×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৭-১৬
  • ৮১ বার পঠিত
তাঁরা তিনজন তিন জেলার বাসিন্দা। তবে একই বাড়ির পাশাপাশি কক্ষে ভাড়া থাকার সুবাদে হয়ে ওঠেন ‘আত্মার আত্মীয়’। পেশাগত কাজের সময় ছাড়া এই তিন বন্ধু একসঙ্গে চলতেন। চিরবিদায়ও নিলেন একসঙ্গে।

গতকাল শুক্রবার সকালে গাজীপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোনাবাড়ী ফ্লাইওভারে (গাজীপুর) প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন তাঁরা। গুরুতর আহত হয়েছে এক বন্ধুর আড়াই বছরের মেয়েশিশু।
গতকাল সকালেই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় যাত্রীবাহী বাস ও প্রাইভেট কারের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ঢাকার ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির দুই শিক্ষার্থী। আহত হয়েছেন তাঁদের তিন সহপাঠী বন্ধু। এ ছাড়া গতকাল সড়ক দুর্ঘটনায় সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও বগুড়ার শেরপুরে দুজন করে এবং বগুড়ার ধুনট, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও কুমিল্লার বুড়িচংয়ে একজন করে নিহত হন।

গাজীপুরে নিহতরা হলেন রাজু আহমেদ (২৫), শামীম মৃধা (৩০) ও মো. শাহিনুর রহমান (৩০)। আহত রাইসা আক্তার রাজুর মেয়ে। রাজু সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বালসাবাড়ী মরিচা গ্রামের আয়নাল হকের একমাত্র ছেলে। শাহিনুর নীলফামারী সদরের সারেরতল এলাকার আবদুল রহিমের ছেলে। শামীম বরগুনার বেতাগী পৌরসভার সেলিম মৃধার একমাত্র ছেলে। তাঁরা গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ীর দেওয়ালিয়াবাড়ী এলাকার মো. আসলামের বাড়িতে ভাড়া থাকেতেন। শামীম ও শাহিনুর পোশাক কারখানায় চাকরি এবং রাজু বাবার সঙ্গে মহাসড়কে মাটি কাটার কাজ করতেন। তাঁরা ভাড়া বাসা থেকে শাহিনুরের মোটরসাইকেলে করে পাশের বাইমাইল এলাকায় রাজুর বাবার বাসায় যাচ্ছিলেন। একসঙ্গে তিন বন্ধুর মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পরিবারে চলছে মাতম। এই তিন বন্ধুর আয়েই চলত তাঁদের মা-বাবাসহ তিনটি পরিবার।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোনাবাড়ী থানার এসআই সাখাওয়াত ইমতিয়াজ জানান, সকাল ১১টার দিকে কোনাবাড়ী ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে একটি মোটরসাইকেলে হতাহতরা বাইমাইলের দিকে যাচ্ছিলেন। কোনাবাড়ী নতুন বাজার এলাকায় বিপরীত দিকে থেকে আসা একটি প্রাইভেট কারের সঙ্গে মোটরসাইকেলটির সংঘর্ষ হয়। এতে শাহিনুর ও শামীম মোটরসাইকেল ও ফ্লাইওভারের ওপর থেকে ছিটকে নিচে পড়েন। রাজু ও তাঁর মেয়ে দুর্ঘটনাস্থলে পড়ে থাকেন। স্থানীয়রা তাঁদের উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাজু, শাহিনুর ও শামীমকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শিশু রাইসাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মোটারসাইকেলে বাবার কোলে ছিল রাইসা।

বাবা আয়নাল হক জানান, কোরবানির মাংস এবং মেয়ে রাইসাকে নিয়ে ছেলে রাজু তাঁর বাসায় আসছিলেন। জানতে পেরে বন্ধু শাহিনুর ও শামীম আসার বায়না ধরেন। তাঁরা শাহিনুরের মোটরসাইকেলে করে আসছিলেন। মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন শামীম। আয়নাল বলেন, ‘প্রাইভেট কার তিনটি প্রাণ কেড়ে নিল। একমাত্র নাতনি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। মর্গের সামনে আহাজারি করছে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা পুত্রবধূ। স্বপ্ন ছিল বাব-ছেলে মিলে রোজগারের টাকায় গ্রামে বাড়ি করব। সব ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। ’

শাহিনুরের বন্ধু তুহিন জানান, শাহিনুরের ৯ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। শাহিনূর ও তাঁর স্ত্রী মুন্নী চাকরি করে সংসার চালিয়ে গ্রামে বৃদ্ধ মা-বাবার জন্য টাকা পাঠাতেন। রোজগার থেকে অল্প অল্প জমিয়ে ছয় মাস আগে শখ করে মোটরসাইকেলটি কিনেছিলেন শাহিনুর।

ভগ্নিপতি মোহাম্মদ হোসেন বলেন, শামীমের মা-বাবা অসুস্থ। মূলত তাঁর রোজগারের টাকায় চলত মা-বাবার সংসার। তাঁর পাঁচ-ছয় বছরের এক মেয়ে আছে। দুর্ঘটনা সব তছনছ করে দিয়েছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) মো. জাকির হাসান বলেন, প্রাইভেট কারের চালক আশরাফুল আলমকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।   

দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যু

সোনারগাঁ উপজেলার দড়িকান্দি এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নিহতরা হলেন মাহিমা রহমান ও রাহাত মাহমুদ। তাঁরা ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। মাহিমা উপজেলার মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের মাঝিপাড়া গ্রামের মাহফুজুর রহমানের মেয়ে। রাহাতের বাড়ি নোয়াখালী হলেও তিনি পরিবারের সঙ্গে ঢাকার বাড্ডা এলাকায় বসবাস করেন। আহতরা হলেন মুয়াজ এস এম আনান, কাজী আবিদ শাহনেওয়াজ ও সাইফুল ইসলাম।

আহতরা জানান, সকালে ঢাকার আফতাবনগর থেকে আট শিক্ষার্থী বন্ধু মিলে দুটি প্রাইভেট কারযোগে নারায়ণগঞ্জের পানাম সিটিতে ভ্রমণে যাচ্ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দড়িকান্দি এলাকায় যাত্রীবাহী সৌদিয়া বাসের সঙ্গে একটি প্রাইভেট কারের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে কারটির পাঁচজন আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর ১টার দিকে মাহিমার ও ৩টার দিকে রাহাতের মৃত্যু হয়। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি নবীর হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আহতদের উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখানে দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে তাঁদের পরিবার। বাসটি জব্দ করা হয়েছে।

আরো আটজন নিহত

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে অজ্ঞাতপরিচয় যানবাহনের চাপায় মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পিকআপের চালকসহ দুজন নিহত হন। ভোরে হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের উপজেলার বড়বিল এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন পিকআপচালক নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার দত্তকানাই গ্রামের মৃত আব্দুল করিমের ছেলে কিরণ মৃধা (২৮) ও সিরাজগঞ্জ সদরের রেলওয়ে কলোনির মৃত দুলু শেখের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪৭)।

মহিষলুটি মাছের আড়তে আসার পথে কিরণের পিকআপটি বিকল হয়ে যায়। পরে সেটি মহাসড়কের পাশে জাহাঙ্গীর আলম ও কিরণ মেরামত করছিলেন।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের ঘোগা ব্রিজ নামক স্থানে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে বিকেলে যাত্রীবাহী দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই যাত্রী নিহত ও বাসের চালকসহ অন্তত ১০ যাত্রী আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন পুরুষ (৩৫) ও একজন নারী (৪০)। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি।

বগুড়ার ধুনট উপজেলার চানদিয়াড় এলাকায় হুকুমআলী-মথুরাপুর সড়কে সকালে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে একটির চালক নাহিদ হাসান (২২) নিহত ও অন্যটির চালক এনামুল হক (৩৫) আহত হয়েছেন। নাহিদ উপজেলার তারকান্দি গ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার রাউতাইল এলাকায় ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়কে ভোরে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় নিহত হয়েছেন অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ (৬২)। তিনি সদর উপজেলার বাজার গোপালপুর গ্রামের মৃত সোহরাব হোসেনের ছেলে।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার নাজিরহাট নতুন রাস্তার মাথায় (চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক) গতকাল মোটরসাইকেল ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে আরিফ হোসেন (৩৪) নিহত হন। তিনি ফটিকছড়ি উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নের হেঁয়াকো সেলপি সড়ক এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে।

কুমিল্লার বুড়িচংয়ে কাভার্ড ভ্যানের চাকা ফেটে খুলে গিয়ে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের ওপরে পড়লে তিনি মারা যান। সকালে উপজেলার নিমসার বাজার এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মোহাম্মদ আলী (৫৫) জেলার বরুড়া উপজেলার আদমপুর গ্রামের আনু মিয়ার ছেলে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat