ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় সাংবাদিক মুজাহিদুল ইসলাম নাঈমের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আলফাডাঙ্গা থানায় মঙ্গলবার সকালে করা মামলায় পৌর মেয়র সাইফুর রহমান সাইফারের ভাই জাপান মোল্যা ও পারুল বেগম (৫০) নামে এক নারীর নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে মামলার আসামি পারুল বেগমকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। প্রধান আসামি পলাতক জাপান মোল্যাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদুজ্জামান।
ওসি ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় ১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আসামিকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি জাপান মোল্যা এখনো পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। ’
মুজাহিদুল ইসলাম নাঈম জাতীয় দৈনিক ঢাকা টাইমসের নিজস্ব প্রতিবেদক ও আালফাডাঙ্গা প্রেস ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সোমবারের দুপুরের হামলার পর গুরুতর আহত সাংবাদিক মুজাহিদকে স্থানীয়রা উদ্দার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানো হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ১ আগস্ট দুপুরের দিকে আলফাডাঙ্গা বাস কাউন্টারে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সাংবাদিক মুজাহিদের ওপর হামলা করেন পৌর মেয়রের ভাই জাপান মোল্যা এবং পারুল বেগম। তখন জাপান মোল্যা সাংবাদিক মুজাহিদকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তুই জানিস না যে আমি মেয়রের ভাই। আমার নামে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের সাধ আজ তোকে মিটিয়ে দিব। ’ এই বলে জাপান মোল্যা তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে মুজাহিদের ওপর হামলা চালায়।
এজাহারে আরো অভিযোগ আনা হয়েছে, অজ্ঞাতনামা আরো ৪-৫ জন সন্ত্রাসী মুজাহিদের ওপর হামলায় অংশ নেন। তাদের সহায়তায় জাপান মোল্যা তার সঙ্গী পারুল বেগমের ওড়না দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে দুই দিক দিয়ে টান দিয়ে মুজাহিদকে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে।
উল্লেখ্য, সোমবার দুপুরে আলফাডাঙ্গায় সাংবাদিক মুজাহিদুল ইসলাম নাঈমের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালায় আলফাডাঙ্গার পৌর মেয়রের ভাই ও তার অনুসারীরা। স্থানীয় পরিবহন বাসস্টান্ডে হামলায় গুরুতর আহত সাংবাদিক মুজাহিদকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ সময় তাকে দেখতে যান আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), মধুখালী সার্কেল এএসপি, আলফাডাঙ্গা থানার ওসি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় সাংবাদিক মুজাহিদকে লোহার রড, স্ট্যাম্প, দেশি অস্ত্র-সস্ত্র দিয়ে পেটানো হয়। এ সময় স্থানীয়রা তাকে রক্ষায় এগিয়ে এলে তাদের ওপর চড়াও হয় দুর্বৃত্তরা। এতে বেশ কজন আহত হন।
জানা গেছে, আলফাডাঙ্গার রাজধানী পরিবহনের কাউন্টারে টিকেট কিনতে যান রমিজ নামের এক যুবক। তিনি ঢাকায় যেতে একটি টিকেটের দাম পরিশোধ করে বাসে ওঠেন। বাস ছাড়ার আগ মুহূর্তে ‘ক্যাশ কাউন্টার’ থেকে বলা হয় রমিজ টিকিটের টাকা দেননি। তাই তাকে ঢাকায় যেতে দেওয়া হবে না।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টির মীমাংসা করে দিতে চাইলে সাংবাদিক মুজাহিদের ওপর চড়াও হয় কাউন্টারের ম্যানেজার জাপান মোল্লা ও তার সহযোগীরা। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মুজাহিদকে বেধড়ক পেটানো হয়।
সাংবাদিক মুহাজিদকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এমন মারপিট করা হয়েছে জানিয়েছে স্থানীয় এক সাংবাদিক নেতা বলেন, ‘তাকে মেরে ফেলার জন্য ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয়রা এগিয়ে আসায় তিনি প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। ’
এদিকে স্থানীয় প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন সাংবাদিকরা। তারা বলছেন, এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। দ্রুত প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে সাংবাদিকরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।
এ জাতীয় আরো খবর..