×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৭-২৯
  • ৬৯ বার পঠিত
দেশে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে এরই মধ্যে ভারত থেকে ১২ হাজার ২২৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু বাজারে চালের দাম না কমে উল্টো বাড়তে শুরু করেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে মোটা চাল ৫০ কেজির বস্তায় ২৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। মিনিকেটের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা পর্যন্ত।

খুচরা বাজারে কেজিতে এক থেকে দুই টাকা বেড়েছে প্রায় সব ধরনের চালের দাম।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি করা চালের দাম বেশি বলে দেশের বাজারে দাম কমছে না। বরং বাজারে দাম বাড়ছে। যদিও খাদ্য মন্ত্রণালয় আশা করেছিল, চাল আমদানি শুরু হলেই দেশের প্রধান এই খাদ্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করবে।

আমদানিকারকরা বলছেন, ডলারের উচ্চমূল্য এবং ভারতে চালের দাম বাড়তি থাকার কারণে চাল আমদানিতে খরচ বেড়ে গেছে। আমদানীকৃত চালের সব খরচ হিসাব করে দেখা গেছে, দেশীয় বাজারের চালের তুলনায় এক থেকে তিন টাকা পর্যন্ত বেশি খরচ পড়ে গেছে। এ কারণে অনেক আমদানিকারকই চাল আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

চালের ভরা মৌসুমেও দেশের বাজারে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবসায়ীদের কম শুল্কে চাল আমদানির সুযোগ দিয়েছে সরকার। চার দফায় এ পর্যন্ত ৯ লাখ ১০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব (বৈদেশিক সংগ্রহ) মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকার চাল আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর এখন পর্যন্ত ভারত থেকে ১২ হাজার ২২৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। ’

ভারত থেকে ৫০০ মেট্রিক টন মোটা চাল আমদানি করেছে মেসার্স কাজী সুবহান ট্রেডিং করপোরেশন। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক কাজী সুজন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডলারের দাম বাড়ার কারণে যাঁরা চাল আমদানি করছেন, সবাই ক্ষতির মুখে পড়ছেন। প্রতি কেজি চালে দুই থেকে আড়াই টাকার মতো লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হয়েছে আমার ৫০০ মেট্রিক টন চাল। সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি, ডলারের দাম স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত আর চাল আমদানি করব না। ’

এই ব্যবসায়ী আরো বলেন, ‘দেশের বাজারে চালের সংকটের কারণে সরকার শুল্ক কমিয়ে আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। এখন ডলারের দাম বাড়ার কারণে সাহস পাচ্ছেন না আমদানিকারকরা। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে আমদানি করে চাল নিয়ে এসেছে, তারা সবাই ধরা খেয়েছে। ’

আমদানি অনুমতি পাওয়ার পরও চাল আমদানি করতে চাচ্ছেন না মেসার্স হেনা এন্টারপ্রাইজের মালিক আব্দুল হাকিম মণ্ডল। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী বলে আপাতত চাল আমদানি করতে চাচ্ছি না। ’

আমদানির পরও রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম কমেনি। জানতে চাইলে রাজধানীর বাবুবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সলিম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, বাজারে আমদানি চাল এলে দাম কিছু কমবে। কিন্তু এখন চিত্র উল্টো। আমদানিকারকরা বেশি দামে চাল বাজারে ছাড়ছেন, এ কারণেই আবার দাম বাড়ছে। বাবুবাজারে পাইকারি বিক্রিতে প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় ২৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘পাইকারিতে এখন মোটা চাল বি-২৮ ও পাইজাম ৫০ কেজির বস্তা দুই হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার ৪৫০ টাকা, চিকন চাল মিনিকেট বস্তা তিন হাজার থেকে তিন হাজার ২৫০ টাকা এবং নাজিরশাইল বস্তা তিন হাজার ২৫০ থেকে তিন হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ’

কারওয়ান বাজারের পাইকারি ও খুচরা চাল ব্যবসায়ী ঢাকা রাইস এজেন্সির মালিক মো. সায়েম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজারে মোটা চালের চেয়ে চিকন চাল মিনিকেটের দাম বেশি বেড়েছে। খুচরায় প্রতি কেজি মিনিকেট চাল দুই টাকা পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা, নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮২ টাকা পর্যন্ত। মোটা চাল বি-২৮ ও পাইজাম কেজিতে ৫০ পয়সা থেকে এক টাকা পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। ’

এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমদানি চালের দাম বেশি হওয়ায় বাজারে ভারতের মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকা, একই মানের মিনিকেট দেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা। একই চালের দাম দুই ধরনের হওয়ায় দেশি চালের দাম বাড়ছে। ’

রাজধানীর জোয়ারসাহারা বাজারের মেসার্স ভাই ভাই স্টোরের ব্যবসায়ী মো. নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পাইকারি বাজারে চালের দাম বাড়ায় আমাদের এখন মোটা ও চিকন দুই ধরনের চাল কেজিতে এক  থেকে দুই টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। ’

চালের বাজারের পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চালের আমদানি ব্যয় বাড়ায় দেশের বাজারে চালের দাম কমছে না। আর চালের আমদানি শুল্ক হার ২৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা প্রয়োজন। বর্তমান বাস্তবতায় সরকারের চাল আমদানির সিদ্ধান্ত সঠিক, তবে শুল্ক কমালে ব্যবসায়ীরাও চাল আমদানিতে উৎসাহিত হবেন। তখন সুফল পাওয়া যাবে। ’

এদিকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চালের দাম বাড়লেও আটার দাম কিছুটা কম, খোলা প্রতি কেজি আটা বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৫ টাকায়। প্যাকেট আটা কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, রসুন দেশি ৮০ টাকা, আমদানি রসুন ১০০ টাকা। আদা কেজি ১০০ টাকা, মসুরের ডাল চিকন ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, মোটা ডাল ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম আগের মতোই রয়েছে। প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat