স্বাধীনবাংলা, (ফরিদপুর) প্রতিনিধি :
ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চরভদ্রাসন থানায় ফরিদপুর জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ও চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা নওয়াবুল ইসলাম এ মামলা করেন।
১০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন, জেলা প্রশাসকসহ নির্বাচনী দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্রেটদের মুঠোফোনে গালমন্দ ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ আনা হয়েছে এজাহারে। মামলায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ২০১৩-এর বিধি ৭৪(১), বিধি ৭৪(২), (ক), (খ) ও (গ) এবং বিধি ৭০(১) (ক) এবং উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬-এর বিধি ২(১৪) লঙ্ঘনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।
আরোও পড়ুন : দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর সিজিএম আদালত ভবন উদ্বেধন করলেন -আইনমন্ত্রী ***
ইসি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ২০১৩-এর বিধি ৭৪ বা এর উপধারা লংঘনের অপরাধে ন্যূনতম ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। একই ধরনের সাজার বিধান রয়েছে ধারা ৭০ বা এর উপধারা লংঘনের অপরাধেও। এছাড়া নির্বাচন আচরণ বিধিমালা লংঘনের দায়ে সর্বোচ্চ ৬ মাস কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, প্রশাসনকে হুমকি দেয়া, নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাজে বাধা দেয়া এবং যে সময়ের মধ্যে বিজয় মিছিল করা বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারবেন না সে সময়ে যাওয়া সবই তিনি করেছেন। তিনি আইন ভঙ্গ করেছেন। যার কারণে রিটার্নিং অফিসার মামলা করেছেন। তিনি আরও বলেন, শাস্তি কী হবে তা আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন।
সচিব বলেন, নির্বাচনে বেশি ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়ায় ফরিদপুর জেলা প্রশাসক নিয়ে তিনি যেসব কথা বলেছেন, উনার এসব বলার কথা নয়। এছাড়া তিনি জেলা প্রশাসককে টেলিফোন করে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছেন, হুমকি দিয়েছেন। আরেকটি বিষয় হচ্ছে জাল ভোট প্রদানকারী এক ব্যক্তিকে ধরে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে হস্তান্তর করার কারণে স্থানীয় সংসদ সদস্য ক্ষুব্ধ হন এবং এসি ল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রকাশ-অযোগ্য ভাষা ব্যবহার করে ইউএনওকে ফোন দেন। এসব ঘটনাসহ নির্বাচন বিধিমালা পরিপন্থী যেসব বিষয় রয়েছে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মামলা করা হয়েছে। আচরণবিধি লংঘন করে সমাবেশ করার দায়ে অংশগ্রহণকারী অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ইসির সিনিয়র সচিব বলেন, প্রাথমিক যে রিপোর্ট এসেছে তাতে উনার (নিক্সন চৌধুরী) নামই এসেছে। আর নির্বাচনী কর্মকর্তারা বাকিদের চেনেনও না। যেহেতু অভিযোগ একজনের বিরুদ্ধে, তাই একজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তবে ওই ঘটনায় কমিশন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটির রিপোর্টে আর কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা জানা যাবে। তদন্তে পুরো বিষয়টি উঠে এলে কমিশন আবারও পর্যালোচনা করবে। সেক্ষেত্রে কমিশন যেটা ভালো মনে করে সেই সিদ্ধান্ত নেবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা নওয়াবুল ইসলাম বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় মামলাটি করেন। এ সময় উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম, জেলা নির্বাচন অফিসারের উচ্চমান সহকারী বিল্লাল হোসেন ও ব্যক্তিগত সহকারী সুমন ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
আরোও পড়ুন :মানুষের মাঝে জনসচেতনতাও সৃষ্টি করা এবং ধর্ষণ রুখতে ব্যাপক ব্যবস্থা নিতে হবে- প্রধানমন্ত্রী ***
এজাহারে বলা হয়, নিক্সন চৌধুরী চরভদ্রাসন উপজেলা উপনির্বাচনে কেন্দ্রভিত্তিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত করায় জেলা প্রশাসক অতুল সরকারকে মোবাইল ফোন করে কৈফিয়ত চান। এছাড়া ওই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকধারী প্রার্থী ১১ হাজারে বেশি ভোটে জয়লাভ করার পরও নিক্সন চৌধুরী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রাত ৮টায় উপজেলা আ’লীগ কার্যালয়ের সামনে হাজার হাজার জনতাবদ্ধ সমাবেশে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। পরে নিক্সন চৌধুরীর পুরো বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয়। একজন সংসদ সদস্য হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচনী এলাকায় উপস্থিত থেকে নির্বাচনের প্রচারণা ও কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে এবং নির্বাচনী দায়িত্ব ও সরকারি কর্তব্য পালনরত কর্মকর্তাদের হুমকি, গালিগালাজ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে নিক্সন চৌধুরী নির্বাচনী বিধিমালা লঙ্ঘন করেছেন। মামলা করার পর নওয়াবুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী এ মামলাটি করা হয়েছে।
আরোও পড়ুন: এএসপি ফারুক বরিশাল রেঞ্জ’র শ্রেষ্ঠ সার্কেল অফিসার***
থানা প্রশাসন পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। চরভদ্রাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজনীন খানম বলেন, নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের এজাহার আমার কাছে দাখিল করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া হবে। সূত্রঃ
দৈনিক যুগান্ত থেকে নেওয়া।