দুই দিনের বৃষ্টিতে সেন্ট লুসিয়া টেস্টটা রূপ নিয়েছিল খন্ডাংশে। তৃতীয় ও চতুর্থ দিনের বেশিরভাগ সময় খেলাই হতে পারেনি। আর সেই টেস্টেই কিনা বাংলাদেশ ১০ উইকেটের হার মেনে নিয়েছে চারদিনও পুরো শেষ না করে! এর আগে অ্যান্টিগার প্রথম টেস্টেও ৭ উইকেটের হারটা এসেছিল একদিন বাকি থাকতেই।
এমন একটা সিরিজের পর অধিনায়ককে কাটা কাটা প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সাকিব আল হাসান সেই সুযোগ দিলে তো! ড্যারেন স্যামি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে কাল ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের দুই সাংবাদিকের কাছে তাঁর পাল্টা প্রশ্ন—বাংলাদেশে টেস্ট ম্যাচ দেখে কয়জন?
এই সিরিজে নতুন করে অধিনায়কত্ব পাওয়ার আগে সাকিব নিজে টেস্টে নিয়মিত ছিল না। দলের আরো কেউ কেউ টেস্ট খেলতে আগ্রহী নয়, এমন একটা গুঞ্জন তো আছেই। সেটিকেই সামনে এনে সাকিবের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, সাদা পোশাকের ক্রিকেটের প্রতি অনীহাও টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ভালো না খেলার একটা কারণ কি না। খেলোয়াড়েরা টেস্টের প্রতি পুরোপুরি মনোযোগী তো?
সাকিব বললেন না যে প্রশ্নের মর্মার্থটা ভুল। বরং সেটি মেনে নিয়েই বললেন, ‘খেলোয়াড়দের এখানে খুব বেশি দোষ দেওয়াটা ঠিক হবে না। শুধু খেলোয়াড়দেরই দোষ দিলে হবে না। আমাদের দেশের সিস্টেমটাই কিন্তু এমন। আপনি কবে দেখছেন বাংলাদেশে ৩০ হাজার দর্শক টেস্ট ম্যাচ দেখছে বা ২৫ হাজার দর্শক মাঠে এসেছে টেস্ট দেখতে?’
বাংলাদেশ দলের টেস্টের ফলাফলটাকে মানুষ যাদের কাতারে বা যাদের অন্তত কাছাকাছি দেখতে চায়, সাকিব সেই সব দেশেরই উদাহরণ টেনে বললেন, ‘ইংল্যান্ডে তো প্রতি ম্যাচে (টেস্ট) এরকম দর্শক থাকে। টেস্টের সংস্কৃতিটাই আমাদের দেশে ছিল না কখনো, এখনো নেই।’
টেস্টে ভালো করতে সবাই মিলেই এই সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক, ‘টেস্ট সংস্কৃতি নেই বলে যে হবেও না, সেটাও কিন্তু নয়। এই জিনিসটা পরিবর্তন করাই আমাদের বড় দায়িত্ব। সবাই মিলে যদি একসঙ্গে পরিকল্পনা করে আগানো যায় তাহলেই হয়তো কিছু সম্ভব হবে। নইলে আসলে খুব বেশি দূর আগানো সম্ভব হবে না। কারণ আমাদের টেস্টের সংস্কৃতিই নেই।’
টেস্টে ভালো করতে সবাই মিলেই এই সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক
টেস্টে ভালো করতে সবাই মিলেই এই সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়কএএফপি
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় ১৬ বছরের অভিজ্ঞতা সাকিবের। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তাঁর মনে হচ্ছে, বাংলাদেশে টেস্ট ক্রিকেটকে খুব বেশি মূল্যায়ন করা হয় না। তবে তাতে খেলোয়াড়দের দায়টাও এড়াননি তিনি, ‘আমরা যে টেস্ট ক্রিকেটকে খুব বেশি মূল্যায়ন করি, তা নয়। হ্যাঁ, হতে পারে আমরা ফলাফল ভালো করিনি, এ কারণে মূল্যায়নও হয়নি। তবে একটার সঙ্গে আরেকটার সম্পর্ক আছে। একটার সঙ্গে আরেকটাকে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাহলেই ভালো কিছু সম্ভব।’
বাংলাদেশ এরপর আবার টেস্ট খেলবে আগামী নভেম্বর–ডিসেম্বরে, ভারতের বিপক্ষে ঘরের মাঠে। মাঝের সময়টাতে টেস্টের জন্য নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে চান অধিনায়ক এবং সে জন্য চান সবার সম্মিলিত সহযোগিতা, ‘এই বিরতির মধ্যে যারা টেস্ট খেলতে আগ্রহী তারা হয়তো যার যার জায়গা থেকে উন্নতি করার চেষ্টা করবে। উন্নতি ছাড়া আর কোনো পথ নেই। আমাদের এমন কোনো সেটআপও নেই যাদের আনলে আমরা টেস্টে ভালো করে ফেলব। যারা আছি বা বাইরে আর যে দুই–চারজন আছে, সবাই মিলে যদি একসঙ্গে পরিকল্পনা করে আগাতে পারি তাহলেই ভালো কিছু সম্ভব হবে। তা না হলে এতদিন ধরে যা হয়ে আসছে তা থেকে খুব বেশি একটা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
এই পরিকল্পনায় সাকিব খেলোয়াড়দের থেকে শুরু করে কোচিং স্টাফ, ক্রিকেট বোর্ড সবাইকেই পাশে চান, ‘আমাদের নিজেদের চিন্তার পরিবর্তনাটা জরুরি। এই জায়গায় কাজ করার আছে। সবাই মিলে পরিকল্পনা করতে হবে। একজনকে ছাড়া আরেকজনকে নিয়ে পরিকল্পনা করে আসলে সফল হওয়া সম্ভব নয়। সবাই মিলে বসে যদি আমরা একটা পরিকল্পনা ধরে আগাই তাহলে অন্তত এক–দেড় বছর পর ধারাবাহিক পারফর্ম করা সম্ভব হবে।’
সেই ভালোটা যে নিয়মিত টেস্ট জেতাই, সেটা অবশ্য বলছেন না সাকিব। তাঁর কাছে ‘ভালো’র অর্থ পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা, যেটা শুরু করতে হবে ঘরের মাঠে টেস্ট না হেরে। ‘আমি বলব না টেস্ট জিততেই হবে। বিদেশে সব দলই আন্ডারডগ থাকে। নিউজিল্যান্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়ন দল। ওরাও যখন বাইরে খেলতে যায়, হেরে যায়। অন্য দেশে গেলে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত সব দলই হারে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে আমরা যেন ঘরের মাঠে না হারি। হয় ড্র করব, অথবা জিতব’—বলেছেন সাকিব।
তাঁর বিশ্বাস, ঘরের মাঠের পারফরম্যান্সে এই উন্নতিটাই টেস্টে বাংলাদেশকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে, ‘তখনও হয়তো আমরা নিয়মিত নাও জিততে পারি। তবে অন্তত প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ক্রিকেটটা খেলব। দেশের সিরিজগুলোতে খুব ভালো পরিকল্পনা করে খেলাটা তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যেন জিতি, না জিতলেও যেন ড্র ছাড়া অন্য কোনো ফল না হয়। হোম সিরিজে যেন আমরা না হারি, এটা নিশ্চিত করা জরুরি। তখন দেশের বাইরে খারাপ খেললেও সেটা অত বেশি চোখে পড়বে না।’
এ জাতীয় আরো খবর..