×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৬-২৯
  • ৭৭ বার পঠিত
নেটে বোলিং শেষে তাসকিন আহমেদকে মাঠের এক পাশে ডেকে নিয়ে গেলেন অ্যালান ডোনাল্ড। সেখানে আর কেউ নেই। তাসকিনকে অনেকটা সময় নিয়ে কিছু বোঝালেন বাংলাদেশ দলের বোলিং কোচ, তাসকিন নিজ থেকেও জানতে চাইলেন কিছু। 

চার দিনেই শেষ হয়ে যাওয়া সেন্ট লুসিয়া টেস্টের পঞ্চম দিনটা ফাঁকা পেয়ে কাল দুপুরের দিকে রাসেল ডমিঙ্গো-ডোনাল্ড-জেমি সিডন্সরা দলের ৯ ক্রিকেটারকে নিয়ে গিয়েছিলেন ড্যারেন স্যামি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতিটা শুরু হয়ে গেল এদিনই। আর তাতে বিশেষ দ্রষ্টব্য হয়ে থাকল তাসকিন-ডোনাল্ডের মিনিট দশেকের ওই কথোপকথন। 

চোটের কারণে গত দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের মধ্যেই মাঠের বাইরে চলে যেতে হয় তাসকিনকে। মাঝে খেলতে পারেননি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সদ্য শেষ হওয়া দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজেও। চোট থেকে ফিরে তিনি এখন অপেক্ষায় আগামী ২ জুলাই থেকে শুরু টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে নিজের ফেরাটা রাঙাতে। তার আগে অ্যালান ডোনাল্ড কাল ভালো করে বুঝিয়ে দিলেন বল হাতে তাসকিনের কাজটা আসলে কী হবে। 

তুমি যে ধরনের বোলার, তোমার ভূমিকা হবে সব সময় গতিময় বোলিং করা এবং আক্রমণাত্মক থাকা। এটা করতে গিয়ে কখনো তুমি অনেক রান দিয়ে দেবে। আবার কখনো একাই ম্যাচ জিতিয়ে দেবে। তবে তুমি তোমার এই ভূমিকা থেকে কখনো সরবে না।
তাসকিনকে অনুশীলনে এমনটাই বলেছেন পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড
তাসকিনের জন্য সেটা নতুন কিছু নয় অবশ্য। বোলিং কোচ মাঠে তাঁর বোলিংয়ে যে দুটো জিনিস ধারণ করতে বললেন, তাসকিন বেড়েই উঠেছেন সেগুলো নিয়ে—গতি ও আগ্রাসন। অনুশীলন শেষে তাসকিন জানালেন ডোনাল্ডের সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের বিষয়ে, ‘আমি মাত্র চোট থেকে ফিরেছি। ম্যাচে আমার ভূমিকাটা কী হবে, ওটাই কোচ বোঝাতে চাচ্ছিলেন। তিনি বলেছেন, “তুমি যে ধরনের বোলার, তোমার ভূমিকা হবে সব সময় গতিময় বোলিং করা এবং আক্রমণাত্মক থাকা। এটা করতে গিয়ে কখনো তুমি অনেক রান দিয়ে দেবে। আবার কখনো একাই ম্যাচ জিতিয়ে দেবে। তবে তুমি তোমার এই ভূমিকা থেকে কখনো সরবে না।”’

বোলিং কোচের কাছ থেকে পাওয়া দায়িত্ব পালনে তাঁর সমস্যা হওয়ার কথা নয়। করোনাকালে পরিশ্রমের আগুনে নিজেকে গড়েপিটে তাসকিন এখন যে নতুন রূপে আবির্ভূত, সেটির সবচেয়ে বড় অলংকারই তো গতি আর আগ্রাসনে ভরা বোলিং।

কাল প্রায় তিন মাস পর দলের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ অনুশীলন করেছেন। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—সবই হয়েছে অনুশীলনে। চোট থেকে ফিরে প্রথম দিনে কোনো সমস্যা ছাড়াই ঘণ্টা তিনেক অনুশীলন করে তাসকিন হোটেলে ফিরেছেন স্বস্তি নিয়ে। যাওয়ার আগে তাঁর কথা, ‘অনুশীলনের শুরুতে একটু জড়তা থাকলেও পরে সব ভালোভাবে হয়েছে। এত দিন পর অনুশীলন শুরু করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’ 

তাসকিনের সেই ভালো লাগা আরও বেড়ে গেল অন্য এক প্রসঙ্গে। টেস্ট সিরিজটা তিনি না খেললেও অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টের পর তাসকিনকে প্রশংসার বানে ভাসিয়েছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। বলেছেন, তাসকিনের কাছ থেকে অন্য পেসারদের অনেক কিছু শেখার আছে। কঠোর পরিশ্রম করে তিনি দেখিয়েছেন একজন খেলোয়াড় চাইলে কীভাবে নিজের জীবনটাই বদলে ফেলতে পারেন। তাঁর এই পরিশ্রম সবাইকেই আরও ভালো করার পথ দেখাবে। আর এই যে বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের ধারটা দিন দিন বাড়ছে, সেটার জন্যও সাকিব কৃতিত্ব দিয়েছেন তাসকিনকে। তাঁকে দেখে পাওয়া অনুপ্রেরণা থেকেই নকি ভালো করার ক্ষুধা অনুভব করছেন অন্য পেসাররা। 

কাল প্রসঙ্গটা তুলতেই সলজ্জ হাসি হেসে তাসকিন বলছিলেন, ‘সাকিব ভাইয়ের কথাগুলো আমার জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরণা। চেষ্টা করব নিজেকে আরও পরিণত বোলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে, দলকে কিছু দিতে।’ 

সেই লক্ষ্যে যাত্রাটা তাসকিন ক্যারিবীয় কন্ডিশনে এই টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকেই শুরু করে দিতে পারেন। টেস্ট সিরিজটা ভালো না কাটলেও বাংলাদেশ দলের এই পেসারের আশা, টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডেতে তাঁরা হতাশ করবেন না, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে টেস্ট সিরিজটা আমাদের ভালো যায়নি। ভুলগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে, তবে শুধু এটা নিয়ে বসে থাকা যাবে না। এই মুহূর্তে আমরা টি-টোয়েন্টি সিরিজটার দিকেই তাকিয়ে আছি। চেষ্টা করব ভালো খেলে দেশকে জয় উপহার দিতে।’


এ বছরের বাকি সময়টাতে বাংলাদেশকে টি-টোয়েন্টিই খেলতে হবে বেশি। ডমিনিকা আর গায়ানায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজকে বলতে পারেন সেই যাত্রারই শুরু।

শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠেয় এশিয়া কাপ হবে এবার টি-টোয়েন্টি সংস্করণে, এরপর তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও আছে। তাসকিনের চোখও এখন সেদিকেই, ‘প্রতিটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচই এখন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সামনে টি-টোয়েন্টির বড় বড় ইভেন্ট আছে। এশিয়া কাপ আছে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আছে। আমরা এই সিরিজটা জয়ের জন্যই খেলব। যদি এখানে ম্যাচ জিতে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারি, সেটা বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে কাজে দেবে।’ 

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অবশ্য কোনো সংস্করণের ক্রিকেটেই বল হাতে মনে রাখার মতো স্মৃতি নেই তাসকিনের। দলটার বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেট তো কখনো খেলেনইনি, দুই ওয়ানডে খেলে উইকেট মাত্র একটি, আর টি-টোয়েন্টিও দুটি খেলে উইকেট পাননি একটিও। ২০১৪ সালে সেন্ট কিটসের টি-টোয়েন্টিটা অবশ্য বৃষ্টির কারণে পুরো হতে না পারায় তিনি বোলিংয়েরই সুযোগ পাননি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সেটাই ছিল তাসকিনের একমাত্র টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ। এখানে একমাত্র ওয়ানডেটিও তিনি খেলেছেন সে বছরই। 

ওয়েস্ট ইন্ডিজে তাসকিনের ভালো করার ক্ষুধাটা তাই এবার একটু বেশিই থাকার কথা। ক্যারিবীয় ‘স্যুভেনির’ হিসেবে মনে রাখার মতো কিছু স্মৃতি নিশ্চয়ই তিনি নিয়ে যেতে চাইবেন দেশে। আর সেটার জন্য তাসকিন এখনই আছের সেরা সময়ে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat