জাল কার্যাদেশ দেখিয়ে এবি ব্যাংক থেকে ১৭৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় ১৩ আসামিকে গ্রেপ্তারে আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পুলিশ কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ২৬ জুন পরবর্তী তারিখ রেখে এ সময়ের মধ্যে দুদকের চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও বিশেষ শাখার (এসবি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তা জানাতে বলা হয়েছে।
এ মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামির জামিন প্রশ্নে রুল খারিজ করে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তৌফিকুল ইসলাম মামুন।
দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এ মামলায় মোট ১৭ আসামির মধ্যে চার আসামি কারাগারে আছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে আদালতের একটি নির্দেশনা ছিল। সে আদেশটি বাস্তবায়নে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানাতে বলা হয়েছে। '
জাল কার্যাদেশ এবং অবৈধ ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে ১৭৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে এবি ব্যাংকের সাবেক দুই ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মসিউর রহমান চৌধুরী, শামীম আহমেদ চৌধুরীসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে গত ৮ জুন মামলা করে দুদক।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়, এরশাদ ব্রাদার্স করপোরেশনের মালিক মো. এরশাদ আলীকে। এ ছাড়া এবি ব্যাংকের সাবেক এমডি মসিউর রহমান চৌধুরী ও শামীম আহমেদ চৌধুরী, সাবেক ইভিপি ও শাখা ম্যানেজার এ বি এম আবদুস সাত্তার, এভিপি ও রিলেশনশিপ ম্যানেজার আবদুর রহিম, এসভিপি ও সাবেক রিলেশনশিপ ম্যানেজার আনিসুর রহমান, ভিপি শহিদুল ইসলাম, এভিপি মো. রুহুল আমিন, ইভিপি এবং হেড অব সিআরএম ওয়াসিকা আফরোজী, ভিপি এবং সিএমআরের সদস্য মুফতি মুস্তাফিজুর রহমান, সাবেক এসইভিপি এবং হেড অব সিআরএম সালমা আক্তার, এভিপি ও সিআরএম সদস্য এমারত হোসেন ফকির, সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার তৌহিদুল ইসলাম, এসভিপি ও সিআরএমের সদস্য শামীম এ মোরশেদ, ভিপি ও সিআরএমের সদস্য খন্দকার রাশেদ আনোয়ার, এভিপি ও সিআরএমের সদস্য সিরাজুল ইসলাম, সাবেক ভিপি ও ক্রেডিট কমিটির সদস্য মাহফুজ-উল ইসলামকে আসামি করা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে একে অন্যের সহায়তায় জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে জাল কার্যাদেশ প্রস্তুত করে ছয়টি জাল কার্যাদেশের বিপরীতে ১৬৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া এবি ব্যাংক কাকরাইল শাখার কর্মকর্তারা প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন ছাড়া সাতটি অবৈধ ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে আরো ১০ কোটি টাকা ঋণ দিয়ে তা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। সব মিলিয়ে আত্মসাৎ করা টাকার পরিমাণ ১৭৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
আসামিদের মধ্যে এবি ব্যাংকের এভিপি ও রিলেশনশিপ ম্যানেজার আবদুর রহিম ও ভিপি শহিদুল ইসলাম গত বছর ২১ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করেন। আদালত তাদের জামিন না দিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।
পরে গত বছর ৩ অক্টোবর তারা ঢাকার জ্যেষ্ঠ মহানগর বিশেষ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। কিন্তু বিচারক তাদের জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে হাইকোর্টে জামিন চান আবদুর রহিম ও শহিদুল ইসলাম। গত বছর ৭ ডিসেম্বর সে আবেদনটির শুনানির সময় বাকি ১৫ আসামির প্রসঙ্গ এলে দুদকের আইনজীবী আদালতকে জানান, তারা পলাতক। এরপর আদালত ১৫ আসামির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন।
এর মধ্যে মামলার প্রধান আসামি এরশাদ ব্রাদার্স করপোরেশনের মালিক মো. এরশাদ আলী জামিন নিতে আসলে গত ১৭ মে হাইকোর্ট তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। ওই দিন নতুন জামিন আবেদনে আবদুর রহিম ও শহিদুল ইসলামের জামিন প্রশ্নে দুই সপ্তাহের রুল দেন আদালত। মঙ্গলবার সে রুলটি খারিজ করা হয়ছে বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। এ ছাড়া ব্যাংকটির কাকরাইল শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক এ বি এম আব্দুস সাত্তারও গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
এ জাতীয় আরো খবর..