×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৭-০৬
  • ৫৩ বার পঠিত
ঈদ যাত্রায় মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলবে কি না- প্রশ্নের সুস্পষ্ট জবাব মিলছে না। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো আদেশ জারি করা হয়নি। মৌখিকভাবে চলাচল বন্ধের কথা বলা হলেও তাতে রয়েছে নানা অস্পষ্টতা। আবার এমন মৌখিক নির্দেশনার আইনি ভিত্তি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

গত ঈদে মহাসড়কের পরিস্থিতি ও ঈদ যাত্রা ছিল স্বস্তির। মহাসড়ক ছিল তুলনামূলক ফাঁকা। এর পেছনের মোটাদাগে তিন কারণের একটি ছিল মোটরসাইকেলের চলাচল। তখন সারা দেশে ২৫ লাখ মোটরসাইকেলে প্রায় কোটি যাত্রী পরিবহন করা হয়। তবে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল প্লাজায় যানজটের নতুন মাত্রা দেখা গিয়েছিল। আবার দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলের সংখ্যাও বেশি ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, মোটরসাইকেল কখনো গণপরিবহনের বিকল্প হতে পারে না। সুতরাং গণপরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

এবারের ঈদ যাত্রা নিরাপদ করতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গত রবিবার সভা হয়। সভা থেকে বের হয়ে প্রথমে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী সংবাদমাধ্যমকে জানান, ঈদ যাত্রায় মহাসড়কে রাইডশেয়ারিং বা ভাড়ায় মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। যৌক্তিক কারণ ছাড়া ঈদের আগে তিন দিন, ঈদের দিন এবং ঈদের পরের তিন দিন এক জেলা থেকে আরেক জেলায় মোটরসাইকেল চলাচল করবে না। তবে প্রয়োজনে যৌক্তিক কারণে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালানো যাবে।

রাইডশেয়ারিং সার্ভিস ২০১৭ নীতিমালার অনুচ্ছেদ ঘ(১)-এ বলা হয়েছে, ‘কোনো মোটরযানের মালিক কোনো রাইডশেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে রাইডশেয়ারিং সেবা দিতে পারবে না। ’ আবার রাইডশেয়ারিংয়ের প্রচলিত আইনে দূরপাল্লায় মোটরসাইকেল চালানোর সুযোগ নেই। তাহলে সড়ক পরিবহন সচিবের এমন কথার ভিত্তি কী, তা পরিষ্কার নয়। তা ছাড়া ‘প্রয়োজন’ ও ‘যৌক্তিক’ কারণের ব্যাখ্যা তো একেকজনের কাছে একেক রকম। আবার যাত্রী পরিবহন না করে নিজ পরিবারের সদস্য নিয়ে কি মহাসড়কে চলা যাবে? এ প্রশ্নের সুস্পষ্ট জবাব নেই।

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মহাসড়কে মোটরসাইকেল বন্ধের মৌখিক নির্দেশনার আইনি কোনো ভিত্তি নেই। তবে কর্তৃপক্ষ চাইলে বিশেষ ক্ষমতাবলে নির্দেশনা জারি করতে পারে। সরকারি আদেশ জারি না হলে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে কেউ আদালতে চ্যালেঞ্জ করলে মৌখিক নির্দেশনা অবৈধ বলে গণ্য হবে। ’ তিনি বলেন, প্রচলিত আইনে শাস্তির বিধান না থাকলে আদেশ জারির পরও পুলিশ শুধু মহাসড়কের মুখ থেকে মোটরসাইকেল সরিয়ে দিতে পারবে, কিন্তু কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে না।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পরদিন গত সোমবার ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বৈঠক করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। সেখানেও মোটরসাইকেল নিয়ে আলোচনা হয়, তবে সিদ্ধান্ত হয়নি। এই দুই বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সূত্র কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছে, ‘আলোচনায় মোটরসাইকেল বন্ধের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বাস মালিকরা মোটরসাইকেল বন্ধের জন্য বেশি চাপ দেন। ’

