×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৬-০৮
  • ৭৬ বার পঠিত
ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরো পাঁচ পয়সা কমাল বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল মঙ্গলবার প্রতি ডলারের আন্ত ব্যাংক দর ঠিক করা হয়েছে ৯২ টাকা, যা আগের দিন পর্যন্ত ছিল ৯১ টাকা ৯৫ পয়সা। গত রবিবার এক দিনে রেকর্ড এক টাকা ৬০ পয়সা অবমূল্যায়ন হয় টাকার। পরের দিন গত সোমবার কমানো হয় ৪৫ পয়সা।


ফলে দুই দিনে টাকার মান কমে দুই টাকা পাঁচ পয়সা। কাল কমল আরো পাঁচ পয়সা।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোর জন্য দেওয়া একক রেট তুলে নেওয়ার পর থেকে চার কর্মদিবসেই চার দফা টাকার অবমূল্যায়ন হলো। ৯২ টাকা দরে গতকাল ১২ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তবে ব্যাংকগুলো আমদানিকারকদের কাছ থেকে প্রতি ডলারের জন্য ৯৫ টাকার বেশি দাম নিচ্ছে। আর প্রবাসী আয় আনছে ৯৩ থেকে ৯৪ টাকা দরে। অন্যদিকে কার্ব মার্কেটে ডলার বিক্রি হচ্ছে ৯৭ টাকার ওপরে।

কার্ব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, আগে বিদেশ থেকে প্রবাসীরা যেসব নগদ ডলার নিয়ে আসতেন সেগুলোর একটি অংশ কার্ব মার্কেটে বিক্রি করতেন। সেগুলোই ডলার পাওয়ার তাঁদের প্রধান উত্স্য। কিন্তু করোনার পর ওই উৎস থেকে ডলার পাওয়া কমে গেছে। এ ছাড়া সম্প্রতি ব্যাংকে ডলারের সংকট হওয়ায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কার্ব মার্কেটে নজরদারি বাড়িয়েছে। ফলে অনেকেই কার্ব মার্কেটে ডলার বিক্রি করতে আসে না। অনেকে বেশি দামের আশায় মানিচেঞ্জারগুলোতে ডলার বিক্রি করছে।

জানতে চাইলে রাজধানীর গুলশানের আব্দুল্লাহ মানি এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মো. ইকবাল হোসেন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা মঙ্গলবার ৯৭ টাকা ১০ পয়সা করে ডলার বিক্রি করেছি। আগের দিন দাম ছিল ৯৭ টাকার মধ্যে। ’

চলতি বছর মুদ্রা বাজারের অস্থিরতা সামাল দিতেই ডলারের বিপরীতে টাকার মান দফায় দফায় কমাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছর প্রতি ডলারের দর বেড়েছে সাত টাকা ২০ পয়সা বা ৮.৪৯ শতাংশ।

উন্মুক্ত বাজার পদ্ধতিতে ডলারের বিনিময় হার বাজার অনুযায়ী নির্ধারিত হচ্ছে। ব্যাংকগুলো যেকোনো দরে ডলার বিক্রি করতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ডলারের দাম বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করছে না। ব্যাংকগুলো যে দামে লেনদেন করে, তার মধ্যে একটি দরকে বিবেচনায় নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ’

তিনি বলেন, বাজারের চাহিদা ও সরবরাহে ভারসাম্য রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। গত সোমবার ব্যাংকগুলোকে সাপোর্ট দিতে ৯১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে এক কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

টাকার মান আরেক দফা অবমূল্যায়নের কারণে আমদানি ব্যয় আরো বাড়বে, আর লাভবান হবেন রপ্তানিকারকরা। সাধারণত রপ্তানিকারকদের সুবিধা দিতেই স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ফলে আমদানি পণ্যের বাড়তি দাম দিতে গিয়ে চাপ পড়ছে রিজার্ভে। যদিও এরই মধ্যে বিলাসী ১৩৫ পণ্যের ওপর আমদানিতে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করেছে সরকার। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের লাগাম টানতে শুল্ক বৃদ্ধির পাশাপাশি কিছু পণ্যের আমদানি বন্ধ করা দরকার বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ  বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করে দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে হবে। আমদানি যৌক্তিকীকরণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা এখন করছে, এটাও দেরি হয়ে গেছে। ’ েবর্তমান পরিস্থিতিতে আর বেশি অবমূল্যায়নের দিকে যাওয়া ঠিক হবে না বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ এ বি এম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, আমদানির প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি। অন্যদিকে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ কমে গেছে। যদিও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে, কিন্তু আমদানির প্রবৃদ্ধি আরো বেশি। সেখানেও চাপ সৃষ্টি। স্বভাবতই ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, তাই দাম বাড়ছে। এতে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, যা আরো বেড়ে যেতে পারে। এতে দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষের অবস্থা আরো খারাপ হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat