নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। সবার বক্তব্যে শুনে তাঁরা বলেছেন, সেদিন একতরফা পুলিশি আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন নেতাকর্মীরা।
প্রতিনিধিদলটি গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফিরেছে। দলের তদন্ত কমিটির প্রধান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিবাদের জবাবে পুলিশ লাঠিপেটা এবং পরে টার্গেট করে গুলি করেছে। তিনি জানান, তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে কমিটির সদস্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
জেলা বিএনপির অর্থ সহায়তা
নিহত ছাত্রদল সভাপতি নূরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুর রহিমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় গতকাল বাদ জুমা মসজিদে মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে সকালে নূরে আলমের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানান জেলা বিএনপি সভাপতি নবী আলমগীরসহ জেলার শীর্ষস্থানীয় নেতারা। তাঁরা নূরে আলমের পরিবারকে নগদ অর্থ সহায়তাও করেন।
এ জাতীয় আরো খবর..