বৈঠকে অংশ নেওয়া যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, বৈঠকে সবার মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করা হবে না। এখানে একটি ভুল-বোঝাবুঝি হচ্ছে—মহাসড়কে যাত্রী পরিবহন বন্ধ করা হয়েছে, কিন্তু মোটরসাইকেল নয়। কেউ চাইলে তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বা একা চলাচল করতে পারবেন।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী পুরো বিষয়টি নিয়ে কালের কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জানান, প্রয়োজনে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালানো যাবে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে গেছেন, তাঁকে নিয়ে হাসপাতালে যেতেই হবে। সার্ভিস লেনে মোটরসাইকেল চালানো যাবে, যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। পুরো বিষয়টি শিগগিরই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবার জানানো হবে। তবে সরকারিভাবে কোনো আদেশ জারি করার পরিকল্পনা নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বাস মালিকদের পক্ষ থেকে আলোচনায় বারবার বলা হচ্ছে, মোটরসাইকেল ঝুঁকিপূর্ণ যান। ঈদে মোটরসাইকেলের কারণে দুর্ঘটনা বেশি হয়; তাই মোটরসাইকেল বন্ধ রাখা উচিত। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, যদি দুর্ঘটনা বন্ধের কারণ হয়, তবে সারা বছর কেন মোটরসাইকেল বন্ধ নয়।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের গত মাসের প্রতিবেদন বলছে, দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫২৪ জন নিহত হয়েছে, এর মধ্যে মোটরসাইকেল আরোহী ছিল ২০৪ জন, যা মোট নিহতের ৩৮.৯৩ শতাংশ এবং মোট দুর্ঘটনার ৪২.১৮ শতাংশ।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামছুল হক বলেছেন, ‘আমাদের ভালো গণপরিবহনের অভাব আছে এটা ঠিক। সরকারের উচিত ভালো বিকল্প তৈরি করা। বিআরটিএর উচিত বাসের সংখ্যা নয়, বাসের ট্রিপ কিভাবে বাড়ানো যায় সেদিকে নজর দেওয়া। মোটরসাইকেল হলো খুচরা যান, মহাসড়কে এর ব্যবস্থাপনা করা কঠিন। মহাসড়কে মোটরসাইকেল বন্ধ করতে হলে সারা বছরই বন্ধ রাখা উচিত, কিন্তু আমরা সেটা করছি না। ’

ঈদ যাত্রায় মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করা হলে তা পরিকল্পিতভাবে আগে থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে করা উচিত বলে মনে করেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে এসে মোটরসাইকেল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। ’

মোটরসাইকেল বন্ধে বাস মালিকদের কোনো চাপ নেই বলে দাবি করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি বলেন, ‘মহাসড়কে মোটরসাইকেল বন্ধ করা হবে কি না, এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। এসব নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। ’ তিনি বলেন, মোটরসাইকেলের জন্য বাসের ব্যবসায় তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে অতিরিক্ত দুর্ঘটনার কারণে ঈদের সময় মহাসড়কে মোটরসাইকেল বন্ধ রাখা দরকার।

বাইকারদের মানববন্ধন

ঈদ যাত্রায় মহাসড়কে মোটরসাইকেল বন্ধ করে দেওয়ার আলোচনার পেছনে বাস মালিকদের কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন মোটরসাইকেলের চালকরা। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে এ অভিযোগ তোলা হয়। মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল চালু রাখারও দাবি জানান তাঁরা।

মোটরসাইকেল চলার সুযোগ দেওয়া উচিত

গণপরিবহনসংকট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত মহাসড়কে ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে ঈদ যাত্রা নিষিদ্ধ না করার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ঈদে এই বাহনটির গতি বেঁধে দেওয়া, লাগেজ-ব্যাগেজ নিয়ে না যাওয়া, পরিবারের একাধিক সদস্য নিয়ে চলতে না দেওয়ার পাশাপাশি এই বাহনের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে চলাচলের সুযোগ দেওয়া উচিত।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat