×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৭-০৩
  • ৮৪ বার পঠিত
কেম্বা চার্লস আর সিডনি জনের মধ্য একটু তর্কই লেগে গেল। দুজনই বলছেন, ২০০৯ সালে তাঁরা মাঠে বসে উইন্ডসর পার্কের বাংলাদেশ–ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ানডে দুটি দেখেছেন। তর্কের বিষয়, কে কোথায় বসে দেখেছিলেন সেই দুই ম্যাচ। কেম্বার দাবি, তিনি ছিলেন স্কোরারের দায়িত্বে। পাহাড়ের দিকের কাঠের স্কোরবোর্ডটি দেখিয়ে বললেন, ‘আমি ছিলাম ওটার পেছনে। আমার কাজ ছিল নম্বর বসানো।’

সিডনি ‘না, না’ করে উঠে বললেন, ‘আরে ধুর, আমরা তো গ্যালারিতে ছিলাম। ওই যে ওই জায়গাতে।’ কেম্বা তবু তাঁর দাবিতে অটল। শেষে খেলা শুরু হয়ে যাচ্ছিল বলে তর্কটা থামল। দুজনই যে আছেন প্রেসবক্সের স্কোরারের দায়িত্বে! কেম্বা আবার ডমিনিকা জাতীয় দলের বাঁহাতি স্পিনারও। আর সিডনি একসময় ক্রিকেট খেললেও এখন ঢুকেছেন বাস্কেটবল খেলায়।

২০০৯ সালের ম্যাচ দুটি কে কোথায় দেখেছেন, সেটি নিয়ে কেম্বা–সিডনির মধ্যে দ্বিমত থাকলেও এ ব্যাপারে দুজনই একমত, ক্রিকেট তো নয়, ডমিনিকায় যেন প্রাণ ফিরেছে। এ মাসের শুরুতে উইন্ডসর ক্রিকেট পার্কে একটা ঘরোয়া টি–টেন টুর্নামেন্ট হয়েছে। গত বছর হয়েছে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট। কিন্তু ২০১৭ সালে ‘মারিয়া’র ছোবলের পর এই দ্বীপের মানুষ আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দেখেনি। পাঁচ বছর পর বাংলাদেশের বিপক্ষে দুটি টি–টোয়েন্টি দিয়েই আবার তা ফিরে পেল প্রকৃতির মায়াভরা দেশটি।

উপলক্ষটাকে বরণ করে নিতে আয়োজনের কমতি ছিল না ডমিনিকার। ইনিংস–বিরতিতে মাঠে ঐতিহ্যবাহী নাচ হলো, মাঠের বাইরের খাবারের দোকানগুলো জমে উঠেছিল ক্রিকেট ফেরার আনন্দে। গ্যালারিতে দর্শকের উপস্থিতিও খারাপ ছিল না। খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণার এক ঘন্টা পর যখন উইন্ডসর পার্কের প্রেসবক্সে বসে এ লেখা লিখছি, তখনো লাউড স্পিকারে বেজে চলছিল কান ঝালাপালা করা মিউজিক। যেন ‘অটো’ চাবি দেওয়া, বন্ধ করার কেউ নেই! ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর সংবাদ সম্মেলনটি তাই করতে হয়েছে ড্রেসিংরুমের নিচের এক রূদ্ধদ্বার কক্ষে ঢুকে।

সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় হঠাৎ করে পরিত্যক্তঘোষিত ম্যাচটি নিয়ে বাংলাদেশ কোচের যেন তৃপ্তি–অতৃপ্তি কিছুই নেই। দলের ব্যাটিংটা যেমন তাঁর মন ভরাতে পারেনি, তেমনি এমন ব্যাটিংয়ের পেছনে যুক্তিসংগত কারণও দেখছেন কোচ, ‘আমাদের শুরুটা বেশ ভালোই হয়েছিল। কিন্তু এরপর আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারিনি। তবে তারা একটা লম্বা ফেরিভ্রমণ করে এসেছে; তার ওপর কাল (পরশু) অনুশীলন করতে পারেনি। সব মিলিয়ে একটু এলোমেলো অবস্থা ছিল। আর আজ (গতকাল) বেশ গরমও ছিল। আমার বিশ্বাস, পরের ম্যাচে ওরা ভালো করবে।’

ফেরিভ্রমণ, গরম, অনুশীলন করতে না পারা—এর কোনোটাকেই অবশ্য ব্যাটিং ভালো না করার অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাননি ডমিঙ্গো, ‘অজুহাত দেওয়ার কিছু নেই। একই ঘটনা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের ক্ষেত্রেও ঘটেছে। তারাও ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন করতে পারেনি, আমাদের সঙ্গে তারাও একই ফেরিতে এসেছে।’ 

ডমিঙ্গো বরং বড় করে দেখছেন টি–টোয়েন্টি দলের কয়েকজন ক্রিকেটারের লম্বা সময় খেলার বাইরে থাকাটাকেই, ‘আমাদের কিছু ছেলে বেশ কয়েক সপ্তাহ খেলায় ছিল না। আফিফ, মাহমুদউল্লাহ—ওরা ভালোমতো অনুশীলনের সুযোগ পায়নি। মাহমুদউল্লাহ তো আমার মনে হয় ওর সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়।’

বৃষ্টিতে উইকেটের আশপাশে ভেজা থাকায় বেলা দেড়টার ম্যাচ শুরু হয়েছে বেলা সোয়া তিনটায়। ম্যাচটা তাই প্রথমে ১৬ ওভার খেলানোর সিদ্ধান্ত হয়। পরে আরেক দফা বৃষ্টিতে ম্যাচের দৈর্ঘ্য আরও ২ ওভার কমিয়ে করা হয় ১৪ ওভার। বাংলাদেশ দল শেষ পর্যন্ত ওই ১৪ ওভারও ব্যাটিং করতে পারেনি। ১৩ ওভার শেষে আবার বৃষ্টি নামলে কিছুক্ষণ পর ম্যাচটাই পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন ম্যাচ রেফারি রিচি রিচার্ডসন। এই ১৩ ওভারে বাংলাদেশের ৮ উইকেটে ১০৫ রানের ইনিংসের চুম্বক অংশ ছিল সাকিব আল হাসানের ১৫ বলে ২৯ এবং নুরুল হাসানের ১৬ বলে ২৫ রানের ইনিংস দুটি।

অবশ্য ডমিঙ্গোর অতৃপ্তি আছে তাঁদের ব্যাটিং নিয়েও, ‘ওরা ভালো ব্যাটিং করেছে। তবে সাকিব ভুল সময়ে আউট হয়ে গেছে। ওর কাছ থেকে আমাদের বড় স্কোর দরকার ছিল। সোহানও (নুরুল হাসান) এই সংস্করণে ভালো। ও বিগ হিটার, শক্তিশালী ব্যাটসম্যান। কিন্তু সেও ভুল করে আউট হলো। তার জন্য এটা শেখার একটা দিন। তবু দেখে ভালো লাগছে যে সে ফর্মে আছে।’

পরিত্যক্ত ম্যাচটা থেকে ডমিঙ্গোর প্রাপ্তি হয়তো এটুকুই। তবে ডমিনিকানরা এই ম্যাচ থেকেই অনেক কিছু পেল। খেলায় কে জিতল, কে হারল, তার চেয়েও তাদের কাছে বড় সাইক্লোন–হ্যারিকেনের দ্বীপে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রত্যাবর্তন। এটা যেন প্রকৃতির বৈরিতার বিরুদ্ধে তাদের একটা জয়ই।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat